×

জাতীয়

হয়রানি কমবে, নামও বদল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১৫ এএম

হয়রানি কমবে, নামও বদল

প্রতীকী ছবি

হয়রানি কমবে, নামও বদল

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ থেকে ‘সাইবার নিরাপত্তা’ আইন, বেশ কিছু ধারায় সংশোধন

বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মানহানির মামলায় কারাদণ্ড দেয়া ও গ্রেপ্তার করার বিধান বাতিল করে প্রণয়ন করা হয়েছে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন। এই আইনে মানহানির জন্য সাজা হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে অর্থদণ্ড। মানহানির মামলায় এখন যেহেতু কোনো কারাদণ্ড নেই, তাই এই ধারায় কাউকে গ্রেপ্তারও করা যাবে না। আর হ্যাকারদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে হ্যাকিংয়ের জন্য সাজা। এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারবেন আদালত। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বহুল আলোচিত কয়েকটি অজামিনযোগ্য ধারা বাতিল করে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। তবে নতুন সাইবার আইনেও কয়েকটি ধারা অজামিনযোগ্যই থেকে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি, কেবলমাত্র পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এই পরিবর্তনকেই স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে যেন ওই আইনের দমনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে আনা না হয়।

এর আগে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’-এর প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধেই নতুন আইন করা হয়েছে। আর সাইবার নিরাপত্তা আইন নতুন আইন হিসেবে এলেও আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে সব মামলা হয়েছে’ সেগুলো চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, আগের আইনে যে সব মামলা হয়েছে তা চলবে। তবে এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনের আদলে নতুন মামলা হবে। জাতীয় সংসদের আগামী সেপ্টেম্বরের অধিবেশনে সাইবার নিরাপত্তা আইন পেশ করা হবে এবং সংসদে নতুন এই আইনটি পাসও হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আইনে কী কী পরিবর্তন আসছে তা নিয়ে আনিসুল হক বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সাইবার নিরাপত্তা আইন উপস্থাপন করার পর এটির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। আইনমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সাইবার সিকিউরিটি আইন আরো কড়া। আর পাঁচ বছর আগে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি ভুল ছিল না। তবে আমরা জনগণের কথা শুনি। তাই অপব্যবহার রোধে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে।

এদিকে, মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে পর্যালোচনা করে সাইবার আইনটি করা হয়েছে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনটি নির্ধারিত আলোচ্যসূচিতে ছিল না। সাপ্লিমেন্টারি আলোচনায় আসার পর মন্ত্রিসভা আইন পরিবর্তনে সায় দেয়। তবে এই পরিবর্তনের জন্য কারো কোনো চাপ ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি গত ৫ বছর ধরে চলছিল। অভিজ্ঞতার আলোকে ও সময়ের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে আইন পরিবর্তন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিমন্ত্রী জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী আইনটি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আইনটি পরিবর্তনের জন্য এমনিতেই আলোচনায় ছিল। এখন তো বড় বড় জায়গা থেকে আলোচনা হচ্ছে।

