×

জাতীয়

ঐক্যের প্রতিশ্রুতি তৃণমূলের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৪৩ এএম

ঐক্যের প্রতিশ্রুতি তৃণমূলের

ছবি: ফোকাস বাংলা

ঐক্যের প্রতিশ্রুতি তৃণমূলের
ঐক্যের প্রতিশ্রুতি তৃণমূলের
ঐক্যের প্রতিশ্রুতি তৃণমূলের
ঐক্যের প্রতিশ্রুতি তৃণমূলের
ঐক্যের প্রতিশ্রুতি তৃণমূলের

আ.লীগের বর্ধিত সভায় স্থানীয় কোন্দল নিরসনের তাগিদ নানা আবদার তুলে ধরেন নেতারা

কোনোভাবেই সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত করতে দেবে না আওয়ামী লীগের তৃণমূল। দ্বিধা করবে না দল ও নেত্রীর জন্য যে কোনো ঝুঁকি নিতেও। সব ভেদাভেদ ও কোন্দল ভুলে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেন নেতারা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার অঙ্গীকারও করেন তারা। দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে এমনই অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল নেতারা। গতকাল রবিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এ অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন প্রাঙ্গণে শুরু হয় বর্ধিত সভা। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত, গীতা থেকে পাঠ, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির উপদেষ্টা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, জাতীয় কমিটিসহ সারাদেশের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা, থানা, পৌর, দলীয় সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়র, জেলা সদরের পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বর্ধিত সভায় অংশ নেন। গণভবন প্রাঙ্গণে মোট সাড়ে ৩ হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী বক্তব্যের পর তৃণমূলের নেতারা বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা নিজ নিজ সাংগঠনিক জেলার নানা সমস্যা তুলে ধরেন। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যের বড় অংশজুড়েই ছিল গত সাড়ে ১৪ বছরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রশংসা। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে নিজ নিজ জেলায় চাহিদার চেয়েও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেশি হওয়ার গল্প। নেতাদের কেউ কেউ আবার তাদের বক্তব্যে নিজেদের জেলার উন্নয়নে কিছু দাবিও তুলে ধরেন। তৃণমূল নেতারা আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়ারও দাবি তুলেন কেউ কেউ।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন, পটুয়াখালী জেলার তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভালো নেই। তাদের কথা আমরা আমাদের সরকারের সুফল ঘরে তুলে নিতে পারিনি। দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই দলের দুঃস্থ ও গরীব নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখে না। জেলার সব উপজেলায় সাংগঠনিক অবস্থা ভাল আছে। কিন্তু বাউফল উপজেলায় অনেকদিন যাবত বিরোধ চলছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপিংয়ের কারণে প্রায়ই সেখানে মারামারির মতো ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনের আগেই এই সমস্যা সমাধানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

পটুয়াখালীর উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, পটুয়াখালী এখন আর খালি নেই। পটুয়াখালী এখন ভরপুর। সাড়ে ১৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মাসেতু হওয়ার পর কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে সমুদ্র সৈকতটি ভাঙ্গনের মুখে। এটি রক্ষায় একটা শক্তিশালী বেড়িবাঁধ দরকার। পদ্মা সেতু হওয়ায় পটুয়াখালীতে এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আগামী নির্বাচনে পটুয়াখালীর সবকটি আসনেই নৌকার বিজয় উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এই নেতা।

পঞ্চগড় জেলায় ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর দিয়ে চারটি দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ ব্যাপক উপকৃত হয়েছে। চা বাগান জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন এনেছে। তিনি বলেন, পঞ্চগড় এখন ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা। সাধারণ মানুষ তো প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর উপহার পেয়েছেন। বিএনপির অস্বচ্ছল নেতাকর্মীদের প্রতিও কোনো অবিচার করা হয়নি। শেখ হাসিনার উদারতায় তারাও ঘর পেয়েছেন।

একজন বিএনপি নেতার বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, উপকারভোগী বিএনপি নেতারাও ব্যক্তিগত আলাপে বলেন, দেশ চালানোর জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তাদের যখন জিজ্ঞাসা করা হয়- বিএনপি নেতারা কেন সরকার ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, সমালোচনা করে। তারা তখন জবাব দেয়- মঞ্চে উঠে বক্তৃতা করে মাইকে সরকারের সমালোচনা আর বিপক্ষে না বললে, বিএনপির তো রাজনীতি থাকে না। বিএনপির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাই বিএনপির নেতারা সরকারকে গালিগালাজ করেন। তবে উপকারভোগী বিএনপি নেতাকর্মীরা আগামীতে নৌকায় ভোট দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বলেন সম্রাট।

