×

জাতীয়

শুভ জন্মদিন বঙ্গমাতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২১ এএম

শুভ জন্মদিন বঙ্গমাতা

ছবি: সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৫৪ বছরের জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটিয়েছেন। পাকিস্তান শাসনামলের ২৩ বছরে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গেছেন, প্রায় ১৩ বছর কেটেছে কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে একজন সাধারণ গৃহবধূ হয়েও মামলা পরিচালনা, দলকে সংগঠিত করা, কর্মীদের সহায়তা, আন্দোলনের দিকনির্দেশনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর রেণু। যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণাদায়ী।

কালের পরিক্রমায় যিনি শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব থেকে এখন জাতির ‘বঙ্গমাতা’র আসনে আসীন। টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে শেখ মুজিব, শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, আর বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পিছনে যার অবদান অনস্বীকার্য। আজ তার ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তেও সংসার ও রাজনীতির কর্মময় জীবনের বর্ণনায় বারবার স্ত্রীর নাম উচ্চারণ করেছেন। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত শেখ মুজিবের যখনই অতিরিক্ত অর্থের দরকার হতো; তখনই নিজের পিতৃ সম্পত্তি থেকে অর্জিত অর্থ বিনা দ্বিধায় পাঠাতেন রেণু। জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি সব পরিস্থিতি জানাতেন এবং বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে যে সব দিকনির্দেশনা নিয়ে আসতেন, সেগুলো তিনি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।

কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার স্মৃতিচারণে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের সাহস দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে তার ছিল অনন্য ভূমিকা। বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর এবং বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সহযোদ্ধা ছিলেন তিনি। বঙ্গমাতা অসাধারণ বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সর্বসংহা ও দূরদর্শিতার অধিকারী ছিলেন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি। কখনোই সাহস হারাননি। আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন ফজিলাতুন নেছা মুজিব।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নীরবে ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করেছেন বঙ্গমাতা। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তির জন্য পূর্ববাংলায় দুর্বার আন্দোলনকে গতিশীল রাখতে নেতৃত্ব দেন বঙ্গমাতা। লাহোরে গোল টেবিল বৈঠকে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে রাজি হননি বঙ্গমাতা। তার একটাই দাবি প্যারোল নয়, নিঃশর্ত মুক্তি। নিজ সিদ্ধান্তে বঙ্গমাতার অটল থাকায় রাজবন্দিরা মুক্তি পেয়েছিলেন এমন মনে করেন ইতিহাসবিদরা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণাও বঙ্গমাতার অবদান অনস্বীকার্য।

শেখ হাসিনার ভাষায়, আমার মা আব্বাকে খাবার দিলেন, ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আব্বাকে সোজা বললেন, ‘তুমি ১৫ মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নেবে। অনেকেই অনেক কথা বলবে। তুমি সারা জীবন আন্দোলন সংগ্রাম করেছ, জেল খেটেছ। তুমিই জান কি বলতে হবে? তোমার মনে যে কথা আসবে, সেকথাই বলবা।’ বঙ্গমাতার এই উদ্দীপক প্রেরণাই বঙ্গবন্ধুকে ৭ মার্চের ভাষণটি দিতে শক্তি জুগিয়েছিল।

১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণকারী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বেঁচে থাকলে আজ ৯৪ বছরে পা রাখতেন তিনি। কিন্তু তিনি যে স্বামী অন্তঃপ্রাণ আপাদমস্তক বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি। পিতৃহন্তারকের সামনে দাঁড়িয়ে শেষ সাহসী উচ্চারণ করলেন বঙ্গবন্ধুর রেণু, তোমরা ওকে শেষ করে দিয়েছ, আমাকে আর বাঁচিয়ে রেখ না। পঁচাত্তরের পনের আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে এক হয়ে মিশে গোটা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলকেই রক্তাক্ত করেছে বঙ্গবন্ধুর রক্ত, বঙ্গমাতার রক্ত।

কর্মসূচি : দিবসটিতে সরকারি কর্মসূচি ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা জানানো, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। এছাড়া বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী’ শীর্ষক আলোচনা সভা করবে যুবলীগ। দুপুর ২টায় বাদ যোহর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় এতিমদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। বিকাল ৩টায় আলোচনা সভা করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শ্রমিক লীগ।

এছাড়া গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায় দিনব্যাপী ফ্রি হেলথ ক্যাম্প আয়োজন করবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও ‘বাংলাদেশের মাতা, বাংলাদেশের নেতা’ শীর্ষক ছাত্রী সমাবেশ করবে ছাত্রলীগ। যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী পালনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App