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংশোধন করা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন এনে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মোট ধারা রয়েছে ৬০টি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধ করার জন্য এই আইনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের একটা কথা ছিল, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট থাকলে একটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। সেটাকেও আমরা ধর্তব্যের মধ্যে নিয়েছি এবং সেই কারণে এই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে। এর ফলে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি আশা করছি অবশ্যই হবে। তবে আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের যে খবর জানা গিয়েছিল; সেটি সত্য নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পরিবর্তন করা হয়েছে (ডিএসএ), বাতিল করা হয়নি। নামটা নতুন করে দেয়া হয়েছে, কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, পরিবর্তনটা এতটাই করা হয়েছে, সেখানে যাতে কোনো দ্বিধা তৈরি না হয়, সেজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নাম রহিত করে তার পরিবর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয়েছে। ব্যাপারটা হচ্ছে, আইনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে, অনেক জায়গায় সাজার পরিমাণ বেশি ছিল, সেটা কমানো হয়েছে, যেখানে উপধারা দিয়ে পুনরায় অপরাধ করলে সাজা ডবল হয়ে যেতো, সেটা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। কোনো সংশয় যাতে তৈরি না হয়, সেই কারণে রহিতকরণ ও হেফাজত করণের বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছি। তবে ডিএসএ-এর অধীনে যেসব মামলা করা হয়েছিল সেগুলো চলবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। কিন্তু মামলার কার্যক্রম সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ব্রিফিংয়ে জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেসব ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২১ ধারা। এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো রকম প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালায় বা তাতে মদদ দেয় তাহলে সেটি অপরাধ বলে গণ্য হতো এবং এর জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান ছিল। এই একই অপরাধ কেউ দ্বিতীয়বার করলে তার সাজা দ্বিগুণ করার বিধান ছিল। আর বারবার একই অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা তিন কোটি টাকা জরিমানার বিধান ছিল। এই ধারাটিতে পরিবর্তন এনে সাজার মেয়াদ ৭ বছর করা হয়েছে। আর দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলেও সাজা দ্বিগুণ হবে না। ডিএসএ এর ৪৩ ধারা নিয়ে বড় বিতর্ক থাকলেও সেটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ৪৩ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন, কোনো স্থানে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে সাক্ষ্য প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছে ফেলা, পরিবর্তন হওয়ার বা করার সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে তার, কোনো পরোয়ানা ছাড়াই সেখানে তল্লাশি, সরঞ্জাম জব্দ, দেহ তল্লাসি, এবং পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের এখতিয়ার রয়েছে। এটি অপরিবর্তিত রাখার যুক্তি হিসেবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে, এসব অপরাধ যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে করা হয় সেটা জব্দ না করলে প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেকারণে এটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ডিএসএর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার পর পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্তে তারা সন্তুষ্ট হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তারা সন্তুষ্ট হবে কিনা সেটা তাদের বিষয়। আমরা সবাই বসে দেখেছি, এই আইনটা যে উদ্দেশে প্রণয়ন করা হয়েছিল সেটা যাতে পূরণ করা যায় সেটার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয়া।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮,২৯,৩০ ধারাগুলো বাতিলের বিষয়ে নানা সময়ে আহ্বানও জানানো হয়েছে। এই ধারাগুলো বাতিল করা না হলেও সেগুলোতে সংশোধন আনা হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তারা বলেন, আমরা সবসময়ই বলেছি যে বাতিল করা যাবে না। এগুলো সংশোধন করা হবে এবং সেটাই করা হয়েছে। ডিএসএ-র ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করা বা উসকানি দেয়ার জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করে, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহলে তা অপরাধ হবে। এই অপরাধের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর কারাদণ্ড, বা দশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল। একই অপরাধ বার বার করলে সাজা ও জরিমানার মেয়াদ দ্বিগুণ হওয়ার বিধান ছিল। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, এই ধারায় সাজা কমানো হয়েছে। এটা আগে ছিল অজামিনযোগ্য। এটা জামিনযোগ্য করা হয়েছে। ডিএসএ এর ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তিনি তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এছাড়া একই অপরাধ বারবার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল। এই ধারায় পরিবর্তন এনে কারাদণ্ডের যে সাজা ছিল সেটাকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখানে শাস্তি হবে শুধু জরিমানা। আর জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। আইনমন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ জরিমানা ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হবে। তিনি বলেন, দেওয়ানি আইনে কেউ মানহানির জন্য মামলা করলে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার কোনো সীমা নেই। তিনি চাইলে ১০০ কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। তবে সেটা কমিয়ে সর্বোচ্চ আদায় যোগ্য জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। তবে কত টাকা জরিমানা করা হবে তা নির্ধারণ করবে আদালত। ডিএসএর ৩১ ধারায় এর আগে উল্লেখ করা হয়েছিল, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা স¤প্রচার করেন বা করান, যা বিভিন্ন শ্রেণি বা স¤প্রদায়ের মধ্যে শত্রæতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ৭ বছর এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। একাধিক বার একই অপরাধ করলে সাজা বেড়ে ১০ বছর এবং জরিমানা ১০ লাখ টাকা করার বিধান ছিল। এই ধারায় পরির্বতন এনে সাজার সময়-সীমা কমানো হয়েছে। আগে সাত বছরের কারাদণ্ডের পরিবর্তে এটা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। বারবার একই অপরাধ করলে সাজা বাড়ানোর বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। ৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধের শাস্তি আগে ছিল ১৪ বছর, সেটি কমিয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। বারবার এই অপরাধ করলে সাজা বাড়ার বিধান বাতিল করা হয়েছে। ৩৩ ধারা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধ নামে নতুন ধারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই অপরাধের শাস্তি অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন প্রণয়ন করা হয়। যেটি আইসিটি আইন হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। সেই আইনে বলা হয়, বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আইনগত বৈধতা ও নিরাপত্তা দেয়া এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এই আইনটি সংশোধন করে আরো কঠোর করা হয়। এই আইনের অধীনে বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি বাড়ানো হয়। আইসিটি অ্যাক্ট পাস হওয়ার পর থেকেই এই আইনটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে বির্তক তৈরি হয়। বিশেষ করে আইনটির ৫৭ ধারা বাতিলের তুমুল দাবি ওঠে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছিল, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা স¤প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি দেয়া হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়ার বিধান ছিল। এই ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও সাংবাদিকদের কারাগারে নেয়ার একাধিক ঘটনা তীব্র সমালোচনা তৈরি করেছিল। সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের তরফ থেকে এটি নিবর্তনমূলক আখ্যা দিয়ে আইসিটি আইন বাতিলের দাবি করা হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামের একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। একই বছরের সেপ্টেম্বরে খসড়াটি সংসদে আইন হিসেবে পাস হয়। এখন আবার পরিবর্তন করা হলো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App