×

জাতীয়

নিত্যপণ্যে সিন্ডিকেটের ছোবল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৪ এএম

নিত্যপণ্যে সিন্ডিকেটের ছোবল

ফাইল ছবি

বাজারে পেঁয়াজের দাম আবার চড়া। খুচরা বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। সপ্তাহে দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। কোনো কারণ ছাড়াই মাত্র চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের এ দাম হয়েছে। দেশে চালের উৎপাদন ভালো হওয়া সত্ত্বেও বাড়ছে চালের দাম। কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই, তারপরও দাম বাড়ছে ডিমের। বাজারে এখন সবচেয়ে আলোচিত পণ্য ডিম। ফার্মের মুরগির ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালি। অর্থাৎ এক পিস ডিমের দাম ১৫ টাকা। গত সপ্তাহেও এক পিস ডিম বিক্রি হয়েছে ১১ থেকে ১২ টাকায়।

শুধু পেঁয়াজ, ডিম বা চালের দামই বেড়েছে তা নয়। হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামই বেড়েছে। ভোজ্যতেল, চিনি-মুরগি ও সবজির দামও এখন চড়া। কাঁচামরিচের কেজিও দুইশ টাকা। নিত্যপণ্যের চড়া দামের পেছনে বিক্রেতাদের অজুহাতের কমতি নেই। অপর দিকে অসহায় ক্রেতারা।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি অনেকটা ওপেন-সিক্রেট। সিন্ডিকেট বলতে যাদের বোঝানো হয়- তারা একদিকে যেমন বড় আমদানিকারক; আবার নানাভাবে ব্যাংকগুলোর মালিকানা বা ব্যবস্থাপনার কর্তৃত্বেও আছেন তারাই। কারসাজি করে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর আছে নেপথ্যে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নিত্যপণ্য আমদানিকারক আটটি বড় প্রতিষ্ঠানের এই সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। রাজধানী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত সারাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে চক্রটি। তাদের কাছে জিম্মি পুরো দেশ। তারা বেআইনিভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট থেকে প্রতি বছর হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই সিন্ডিকেট লালনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একশ্রেণির শীর্ষ কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে জানা গেছে, নিত্যপণ্য আমদানিকারক আটটি বড় প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সিন্ডিকেটে জড়িতদের নাম, সিন্ডিকেট লালন-পালনে জড়িত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নাম সরকারের শীর্ষ মহলকে অবহিত করা হয়েছে। কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে সরানোর সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সরানো হয়নি। মন্ত্রণালয়ের অসাধু ওইসব কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেটে জড়িত আট কোম্পানি বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গেও জড়িত। ইতোমধ্যে দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে তারা।

বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে একটি চক্র। তারা প্রতি বছর ভোক্তাকে জিম্মি করে হাজার কোটি টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ওই চক্রের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এভাবেই নির্বিঘেœ দাপুটে উত্থান ঘটছে বাজার সিন্ডিকেটের।

তাদের মতে, এতদিন বাজারে সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ানো উৎসবকেন্দ্রীক হলেও বর্তমানে সুযোগ পেলেই সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য করে আবার আমদানির নাম করে বাজার অস্বাভাবিক করছে। এভাবেই ব্যবসার নামে লুটপাট করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন, যারা সিন্ডিকেট করছে তাদের ধরলে বাজার আরো অস্থির হতে পারে- সেটা তো নির্ভর করছে, সরকার কোনো কৌশলে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে। তিনি বলেন, মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানো বন্ধ করা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্যে এটা পরিষ্কার, যারা সিন্ডিকেট করেন, তাদের সরকার চেনে ও জানে। কাজেই তাদের ব্যবসাবাণিজ্যের মধ্যে সরকারি যেসব নীতিসহায়তা আছে, সেগুলো কমিয়ে দিতে পারেন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সরকার বলতে পারে- তোমরা যদি সিন্ডিকেট করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াও, তাহলে এসব সহায়তা কমিয়ে দেয়া হবে। যেমন সস্তা ঋণ, ভর্তুকি, প্রণোদনা, কর অব্যাহতিসহ সরকারি সেসব সুবিধা তারা পায়, সেগুলোয় সরকার হাত দিতে পারে। তাদের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করে দিতে পারে। এতে কথিত সিন্ডিকেটের লোকজন সামাজিকভাবে হেয় হবে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা বলছে, দেশে প্রায় সব পণ্যের মজুত ভালো। আমদানিও ভালো। তবুও দফায় দফায় দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তেলের দাম বাড়ার পর ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি সুযোগ নিয়েছেন। গত শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক ছায়া সংসদের অনুষ্ঠান শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশের বাজারে তেল চিনি প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। দেশের বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল আমদানি করে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের যে দাম ঠিক করে দেয়া হয় সেটি তারা মানেন না। মন্ত্রী বলেন, দেশের বাজারে উৎপাদন হয় মাত্র ১০ শতাংশ ভোজ্যতেল। বাকি ৯০ শতাংশ ভোজ্যতেল সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। তবে, যে পণ্যই আমদানি করা হোক না কেন; ব্যবসায়ীদের মুনাফা রেখেই ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। তারপরও দেখা যায়, অতি মুনাফার লোভে কিছু ব্যবসায়ী নির্দেশ অমান্য করে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে অসৎ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, তাদের আইন দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আবার শুধু আইন প্রয়োগ করে দমন করা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

