×

জাতীয়

নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:১৫ পিএম

নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন

শাহরিয়ার কবির

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির একাধারে মানবাধিকার কর্মী, গবেষক, লেখক, সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন গঠন ও শ্বেতপত্র প্রকাশের প্রথম দাবি জানিয়েছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। নির্মূল কমিটির পক্ষে গত দেড় যুগ ধরে এই দাবিতে দেশে-বিদেশে অসংখ্য সেমিনার, আলোচনা সভা করে আসছেন শাহরিয়ার কবির। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে গতকাল রবিবার ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন এই গবেষক।

নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য তদন্ত কমিশন জরুরি মন্তব্য করে শাহরিয়ার কবির বলেন, তদন্ত কমিশন হলে ষড়যন্ত্রের অনেক কিছু উন্মোচিত হবে। এখনো তদন্ত কমিশন করে ষড়যন্ত্রের দিক উন্মোচন করা সম্ভব। কারা পরিকল্পনা করেছে, কারা জড়িত, তা বের করা প্রয়োজন। এরপর আর সম্ভব হবে না, কারণ প্রত্যক্ষদর্শীরা বেঁচে থাকবেন না।

এখন কমিশন গঠন সম্ভব কিনা- এর জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই সম্ভব। শ্বেতপত্র প্রকাশ করা সম্ভব। খুব বেশি হলে ৬ মাস লাগবে। আমরা বলেছি, ট্রাইব্যুনালে যারা সাক্ষী দিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই বেঁচে আছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যারা গবেষণা করেছেন, বহু স্কলার বেঁচে আছেন। তাদের সাক্ষ্য নিতে হবে। এসব সাক্ষ্য নিতে বেশি হলে ৩ মাস লাগবে। আর প্রতিবেদন লিখতে আরো ৩ মাস। ৬ মাসের বেশি সময় লাগবে না। মনে রাখতে হবে, ওই অপশক্তির রাজনীতি কিন্তু এখনো সক্রিয়। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে তারা ২১ বার হত্যার চেষ্টা করেছে। এখন নির্বাচন বানচালের জন্য য়ড়যন্ত্র করছে তারা।

শাহরিয়ার কবির বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই আমরা এই দাবি জানিয়ে আসছি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে ফৌজদারি আদালতে। আমরা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছিলাম। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তি হত্যাকাণ্ড নয়। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড। একটি আদর্শের হত্যাকাণ্ড। চেতনার হত্যাকাণ্ড। দেশের সংবিধানের হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ড সাধারণ আদালতে হতে পারে না। এজন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে বিচারের দাবি ছিল আমাদের। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না করেছেন।

তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন ওঠবে। এতে সবাই মনে করবে, তার পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার বলে বিশেষ ট্রাইবুন্যালে করা হয়েছে। সেজন্য স্বচ্ছতার কারণে তিনি প্রচলিত আদালতে বিচার করেছেন। কিন্তু প্রচলিত আদালত এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারে না। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু দেশের রাষ্ট্রপতি নয়, একটা দর্শনকে হত্যা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে কেন আমরা বিচ্ছিন্ন একটা ব্যক্তি হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছি? বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হলে হত্যাকাণ্ডের অনেক বিষয় উঠে আসত।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, হাইকোর্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর্যবেক্ষণে যে রায় দিয়েছেন- সেখানেও বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত খুনিদের রায় কার্যকর করা হয়েছে, কিন্তু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের নায়ক কারা ছিল, তাদের বিচার হয়নি। এটি তো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। নেপথ্যের নায়কদের খুঁজে বের করার জন্য আদালতের একটি নির্দেশনা ছিল, একটি কমিশন গঠন করতে হবে। উচ্চপর্যায়ের কমিশন- যারা বলবে, এর নেপথ্যের নায়ক কারা, কি উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে; কিন্তু এই যে সংবিধান হত্যা করা হলো এর বিচার হয়নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হত্যা করা হলো; এর বিচার হয়নি। সেজন্য আমাদের দাবি, একটি কমিশন গঠন করে পুরো প্রতিবেদন জাতির সামনে প্রকাশ করা। কারা খলনায়ক, কারা প্লট তৈরি করেছে, কারা মঞ্চ সাজিয়েছে সব দিক উন্মোচিত হবে।

তিনি বলেন, সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বারবার তদন্ত কমিশন গঠনের কথা বলছেন। কিন্তু তদন্ত কমিশন হচ্ছে না। আমি মনে করি, এই সরকারের আমলেই তদন্ত কমিশন হওয়া উচিত। অন্তত কাজটা শুরু হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক খেলা বন্ধের জন্য বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সব রহস্য উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App