আগামী নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধভাবে পঞ্চগড়ের দুটি আসনেই নৌকার বিজয় উপহার দেয়ার কথা বলেন তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নের কারণেই আগামীতে মানুষ ব্যাপকভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।

দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা তার বক্তব্যে বলেন, খালেদা জিয়ার বেড়ে ওঠা দিনাজপুরে। ফলে বিএনপি সেখানে কিছু ভোট পেত। গত সাড়ে ১৪ বছরে জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় সেখানে বিএনপির ভোট এখন অনেক অনেক কমে গেছে। আওয়ামী লীগের ভোট বেড়েছে কয়েকগুণ। দিনাজপুর জেলা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দিনাজপুরের একজন সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেন। ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা না মানার অভিযোগ করেন তিনি। আগামী নির্বাচনে দিনাজপুরের ৬টি আসনেই নৌকার বিজয় উপহার দেয়ার কথা জানান তিনি।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার দাস আগামীতে প্রার্থী চূড়ান্ত জনপ্রিয়দের অগ্রাধিকার দেয়ার অনুরোধ জানান। নির্বাচনের আগেই জেলার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দেয়ার অনুরোধ জানান।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় সংগঠন। শক্তিশালী সংগঠন। তবে আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য নাই। ঐক্য না হলে আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় দ্ব›দ্ব আছে। এই দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দল দুই ভাগে বিভক্ত; একটা হলো আওয়ামী লীগ; আরেকটা হলো ‘আমি লীগ’। তিনি বলেন, দল মনোনয়ন দেয়। আমরা তাকে বিজয়ী করি। বিজয়ী হয়ে তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, সব ভেদোভেদ ও কোন্দল দূর করে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও জেলার ৬টি আসনেই নৌকার বিজয় উপহার দেয়া হবে। জরিপের ভিত্তিতে জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান তিনি। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে একটি দেশাত্ববোধক গান গেয়ে শোনান।

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, লালমনির হাটে আগামীতে লাঙলের পরিবর্তে নৌকা মার্কার মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান তিনি। এ সময় লালমনিরহাটের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন তিনি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লালমনিরহাট তো লালে লাল হয়ে গেছে। অনেক কিছু দিয়েছি।

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী বলেন, খালেদা জিয়ার জন্মস্থান হওয়ায় ফেনী এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। সাড়ে ১৪ বছরে জেলার প্রতিটি এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ফলে জেলায় ভোটের চিত্রও বদলে গেছে। ফেনী এখন আর বিএনপির ঘাঁটি নেই। ফেনী এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ভবিষ্যতে ফেনীতে বিএনপি আর আগের মতো জিততে পারবে না। ফেনীতে সাংগঠনিক কোনো দুর্বলতা নেই, আমরা এখন অনেক শক্তিশালী। সেইসঙ্গে বিএনপির যে কোনো আন্দোলন শক্তহাতে দমন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, অনেকেরই এমপি হওয়ার স্বপ্ন থাকতে পারে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ তালুকদার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, নেত্রী আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা আজকে আপনার সামনে কমিটমেন্ট করে যাবেন- আমরা দলের ভেতরে কোনো বিভাজন করব না। নেতা কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াব। মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাড়াব।

তিনি বলেন, আপনার সামনে কমিটমেন্ট করব, ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। কিন্তু এখান থেকে বের হয়ে দলবল নিয়ে গিয়ে এলাকায় গ্রুপিং করব।? এটা যেন না হয়। যৌথভাবে সবাই দলের জন্য কাজ করব। আমি আমার আমিত্ব জাহির করব না- এই কমিটমেন্ট দরকার। যাকেই মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করব। উপজেলাগুলোতে কমিটি করে আমরা কাজ করছি। এ সময় আশ্রয়ন প্রকল্পের নাম বঙ্গবন্ধু আশ্রয়ন পল্লী করার প্রস্তাব করেন তিনি।

হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা নেতাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পাশাপাশি দলের কাজে লাগানোর দাবি করেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া বিশেষ বর্ধিত সভা দুপুরে খাবার ও নামাজের বিরতির পর বিকেল ৩টায় ফের শুরু হয়। চলে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। বর্ধিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি-উল কবির, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, সারাদেশের জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের প্রায় অর্ধশত নেতা। তারা সবাই সব ভেদাভেদ ভুলে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে বিজয় উপহার দেয়ার কথা বলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App