×

জাতীয়

বিএমইটি সেবা মিলে ঘরে বসেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৩৭ পিএম

বিএমইটি সেবা মিলে ঘরে বসেই

প্রতিদিন ৬ হাজার বহির্গমন ছাড়পত্র। ছবি: ভোরের কাগজ

বিদেশগামী কর্মীরা ঘরে বসে অনলাইনেই পাচ্ছেন বহির্গমন ছাড়পত্র বা ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স। গত জুলাই মাস থেকে অনলাইনে বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান শুরু করেছে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স প্রদানকারী সংস্থা (বিএমইটি)। তাদের এই উদ্যোগে একদিকে যেমন বিদেশ গমনেচ্ছুদের হয়রানি কমেছে তেমনি কমেছে অর্থের অপচয়। এর ফলে বছরে সাশ্রয় হবে শতকোটিরও বেশি টাকা। বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম শনিবার বলেছেন, ঘরে বসেই বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদানের এই উদ্যোগটি হলো স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। আগে বিএমইটিতে প্রতিদিন বিকালে যেখানে দুই হাজার মানুষের সমাগম হতো এখন সেখানে দুই’শ মানুষও আসছেন না। কারণ ঘরে বসেই ফাইল আপলোড করছে, আর ঘরে বসেই স্মার্টকার্ডটি ডাউনলোড করছে, এর চাইতে ভালো কিছু হতে পারেনা।

তিনি বলেন, শুধু মাত্র স্মার্ট কার্ডকে যদি আমরা ডাউনলোড উপযোগী করি তাহলে ১২ লাখ কার্ড বেঁচে যায় এবং তার প্রিন্টিং খরচও বাঁচে। এর সাথে যে শ্রম জড়িত, সেটা বেঁচে যায়। আমরা ১০০ টাকা করেও যদি কার্ডের মূল্য ধরি তাহলে সরকারের ১২ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। আর একটা কর্মীকে এই কার্ডটা পাওয়ার জন্য এজেন্সি অফিসে ভিজিট, বিএমইটিতে ভিজিট বা দালালের সাথে সাক্ষাত করার একটা বড় বড় প্রক্রিয়া ফেস করতে হতো। এটা ফেস করতে যদি ৫’শ টাকা করেও খরচ হয়, তাহলে খরচ হয় আরও ৬০ কোটি টাকা। সে হিসাবে একেবারে জেনুইন খরচ অন্তত ১০০ কোটি টাকা; এরফলে সেই অর্থ যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি বাঁচবে সময়ের অপচয়ও।

বিএমইটির বহির্গমন শাখার পরিচালক আব্দুল হাই জানান, গত জুলাই মাসে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পেয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ জন। যা রেকর্ড সংখ্যক।

তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা শ্লোগান আছে- ‘ঢাকা আসার দরকার নাই, ঘরে বসেই ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পাই’, ভিসা যার ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স তার, অর্থাৎ আপনি যদি ভিসা পেয়ে যান বা আপনার বৈধ কাগজপত্র থাকলে বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় বসে মোবাইলেই আপনি ডিজিটালি অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। জুলাই মাসে আমরা রেকর্ড সংখ্যক কর্মী ১ লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ জন বিদেশের যাওয়ার জন্য ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স দিতে পারছি।

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আগে যখন বহির্গমন হতো তখন একজন কর্মী জানতে পারতো না যে তার বহির্গমন ছাড়পত্রের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে কিনা। আর এখন এটা ঘরে বসেই একজন কর্মী তার প্রত্যেক কাগজের আপডেট পাবেন। বিদেশে জব ভিসা পাওয়ার পর একজন বিদেশগামী কর্মীর আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম শেষ হলে বিদেশ যাওয়ার উপযোগী হিসেবে তাকে সংগ্রহ করতে হয় ইমিগ্রেশন ছাড়পত্র বা বিএমইটি স্মার্ট কার্ড। আর এই কার্ড বা বহিগর্মন ছাড়পত্র সরবরাহ করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষাণ ব্যুরো।

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ২০১০ সাল থেকে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ডের ব্যবহার শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যা সংগ্রহ করতে বিদেশ গমনেচ্ছুদের দিনের পর দিন ঘুরতে হতো দালাল বা এজেন্সির দ্বারে দ্বারে। আর প্রতিদিন এসে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হতো বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র বিভাগে। সময়মতো ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড না পেয়ে ফ্লাইট ক্যানসেলের ঘটনাও ছিলো অহরহ।

এর ফলে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সময় যেমন অপচয় হতো তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হতেন অর্থনৈতিকভাবেও। একইসাথে এসব কার্ড আমদানি থেকে শুরু বিদেশগার্মী কর্মীর নামে প্রিন্ট করা পর্যন্ত বছরে খরচ হতো অন্তত ২০ কোটি টাকা। এছাড়াও বিএমইটির এই কার্ড পেতে সময়ের অপচয় থেকে শুরু করে নানা ভোগান্তিতে পড়তেন বিদেশগামীরা। যার মাধ্যমে ক্ষতি হতো আরো প্রায় ৬০ কোটিরও বেশি টাকা।

এই পদ্ধতিটার ডিজিটাইলাইজেশনের ফলে এখন থেকে সাশ্রয় হবে বছরে প্রায় শত কোটিরও বেশি টাকা। আর হয়রানি এবং ভোগান্তিও নেমে আসবে একেবারে শূনোর কোটায়। বাঁচবে সময়ের অপচয়ও।

গত ২৪ জুলাই থেকে বদলে গেছে এই মেনুয়েল পদ্ধতির ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ডের ব্যবহার। এখন ঘরে বসেই ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশগামীরা পাচ্ছেন বিএমইটির এই গুরুত্বপূর্ণ কার্ডটি। এ জন্য বিএমইটিতে না এসে বাংলাদেশের যেকোন জায়গায় বসে অনলাইনে আবেদন করা যাবে বিএমইটি ক্লিয়ারেন্সের জন্য এবং ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পর বিএমইটিতে না এসে অনলাইনেই ডাউনলোড করা যাবে যেকোন স্থানে বসেই। এমন স্মার্ট পদ্ধতি প্রবর্তনের সুফল পাচ্ছেন বিদেশগামীরা।

এতে বিএমইটি এলাকায় দালালদের আনাগোনা কমেছে। সেইসাথে ওয়ান স্টপ সিস্টেমটাও ডিজিটাল হওয়ায় সেবাগ্রহীতারা ভোগান্তি ছাড়াই ঘরে বসেই তাদের সার্ভিস পাচ্ছেন।

এদিকে রিক্রুটিং এজেন্সীর লাইসেন্স ভাড়া দেয়া ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে বিএমইটিএ। লাইসেন্স না দেখিয়ে বিএমইটি অফিসে কেউ ঢুকতে পারবেন না। আর প্রতারণার অভিযোগ উঠলে তা নিরসনে রিক্রুটিং এজেন্সী কর্তৃপক্ষকে যেতে হবে ভুক্তভোগীর এলাকায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App