×

জাতীয়

সংবিধানে আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্ত করে স্বীকৃতির দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম

সংবিধানে আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্ত করে স্বীকৃতির দাবি

ছবি: ভোরের কাগজ

সংবিধানে আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্ত করে স্বীকৃতির দাবি

আদিবাসী সমাজের ওপর পুঁজিবাদী ও আধিপত্যবাদী শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার প্রতিবিধানে বাঙালি-আদিবাসীদের সামষ্টিক লড়াইয়ের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে হবে। পাশাপাশি, সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার সব নীতির মধ্যে আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্ত করে স্বীকৃতি দিতে হবে বলে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস, ২০২৩’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই কথা বলেন।

বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। অনুষ্ঠানটির উদ্বোধক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, ড. খায়রুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরিণ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।

বক্তব্য প্রদানকালে রাশেদ খান মেনন বলেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে এখনও গড়িমসি করা হচ্ছে। সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেটাও গঠন করা হয়নি।

বাঙালি-আদিবাসী মিলে সামষ্টিক লড়াইয়ের মাধ্যমে এসব দাবি আদায় করতে হবে মন্তব্য করে তিনি আদিবাসী যুবদের পাশাপাশি বাঙালি যুবদেরকে তারুণ্য শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার কথা বলে বিভিন্ন বাহিনীকে বছরের পর বছর সেখানে রাখছেন। জাতীয় বাজেট থেকে বহু খরচ সেখানে চলে যাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হলে এসবের দরকার পড়তো না। আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আর এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।

আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জীবন দেয়া আদিবাসী যুবকদের প্রতি লাল সালাম জানিয়ে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার সব নীতির মধ্যে আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্ত করে স্বীকৃতি দিতে হবে। অসত্য তথ্য দিয়ে আমাদের সংবিধান শুরু হয়েছে, তাঁদের উপজাতি বলা হয়েছে, নীতিভিত্তিক ভাবে তৈরি হয়নি আমাদের সংবিধান। তার মাধ্যমে তাদের অপমান করা হয়েছে, অর্থের দ্বৈত্ববোধ সৃষ্টি করা হয়েছে, স্বীকৃতির নামে অপমান করা হয়েছে। আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে না পারলে শ্রদ্ধা করবেন কিন্তু অসম্মান করবেন না। চুক্তি করার মধ্যে গৌরব নেই, সাফল্য, গৌরব চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে। চুক্তি বাস্তবায়ন না করে ১৯৯৭ এর চুক্তিকে চরম অপমান করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্য প্রদানকালে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা বলেন, যুগে যুগে যুবশক্তি সমাজের সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি মনে করি এখনো পর্যন্ত আদিবাসী যুব সমাজের নেতৃত্বের মধ্যে প্রগতিশীল রাজনৈতিক আদর্শের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পুঁজিবাদী ও আদিপত্যবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে ও আদিবাসী সমাজের যে শোষণ বঞ্চনা তার প্রতিবিধানে আদিবাসী যুবদেরকে অধিকতরভাবে একাত্ম হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীরা আজ বিলুপ্ত প্রায় উল্লেখ করে বিলুপ্তপ্রায় আদিবাসীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ও আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার নিয়ে বিকশিত হওয়ার অধিকার অর্জনের লড়াইয়ে আদিবাসী তরুণদেরকেই আরো অধিকতর ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক বনশ্রী মিত্র নিয়োগী, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোশিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক হরেন্দ্র নাথ সিং প্রমুখ।

‘আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণরাই মূল শক্তি’ প্রতিপাদ্যকে সমানে রেখে আলোচনা সভা শেষে গণসংগীত পরিবেশন করে আদিবাসীদের গানের দল ‘মাদল’, সমগীত ও এফ মাইনর। এছাড়া আদিবাসী কালচারাল ফোরাম ও আন্যান্যদের পরিচালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহীদ মিনার থেকে একটি র‌্যালী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে আবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App