×

জাতীয়

দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৫৫ পিএম

দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে

জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘সড়ক দুর্ঘটনায় চালকের দায় কতটুকু?’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা। ছবি: ভোরের কাগজ

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালকদের দায়ী করলে হবে না। মালিক, শ্রমিক, পথচারী ও সরকারসহ সব স্টেকহোল্ডারকেই দায় নিতে হবে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটলেই চালকদের দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বের হতে না পারলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ কখনোই বের হবে না। প্রকৃত কারণ বের না হলে এতোবড় সমস্যার কোনো টেকসই প্রতিকার পাওয়া যাবে না।

রবিবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘সড়ক দুর্ঘটনায় চালকের দায় কতটুকু?’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এই বৈঠকের আয়োজন করে। ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সব সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে দোষ চালকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। বিচারে চালকের সাজা হয়। এই একতরফা দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বেড়িয়ে আসতে হবে। এই বিষয়টি রাষ্ট্রীয় জীবনে একটি নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ কখনোই বেড়িয়ে আসবে না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার টেকসই প্রতিকার পাওয়া যাবে না। বর্তমান সময়ে দেশের অর্থনৈতিক এবং কাঠামোগত উন্নয়নের প্রেক্ষিতে এই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। মনোজাগতিক পরিবর্তন প্রয়োজন। মোটিভেশনাল কাজ বেশি করতে হবে। শুধু চালকদের দোষারোপ করলে হবে না। শর্টকাট রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব না।

ফেডারেশনের সভাপতি শাহজাহান খান বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা দেশের মানুষকে সেবা দিয়েও প্রকৃত সম্মান পায় না। সেবা দেয়ার সময় দুই একটি দুর্ঘটনা ঘটে। শুধু চালককে দোষ দিলে হবে না। দুর্ঘটনার সঙ্গে চালক, মালিক, বিআরটিএ, রোডস এন্ড হাইওয়ের ইঞ্জিনিয়ার ও পথচারীরাও দায়ী। সুন্দর তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দোষীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই দুর্ঘটনা কমবে।

তিনি বলেন, দক্ষ চালক ও সবার মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলেই এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার টেকসই সমাধান পাওয়া সম্ভব। পরিবহন সেক্টর সুশৃঙ্খল এবং নিরাপদ সড়ক করতে শ্রমিক-মালিক বিআরটিএসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয় প্রয়োজন। পুলিশও দায় এড়াতে পারে না। তাদের ভুল সিগন্যালও দুর্ঘটনায় প্রভাব রাখে। সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হবে। পাঠ্যক্রমে ট্রাফিক রুল নিয়ে আসতে হবে। গাড়ি চালকের জন্য ভর্তুকি দিতে হবে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বাস্তবতা আর আবেগ মিলিয়েই আমরা কাজ করছি। আগে দাবি আদায়ের জন্য সড়ক পরিবহনে কথায় কথায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যেত, কখন তা হয় না। মালিক-শ্রমিকরা যৌক্তিকভাবে সব দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আলোচনার সময় সমস্যাগুলো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন করা খুবই চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করতে হবে। এখন দুর্ঘটনা তদন্তে জোর দেয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনা কমাতে সব স্টেকহোল্ডাদের সচেতন হতে হবে, শুধু চালকের ওপর দায় চাপালে সমস্যার সমাধান হবে না। বিআরটিএ এর কার্যক্রমের ৮০ শতাংশ এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। তারপরেও দালাল উচ্ছেদ করতে পারছি না। জনবল সংকট রয়েছে। ৮/১০ জন ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে সারাদেশের সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব না।

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা সব দায় চালকে দেয়া যায় না, তবে দুর্ঘটনার বেশিরভাগ দায় চালককেই নিতে হবে। চালকদের মাঝে সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে। অনেক মানুষের দায়িত্ব একজন চালকের কাঁধে থাকে। তাই চালকদের সংবেদনশীল হতে হবে।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, আইটএফ বাংলাদেশ কো-অডিনেটিং কমিটির সদস্য সচিব চৌধুরী আশিকুল আলম, রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৗস খান, ওয়ার্কার্স জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, সিআইপিআরডি পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App