×

জাতীয়

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০৪:৩২ পিএম

https://www.youtube.com/watch?v=15aIFeAa4Lo

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত দেশীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাঙালি জাতির পাপ মোচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

বঙ্গবন্ধুর হত্যায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এখনো হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কয়েকজন ব্যক্তির বিচার হয়েছে মাত্র। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের এখনো বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

সোমবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজার সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল্লাহ শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক।

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, মোস্তাক আহমেদ, রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, সাংবাদিক আসিফ সিরাজ, ডেইজি মওদুদ প্রমুখ।

চট্টগ্রামের সন্তান জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত সোমবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পৌঁছালে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে নেতারা তাকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।

আলোচনা সভায় শ্যামল দত্ত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। যতদিন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রাদায়িক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গঠন করা যাবে না ততদিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনা প্রতিষ্ঠিত হবে না।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপর পাল্টে গেল ‘জয় বাংলা’। হয়ে গেল বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ বেতার হয়ে গেল রেডিও বাংলাদেশ। একে একে মুক্তিযুদ্ধের সকল মূল চেতনাগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র একটি পটপরিবর্তন নয়, এই হত্যকাণ্ডে নেপথ্যে ছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানো। আমরা কিন্তু এখনো এই চক্র থেকে বের হতে পারিনি। বাংলাদেশ কিন্তু এখনো মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় ফেরত যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে- একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। সেদিক থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে সরে গেছি। আমাদের এই সংবিধান কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সংবিধান না। মুক্তিযুদ্ধের সংবিধানে তো রাষ্ট্র ধর্ম থাকার কথা না। রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কি করে হয়? বঙ্গবন্ধু কিন্তু এই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেননি। আজ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, স্বাধীন জাতিসত্ত্বা। কিন্তু আমাদের যেতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনায়। বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

[caption id="attachment_456189" align="aligncenter" width="1600"] জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তকে সোমবার সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নেতারা। ছবি: চট্টগ্রাম অফিস[/caption]

শ্যামল দত্ত বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে তিনটি পক্ষ জড়িত। শুধু কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী বা দুষ্কৃতিকারী সেনা কর্মকর্তা এই হত্যাকাণ্ড করেছে ভাবলে ভুল হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের একটি দেশীয় চক্রান্তকারী রয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত একটি পক্ষ আর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের রায়ের পর্যবেক্ষণেও বলা হয়েছে, শুধুমাত্র হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তির বিচার হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচজনই পলাতক। তারা পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় পালিয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দুটি দিক আছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা তাদের ছিল না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে নিছক পটপরিবর্তনের পরিকল্পনা তাদের ছিল না। হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের কোনো চিহ্ন পর্যন্ত না রাখা। আরেকটি দিক হচ্ছে- বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের দিক নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষণা করেছেন বিদেশি দুই সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ ও এনথনি মিসকানিস। তারা প্রত্যক্ষ গবেষণা করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল। লিখিত প্রমাণ ও দলিলসহ তারা বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জিয়াউর রহমান আগে থেকে অবগত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে খন্দকার মোশতাক বেশ কয়েকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বৈঠক করেছেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের রহস্য উন্মোচনে কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে শ্যামল দত্ত বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের সার্বিক দিক উন্মোচনের জন্য একটি কমিশন গঠনের উদ্যোগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই কমিশনের কাজ হবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে দেশীয় ষড়যন্ত্র কারা এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী কারা, তা রহস্য উদঘাটন করা। বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন এবং তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বাঙালি জাতির পাপ, কলঙ্ক কখনোই মোচন হবে না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তির বিচার হলেই এই পাপ মোচন হবে না। বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ হবে না।

চট্টগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় এলাকা চট্টগ্রাম। তিনি মনে করতেন চট্টগ্রাম জাগলে সারাদেশ জাগবে। এই কারণে তিনি বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, যেটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- ৬ দফার মূল মর্মবানীই ছিল একটি স্বাধীন জাতিসত্ত্বা। সেই ৬ দফা ঘোষণার প্রথম জনসভাটি করা হয় চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে। তিনি জানতেন এই চট্টগ্রাম দিয়েই স্বাধীনতা সংগ্রামের যাত্রা শুরু হবে। এই কারণে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ প্রারম্ভে ২৫ মার্চ কালোরাত্রির পর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণাটি এই চট্টগ্রাম থেকেই এসেছে। এই চট্টগ্রাম বীর প্রসবিনী চট্টগ্রাম। মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা, কল্পনা দত্তের চট্টগ্রাম। স্বাধীনতার বীজ তো বপন হয়েছিল সেই সময়ে এই চট্টগ্রাম থেকেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App