×

জাতীয়

সরকারকে ‘শেষ ধাক্কা’র টার্গেট বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৫৬ এএম

সরকারকে ‘শেষ ধাক্কা’র টার্গেট বিএনপির
সরকারকে ‘শেষ ধাক্কা’র টার্গেট বিএনপির

ছবি: ভোরের কাগজ

এক দফা আন্দোলন চূড়ান্ত ধাপে এবার ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ ধরেই এগোচ্ছে বিএনপি। প্রতিটি কর্মসূচিতে সরকারকে ‘না’ বলে দিয়ে ‘শেষ ধাক্কা’ দেয়ার টার্গেট দলটির। বিএনপির শীর্ষ নেত্বত্বের ভাবনায় এবার জয় ছাড়া বিকল্প নেই। তাইতো একদিকে ঝুঁকি, অন্যদিকে লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রস্তুত করা হচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনের ছক। সেই আন্দোলনে কর্মীদের নির্বাচন পর্যন্ত উজ্জীবিত রাখাই এই মূহুর্তে বিএনপির মূল লক্ষ্য।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, শত বাধা পেরিয়ে প্রথম ধাপের আন্দোলন কর্মসূচি সফল হয়েছে। এবার সরকারের ওপর চাপ তৈরির ভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা চলছে। ‘এক দফায়’ ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসূচি আসছে। তাদের ভাষ্য- আমরা সংঘাত এড়িয়ে চলছি। কিন্তু সরকার যা কিছু করছে, তার সবই উসকানিমূলক। শান্তি সমাবেশের নামে তাদের পাল্টা কর্মসূচি পুরোপুরি সন্ত্রাসের উসকানি। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথ দখলে রাখার চেষ্টা করব। এরপরও সংঘাত হলে এর দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারের।

বিএনপির সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন কবে? এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, আন্দোলন কখন কোন রূপ নেবে সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে। প্রতিটি আন্দোলনের রোডম্যাপ থাকে। কিন্তু আগে থেকেই বলে দেয়া যায় না এর ধারা কখন কোন পর্যায় পৌঁছাবে। এটি একটি ‘ইনসিডেন্ট’ থেকে বাড়তে থাকে। তাছাড়া আগামীকাল থেকে কী ঘটবে, না ঘটবে- সেটাই তো আজ বলা যায় না। সরকারের একতরফা নির্বাচনের প্রতিহত করতে আগামীতে দলের

পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে এনে আমরা আন্দোলন করছি। স্বৈরাচারী সরকারকে আরেক ধাক্কা দিতে হবে। সামনে এর বিকল্প কোনো পথ নেই। তাই দাবি আদায়ে অবশ্যই কঠোর আন্দোলনের বিকল্প ভাবছি না। এক্ষেত্রে চলমান কর্মসূচির বাইরে ধাপে ধাপে এমন কর্মসূচি আসবে যেখানে জনগণের সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততার মধ্যে দিয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।

নেতারা বলছেন, সরকার পতনের আন্দোলনে সফল হতে ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ভিন্ন কোনো উপায় নেই। অথচ বিএনপির কয়েকজন নেতার স্বীকারোক্তি- সম্প্রতি ঢাকার কর্মসূচিগুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, সারাদেশের নেতাকর্মীরা যতটা ঐক্যবদ্ধ ঢাকায় ততটাই ছন্নছাড়া। তাই এই মূহর্তে সবার আগে ঢাকায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে হবে। কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। চলতি সপ্তাহেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বসবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। একই সঙ্গে ঢাকার কর্মসূচিতে তৃণমূল থেকে আসা নেতাকর্মীদের কীভাবে নিরাপদে রাখা যাবে, তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কীভাবে করা হবে- সব গুছিয়ে পাকাপোক্ত করে একজোট হয়ে মাঠে নামবে দলটি।

সূত্র জানায়, নেতাকর্মী ও শরিকদের অন্ধকারে না রেখে সবার মত নিয়ে চূড়ান্ত করা হচ্ছে ঢাকা কেন্দ্রিক নতুন কর্মসূচি। তবে আপাতত ঢাকায় টানা আন্দোলনের পরিবর্তে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ, পদযাত্রাসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে আগস্ট মাস পার করতে চায় দলটি। সেপ্টেম্বরেই সেই আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ নেবে।

সূত্রের দাবি, খুব শিগগিরই নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা গ্রেপ্তার ও সাজার প্রতিবাদে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এবং আদালত চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের কৌশল কি হবে তা আগেই বলা যাবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের রূপ পরিবর্তন হবে, যা নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর। তবে সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। বিএনপির গণজাগরণ শুরু হয়েছে। এটাকে সিনেমার ট্রেইলার মনে করতে পারেন। পুরো সিনেমা এখনো বাকি। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।

সূত্র জানায়, তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করছে বিএনপি। দলটির ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আন্দোলনের বার্তা দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচিতে পেশাজীবীদের সক্রিয় করার পাশাপাশি ঢাকার নেতাদের সুসংগঠিত হয়ে কর্মসূচি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে এবার সমন্বয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সর্বশেষ ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য নেতাদের অনুপস্থিতি, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে আত্মসমালোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এ সরকারের নির্বাচন নির্বাচন খেলা শুরুর আগেই আমাদের আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পাবে। সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে। সরকার পতনের এবারের কর্মসূচি সফল করতে তিন স্তরের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেয়া হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় হঠাৎ করে যদি কর্মসূচি পরিবর্তন করতে হতে পারে; এমন বিবেচনায় পরিকল্পনায় একাধিক কর্মসূচি রাখার বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্ব স্থায়ী কমিটির ৩ সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হবে। একই সঙ্গে ঢাকার প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড থেকে ১০ জন করে নেতার নামের তালিকা হাইকমান্ডে পাঠানো হয়েছে। এসব নেতা কর্মসূচির অগ্রভাগে নেতৃত্ব দেবেন।

পাশাপাশি সারাদেশের নেতাকর্মীরা একযোগে রাস্তায় নামার সিগন্যাল না পাওয়া পর্যন্ত তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার এড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত ৩৬টি জেলায় সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করেছেন তারেক রহমান। এ মাসে আরো কিছু জেলায় ভার্চুয়ালি সম্মেলন করা হবে। এবারের আন্দোলনে কর্মসূচিতে বিএনপির দীর্ঘদিনের জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীকে যুক্ত করার ব্যাপারে দলীয় ফোরাম ও জোট থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ভাঙন ঠেকাতে সতর্ক বিএনপি

কোনো প্রপাগান্ডা বা বাড়তি উসকানিতে নিজেদের মধ্যে যাতে দূরত্ব সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক থাকবে বিএনপির হাইকমান্ড। নির্বাচনে অংশ নেয়াসহ যে কোনো সিদ্ধান্তে ঐক্যমত থাকার কঠোর বার্তাও রয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অনেক দলকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বাগিয়ে নেয়া হতে পারে। এমন সন্দেহে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা পোক্ত করতে ছোট দলের আবদারকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া রাজপথে আন্দোলনে সরকার মামলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে কয়েক স্তরের নেতৃত্ব তৈরি করা হচ্ছে। এতে যেন কেউ নাখোশ না হন বা প্রতিযোগিতায় না নামেন এ ব্যপারে দলীয় বৈঠকে সিনিয়র নেতারা নিজেদের মতামত ঝালিয়ে নিচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App