×

জাতীয়

মানবতার স্বার্থে বঙ্গবন্ধু হত্যার রহস্য উন্মোচন হওয়া দরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪৭ এএম

মানবতার স্বার্থে বঙ্গবন্ধু হত্যার রহস্য উন্মোচন হওয়া দরকার

অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক ২০২১ সালে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ‘সোহরাওয়ার্দী বনাম বঙ্গবন্ধু’, ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’সহ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একাধিক গবেষণা গ্রন্থের প্রণেতা।

শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন এই শিক্ষাবিদ।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তদন্তে কমিশন গঠিত হলে সব ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হবে মন্তব্য করে অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা সম্পর্কে এখনো অজানা। তবে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কমিশন গঠনের পরিবেশ রয়েছে কিনা, আমাদের সেই শক্তি কতটুকু- তা বিবেচনায় রাখতে হবে। দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র প্রকাশের পর আমরা সামাল দিতে পারব কিনা তা ভাবনায় রাখতে হবে।

এই বঙ্গবন্ধু গবেষক বলেন, ইতোমধ্যে ৪৮ বছর পেরিয়ে গেছে। এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে বলেই যে তদন্ত কমিশন করা যাবে না, তা নয়। অসম্ভব বলতে কিছুই নেই। তবে রাজনৈতিক যে অবস্থা, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক রাজনীতির যে অবস্থা, সেখানে আমাদের দেশের মতো একটি দেশের সরকারের পক্ষে সবকিছু ইচ্ছে করলেই করতে পারে না। অনেক হিসাব-নিকাশ করেই সবকিছু করতে হয়। সেই দিক থেকে পরিবেশ খুব অনুকূলে আছে বলে আমার মনে হয় না। এটাই সরকারের পক্ষে প্রধান অন্তরায়। আরেকটি কমিশন করে দেশে-বিদেশে কোনো চক্রান্ত জড়িত তা খুঁজে বের করা। সরকারেরও সীমাবদ্ধতা থাকে পারিপার্শ্বিক কারণে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে। যে কারণে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেয়া যায়নি। তবে চার মূলনীতি পুনঃস্থাপিত হয়েছে।

অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, সময় যতই নিক আমার বিশ্বাস, একটা সময় আসবে তরুণ প্রজন্ম এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করার জন্য পদক্ষেপ নেবে। ইতিহাসের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে, মানবতার আদর্শ সমুন্নত রাখার জন্য এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা একান্ত প্রয়োজন। কারো কারো সম্পৃক্ততা প্রমাণ হলে মরণোত্তর বিচারও হতে পারে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি যারা রয়েছে, তাদের বিচার কার্যকর করা জরুরি। তদন্ত কমিশনের আগে এসব স্বীকৃত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা উচিত।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক রাজনীতি তুলে ধরে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন জাতীয়তাবাদী নেতা। জাতির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে বিন্দুমাত্র ছাড়ে অনড়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। একাত্তরের পাকিস্তানের পরাজয়ের সঙ্গে সমর্থনের কারণে মূলত তাদেরও পরাজয় ঘটে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে তখন স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। বিশ্ব রাজনীতি তখন টালমাটাল। আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত, শাসক ও শোষিত শ্রেণি। আমি শোষিতের পক্ষে। শোষিতের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর এই দৃঢ় অবস্থান শাসকগোষ্ঠীর জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। আঞ্চলিক রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু বিশাল ফ্যাক্টর ছিলেন। স্বভাবতই ¯œায়ুযুদ্ধের ভিকটিম হলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে উপমহাদেশের রাজনীতি।

পাশাপাশি এই বক্তব্যটুকু লাগাতে হবে – তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন গঠিত হবে এবং শ্বেতপত্র প্রকাশ অবশ্যই হবে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে এমনটি কেউ আগে ভাবতে পারেনি কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই বিচারগুলো হয়েছে এবং জাতির কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এক?ইভাবে যে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না আমরা স্বাধীন দেশ পেতাম না, সেই জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের শ্বেতপত্র প্রকাশ হবে না এটি আমি বিশ্বাস করি না। হয়তো একটু সময় লাগছে কিন্তু অবশ্যই হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App