×

জাতীয়

হত্যার কুশীলবদের দালিলিক প্রমাণ থাকা জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫৮ এএম

হত্যার কুশীলবদের দালিলিক প্রমাণ থাকা জরুরি

এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, যিনি বেশ কয়েকটি মামলার জন্য সারাদেশে আলোচিত হয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং গণহত্যাবিষয়ক গবেষক শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনীর সভাপতি। ভোরের কাগজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, এর পেছনে ষড়যন্ত্র, তদন্ত কমিশন গঠন ও শ্বেতপত্র প্রকাশ নিয়ে কথা বলেন তিনি।

এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, প্রকাশ্যে যাদের দেখি, সেই খুনিদের বিচার হয়েছে; কিন্তু এই হত্যা ও যড়যন্ত্রের নেপথ্যের কুশীলবদের বিচার আজো হয়নি। এমনকি প্রামাণিক সত্য দিয়ে তাদের দায়ও নিরূপণ করা হয়নি। তিনি বলেন, আদালত যাদের দণ্ড দিয়েছে, তারাই শুধু জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। তাদের কারা পরিচালিত করেছে? দেশি-বিদেশি শক্তি কারা ছিল? সব তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন প্রয়োজন।

মানিক বলেন, ভারতে বহু বছর পালিয়ে থাকার পর ধরা পড়ে অবশেষে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম ঘাতক ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদকে। ফাঁসিতে ঝোলার কিছু আগে মাজেদ একাধিকবার বলেছিল, ১৫ আগস্ট পুরোদিন বঙ্গভবন দাবড়িয়ে বেড়িয়েছিল জিয়াউর রহমান এবং সে-ই ছিল সেদিনের সব কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক। মাজেদ আরো বলেছিল, ১৫ আগস্টের সব অঘটনের হুকুমদাতা ছিল জিয়াউর রহমান।

এই গণহত্যাবিষয়ক গবেষক বলেন, বিভিন্ন সময় খুনিদের বয়ান, বিভিন্ন ডকুমেন্টস অনুযায়ী, নির্মম এই হত্যাকাণ্ডে খুনি জিয়া, খুনি মোশতাকের নাম স্পষ্ট হয়েছে। এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। এসব সবাই জানে। কিন্তু এই সত্যের দালিলিক প্রমাণ থাকা জরুরি। যুগ যুগ ধরে মানুষ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানবে কীভাবে, কেন সপরিবারে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে। কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। কারা পরিকল্পনা করেছে। কোথায় পরিকল্পনা হয়েছে। কোন কোন দেশ সহযোগিতা করেছে। সব উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন।

৪৮ বছরে অনেক চাক্ষুস সাক্ষী হারিয়ে গেছে মন্তব্য করে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়েছে ১৯৯৬ সালে। দীর্ঘদিন মামলা হওয়া ঠেকিয়ে রেখেছিল খুনি মোশতাক-জিয়াচক্র। হত্যাকাণ্ডের ৪৮ বছর পার হয়েছে, চাক্ষুস সাক্ষী অনেকেই হারিয়ে গেছেন সত্য। কিন্তু এখনো সময় আছে। এখনো অনেকেই জীবিত রয়েছেন, যারা সাক্ষ্য দিতে পারবেন। আমাদের হাতে অনেক ডকুমেন্টস রয়েছে। জিয়া-মোশতাকের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র সচিব মাহবুব আলম চাষী, শাহ মোয়াজ্জেম, কে এম ওবায়দুর রহমান, তাহের ঠাকুর, খাদ্য সচিব মোমেন খান, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত বুস্টার একাধিকবার বোরখা পরে গোপনে মোশতাকের ঢাকার বাড়িতে যান এবং বৈঠক করেন। তাছাড়া বৈঠক হয় কুমিল্লায় বার্ড-এ, দাউদকান্দিতে। মোশতাক তার নিকট আত্মীয় মেজর (বরখাস্ত) রশীদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রে জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে, যে কথা ফারুক-রশীদ ব্রিটিশ টেলিভিশনে প্রকাশ্যেই বলেছে।

তদন্তে বিদেশি ষড়যন্ত্র কতটা তুলে আনা সম্ভব- এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, ডকুমেন্টস রয়েছে। কিসিঞ্জারের বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। ওই সময়ের পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলো দেখলেই পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে আসবে। চীন বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি, দিয়েছে হত্যাকাণ্ডের পর। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান যখন চীন সফরে যান, তখন চীন বলে, তুমি বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছ। এসব দালিলিক কাগজপত্র থেকে প্রমাণ বের করা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App