×

জাতীয়

ডিমের বাজারে সিন্ডিকেটবাজি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৯ এএম

ডিমের বাজারে সিন্ডিকেটবাজি
  • রাজধানীতে অভিযান
দুই সপ্তাহ আগে মুরগির একটি ডিমের দাম ছিল ১০ টাকা ৫০ পয়সা। এখন তা ১৫ টাকা। দাম বাড়ার কেনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা ব্যবসায়ীদের কাছে নেই। এরপরও দাম বাড়ছে। ১৫ দিন আগের দামের সঙ্গে তুলনা করলে প্রতিদিন সারাদেশের ক্রেতাদের কাছ থেকে সব মিলিয়ে বাড়তি নেয়া হচ্ছে ১৭ থেকে সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। ডিমের দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ দাম বাড়ায় অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঢাকাসহ সারাদেশে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীতে গতকাল শনিবার ৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। ডিমের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজিকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ভোক্তা অধিদপ্তরের ৩টি দল গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর কাপ্তান বাজারসহ মোহাম্মদপুর বাজারে অভিযান চালায়। ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম কাপ্তান বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে বিভিন্ন ফার্ম থেকে ডিম কেনা হলেও ক্যাশ মেমোতে ডিমের দর এবং মোট টাকার কথা উল্লেখ না থাকা, ডিম বিক্রিতে পাকা ক্যাশ মেমো না থাকা, ডিমের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা ইত্যাদি অপরাধে মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জহিরুল ইসলাম ট্রেডার্স এবং মেসার্স মুস্তাফিজ ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার এলাকায় অভিযানে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান ২টি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) ডিমের এ দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য করপোরেট সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি জানান, দেশে প্রতিদিন সব ধরনের ডিমের মোট চাহিদা ৪ কোটি ৫০ লাখ পিস। আর উৎপাদন আছে ৫ কোটির মতো। জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের লোকজন ডিমের দাম ঠিক করে দেয়। আর সেই দামেই সারাদেশে ডিম বিক্রি হয়। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তারা তাদের নির্দিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে সকাল ১০টার মধ্যে মোবাইল ফোনের এসএমসএস, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারাদেশে ডিমের দাম জানিয়ে দেন। সেই দামেই বিক্রি হয়। এরসঙ্গে উৎপাদন বা চাহিদার তেমন সম্পর্ক থাকে না। সুমন হওলাদার অভিযোগ করেন, কাজী ফার্মস ও প্যারাগন গ্রুপ এখন ডিমের বাজারে মূল খেলোয়াড়। দেশে পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে ৩টি সমিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে। তারাই এগুলো গঠন করেছেন বাজার তাদের দখলে রাখার জন্য। ডিমের কারসাজির প্রমাণ গত বছর ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানেও উঠে আসে। এছাড়া গত আগস্টে কাজী ফার্মস, প্যারাগন, সিপি, ডায়মন্ড এগ, পিপলস ফিডসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে প্রতিযোগিতা কমিশন। কমিশন ওই মামলার শুনানিতে প্রতিদিন সকালে কাজী ফার্মস যেভাবে ডিমের দাম ঠিক করে দেয় তাতে বিস্ময় প্রকাশ করে। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা গত বছরের আগস্টে ডিমের বাজার অস্থির হওয়ার পর পুরো বিষয়টি তদন্ত করেছি। আমরা দেখেছি বাজারে সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা অভিযান চালিয়ে মামলা করেছি, জরিমানা করেছি। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিযোগিতা কমিশন কাজী ফার্মসহ ৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। কিন্তু তারপরও আবার সিন্ডিকেট সক্রিয়। সফিকুজ্জামান আরো বলেন, আমরা আবার অভিযান শুরু করেছি। তবে সমস্যা হচ্ছে, একটি ডিমের উৎপাদন খরচ কত তা তো আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানা নেই। এটা বলতে পারবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তারা যদি আমাদের জানাতো- একটি ডিমের উৎপাদন খরচ কত, তাহলে আমরা বাজারে কত বিক্রি হচ্ছে তা দেখে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে কারওয়ান বাজারের অভিযান চালিয়ে এক ব্যবসায়ীকে ২০ হজার টাকা জরিমানা করেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্যান্য ডিমের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, এক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটা বড় দায়িত্ব আছে। তারা ডিম, মুরগির উৎপাদন খরচ কত সে ব্যাপারে যদি তথ্য প্রকাশ করে, তাহলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যেত। আর পোল্ট্রি ফিডের দাম কমিয়েও ডিম ও মুরগির দাম কমানো সম্ভব। জানা গেছে, এ নিয়ে আজ রবিবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App