×

জাতীয়

ব্যবসায়ীদের আচরণে ক্ষুব্ধ ক্রেতা, হস্তক্ষেপ দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৯ এএম

ব্যবসায়ীদের আচরণে ক্ষুব্ধ ক্রেতা, হস্তক্ষেপ দাবি

ছবি: সংগৃহীত

জলাবদ্ধতায় সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দাম বাড়ল চট্টগ্রামে

টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের নিত্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এবার জলাবদ্ধতায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও প্রায় সব পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো সংকট না থাকা সত্ত্বেও জলাবদ্ধতা ও পরিবহন সংকটে সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। এছাড়া নগরের অন্য বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট না থাকলেও হঠাৎ করে জলাবদ্ধতা ও সরবরাহের কৃত্রিম সংকটে সব পণ্যের বাজার বেশ চড়া। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে ভোক্তাদের।

ক্রেতারা নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে মিলাতে পারছে না পকেটের হিসেব। প্রয়োজনের তুলনায় অল্প নিত্যপণ্য নিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। ব্যবসায়ীদের এমন অমানবিক আচরণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান ভোক্তা অধিকার রক্ষার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বাজারে আসা ক্রেতারা অভিযোগ করেন, এবারের জলাবদ্ধতায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিত্যপণ্যের বাজারে তেমন ক্ষতি হয়নি। পানি উঠলেও তা দ্রুত নেমে যায়। কিন্তু জলাবদ্ধতা ও পরিবহন সংকটে সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যা খুবই অমানবিক।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাতুনগঞ্জের পাইকারি দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় নিত্যপণ্যের অনেক কাঁচামাল নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মালামাল তেমন আসছে না- যার ফলে নিত্যপণ্যের সাময়িক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দাম বেড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও রেয়াজউদ্দিনসহ বিভিন্ন বাজারে সরজমিন দেখা যায়, গত ৫ দিনের ব্যবধানে আদা, রসুন পেঁয়াজে দাম বেড়েছে মানভেদে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা আদা গত সপ্তাহে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে- যা গতকাল কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে, আমদানি করা চীনা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। এভাবে চাল, ডাল, লবণ, শুকনো মরিচ, হলুদ, আটাসহ প্রায় নিত্যপণ্যের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। গতকাল বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৮ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ না থাকায় দামটা একটু বাড়তি।

নিত্যপণ্যের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ কম ছিল। তাছাড়া বন্দরে জাহাজ ভিড়তে পারেনি। যার ফলে পেঁয়াজের দাম একটু বাড়তির দিকে। চাক্তাইয়ের ফোরকান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ফোরকান বলেন, পেঁয়াজের গুদামের মালামাল নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। যার ফলে দাম একটু বাড়তির দিকে।

এদিকে ভোজ্যতেল সয়াবিন ও চিনির দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও ও দামে কোথাও মিলছে না এসব পণ্য। গতকাল বাজারে চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়, অথচ সরকার নির্ধারিত দাম হচ্ছে ১২০ টাকা। বাজারে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। অথচ সরকারের নির্ধারিত দর ১৩৩ টাকা। সে হিসেবে প্রতি লিটার পাম তেলের দাম বাড়তি নিচ্ছে ২৭ থেকে ৩৭ টাকা।

এছাড়া রেয়াজউদ্দিনবাজার ও বকসিরহাটে সরজমিন দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে যে লেয়ার মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হয়েছিল প্রতি ডজন ১৩৫ টাকায় তা ৩০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। আর ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়াল হাঁসের ডিম। বাজারে হাঁসের ডিম বিক্রি হয়েছে ডজন প্রতি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকায়। অন্যদিকে এতদিন ধরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ১৫৫ টাকায়, তা গতকাল বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা কেজিতে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। গতকাল বাজারে সোনালি মুরগি কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়- যা গত শনিবারও বিক্রি হয় ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা কেজিপ্রতি।

ব্রয়লার মুরগির পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মোজাম্মেল বলেন, দেশের যেসব স্থান থেকে মুরগি সরবরাহ করা হতো, জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীদের মুরগি সরবরাহ সম্ভব হয়নি। তাছাড়া যেসব স্থান থেকে মুরগি কিনেছি তারা চড়া দামে মুরগি বিক্রি করছে। যার ফলে মুরগির বাজার চড়া।

বাজার করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. সিরাজ মিয়া বলেন, হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা জলাবদ্ধতার অজুহাত দেখিয়ে সব পণ্যের দাম বাড়তি নিচ্ছে। এভাবে নানা ইস্যুতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর চিন্তা করলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বাজারে আসা যাবে না।

মোমিনুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দখলে নিত্যপণ্যের বাজার। জলাবদ্ধতা ও সরবরাহ সংকট একটি অজুহাত মাত্র। ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

অন্যদিকে সবজির বাজারও অস্থির। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মরিচ ও টমেটোর। বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। আর টমেটো ২৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বাজারভেদে পটল প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা। কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সবজি বিক্রেতারা জানান, দেশের বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়েছে। যার ফলে বাজারে সবজির সরবরাহে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তাই পাইকারি বাজারে সব ধরনের সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে। যার কারণে খুচরা বাজারে সবজির দাম চড়া।

কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ফয়সাল করিম নামের এক এনজিও কর্মকর্তা জানান, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। এক সপ্তাহ আগে যে সবজি ৩০ টাকায় কিনেছি তা আজকের বাজারে ৬০ টাকার চেয়ে বেশি। একটি পণ্যের দাম কমলে দুইটি পণ্যের দাম বাড়ে। মাসের আয় দিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাজারের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছি।

ক্যাব’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সংকট থাকুক বা না থাকুক ব্যবসায়ীরা ইস্যু পেলেই কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ক্রেতাদের জিম্মি করে ফেলেছে ব্যবসায়ীরা। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে এসব কারসাজির পেছনে বড় প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এলেও কোনো শাস্তি হতে দেখিনি। বাজার ব্যবস্থাপনার কোনো নীতিমালা ও নিয়মিত তদারকি না থাকার কারণে বাজারের পরিবেশ অমানবিক হয়ে ওঠছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App