ডেঙ্গু ও করোনার চেয়ে তামাকজনিত রোগে মৃত্যু বেশি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৪৭ পিএম
ছবি: ভোরের কাগজ
ডেঙ্গু ও করোনাতে দেশে দৈনিক যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে তামাকজনিত রোগে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মৃত্যু হচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন তামকজনিত রোগে প্রাণ হারাচ্ছে ৪৫০ জন। অথচ বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। বিপুল সংখ্যক মৃত্যু এবং অকাল মৃত্যু রোধে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা এও বলছেন যে, আইন দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য সচেতনতা এবং ব্যাপক প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন।
‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এই সভা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজন করে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। বক্তব্য রাখেন অধিদপ্তরের অতিরিক্তি মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বির উপস্থাপনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে দেশে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়। মানবদেহে বিভিন্ন রোগেরও সৃষ্টি হয়। ডেঙ্গুর চেয়েও এটি গুরুতর। ডেঙ্গু মৌসুমে হয় বলে প্রচার বেশি পায়। আর তামাক জনিত কারণে যে মৃত্যু তা সারাবছর হয় বলে গা সওয়া হয়ে গেছে। তামাকব্যবহারে অকাল মৃত্যু কমিয়ে আনতে দ্রুত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) সংশোধন করা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, আইন না থাকায় মানুষ অন্যায় করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। আইন থাকলে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করবে। ব্যবসায়ীরা যার যার স্বার্থ দেখে। অথচ এ খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার কয়েকগুণ বেশি টাকা তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় খরচ হয়। তামাকের সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করার সুযোগ নেই।
অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ধূমপায়ীদের সার্জারি করার এক সপ্তাহ আগে ধূমপান বন্ধের কথা বলা হয়। কিন্তু জরুরি অবস্থায় তো তেমনটা করা সম্ভব হয় না। দেখা যায়, সার্জারির আগে ধূমপায়ীদের এ্যানেস্থেশিয়া দেয়ার পর পোস্ট অপারেটিভ জটিলতার হার অনেক বেশি থাকে। সুস্থ হতেও সময় লাগে। আইনে যাই থাকুক, সব থেকে বড় কথা জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা প্রচারের ক্ষেত্রেই জোর দিতে চাই। এ জন্য সরকারি বিজ্ঞাপনে ধূমপানের সতর্কতা বা ভয়ের একটা লাইন যুক্ত করা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল প্রচারে ধূমপান সতর্কতা থাকা উচিত। চিকিৎসকদের ধূমপান ও তামাক পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তাই ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বজায় রেখে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। কাজেই বিদ্যমান আইনের ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ রাখার বিধান বাতিল করতে হবে।