স¤প্রতি শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, আমি অনেককে দেখেছি বাজার করতে গিয়ে কাঁদছেন। কারণ বাজারের যে অবস্থা তার পকেটে সে টাকা নেই। এর একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি ও বাজার দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের কোনো কিছুর অভাব নেই। আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারপরও সিন্ডিকেটের কারণে দেশের এই অবস্থা বিরাজ করছে।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, বিশ্ববাজারের কারণে যদি কোনো পণ্যের দাম বাড়ে ১০ শতাংশ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে সে পণ্যের দাম বাড়ে ৮০-৯০ শতাংশ। প্রতিটি পণ্যেই রয়েছে বাজার সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেশের মানুষের পকেট ফাঁকা করছে, অথচ কোনো প্রতিকার মিলছে না। এ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে তারাই আবার একেক সময় এমন এমন কথা বলেন, যাতে ব্যবসায়ীদের সাহস আরো বেড়ে যাচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, বাজারের এ সিন্ডিকেট ভাঙার এখতিয়ার ভোক্তা অধিদপ্তরের নেই, ভোক্তা আইনেও এটা কাভার করে না। সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সরকার আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়েছে। সেটি হলো বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। জানি না তারা কী করছে এ ব্যাপারে। তবে ভোক্তা অধিদপ্তর তার সামর্থ্য অনুযায়ী বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।

সূত্রমতে, চলতি বছরের মার্চে হঠাৎ করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ব্রয়লার মুরগির বাজার। ওই সময়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি থেকে হঠাৎ প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় ওঠে। ব্রয়লার মুরগির সিন্ডিকেট রাতে দাম বেধে দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে এসএমএস করে দেয়। অতঃপর বিক্রেতারা সেই দামে বিক্রি করেন। আর মুরগির দাম বেধে দেয়া সিন্ডিকেট হচ্ছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। এর অগে ডিম নিয়ে কারসাজি করে গত বছরের শেষ দিকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট। এমনকি একদিনে এক ডজন ডিমের দাম ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। ওই সময়ে সংসদে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন, সিন্ডিকেট করে ডিমের নামে ৯৩২ টাকা লুট করা হয়েছে।

এর কিছুদিন আগে দেশে তেল নিয়েও একটি গ্রুপ কারসাজি করে কয়েক হাজার কোটি হাতিয়ে নেয়। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ানোর কথা বলে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। বছর দেড়েক আগেও এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১১০-১১৫ টাকা। অথচ সেই সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ২০৫ টাকাতেও ঠেকেছিল। যদিও বর্তমানে লিটারে ২০ টাকা কমিয়ে ১৮৯ থেকে ১৭৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। এ সিন্ডিকেটেও নেতৃত্ব দিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। ভোজ্যতেল নিয়ে এখনো চলছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দামে অস্থিরতার পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজিকে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটি তথ্য পেয়েছে আমদানিকারক সিন্ডিকেটের কাছে পুরো বাজার জিম্মি। ভোজ্যতেলের মতোই চিনির বাজার এখনো টালমাটাল। ভারতে যেখানে এক কেজি চিনির দাম ৩৮-৪০ টাকা, সেখানে বাংলাদেশে এক কেজি চিনি কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা। মাঝে তো এক কেজি চিনির দাম ১৫০ টাকাও হয়েছিল। এ পণ্যটিরও দাম বাড়ানো হয়েছে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ানোর অজুহাতে।

এর আগে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি হাঁকায়। অথচ ওই সময়ে কোনোভাবেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৪৫ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ ছিল না। এমন মন্তব্যই করেছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। কৃষিমন্ত্রীর এ মন্তব্যের কয়েক দিনের মধ্যেই গত ৪ জুন কারসাজি করে হঠাৎ করেই মাত্র একদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ২৫ টাকা বেড়ে সেঞ্চুরি হাঁকায় পেঁয়াজের দাম। ওই একদিনেই সিন্ডিকেট করে গ্রাহকের পকেট থেকে ১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেন ব্যবসায়ীরা।

শুধু ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজই নয়; বাজারে বিদ্যমান অসৎ সিন্ডিকেটের কারণে অধিকাংশ পণ্যেই অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাজার সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কোনোভাবেই বরং দিন দিন ভোগ্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ানোর ধোঁয়া তুলে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে পণ্যের দাম। কখনো ভোজ্যতেল, কখনো চিনি বা মুরগি-ডিম, কখনো পেঁয়াজের বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে অস্বাভাবিক। এভাবে ভোক্তার পকেট কেটে ব্যবসায়ীরা লুটে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App