×

জাতীয়

স্যালাইন-প্যারাসিটামল সংকট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫৭ এএম

স্যালাইন-প্যারাসিটামল সংকট

ছবি: সংগৃহীত

৮০ শতাংশ ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু ভর্তির তিন দিনের মধ্যে থেমে থেমে বৃষ্টি বাড়াচ্ছে শঙ্কা

বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই দেশে দেখা দেয় ডেঙ্গুর প্রকোপ। আর তা বাড়তে বাড়তে এখন আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। হাসপাতালগুলোতে দৈনিকই বাড়ছে রোগীর চাপ। মৃতের সংখ্যাটিও অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে দাবি করে মশক নিধনে জোর দেয়া হচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশকনিধন কার্যক্রম চললেও তা খুব একটা কাজে আসছে না।

কীটতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়ের কাজ সময়ে না করার খেসারত দিতে হচ্ছে। এখন শঙ্কা বাড়ানোর ক্ষেত্রে নতুন করে যুক্ত হয়েছে থেমে থেমে বৃষ্টি। তদের মতে, গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে চললেও সেদিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে এ বছর মৌসুমের আগেই তা প্রকট হয়ে উঠেছে।

আগামীর দিনগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস ডেঙ্গু জ¦রের মৌসুম হলেও বর্তমানে প্রায় সারা বছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এ বছর অনেক আগেই ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়েছে। গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু ঢাকার বাইরেও ছড়িয়েছে। এগুলো ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করেছে, আরো বাড়বে। ডেঙ্গুকে বড় সমস্যা হিসেবে ধরতে হবে। ঢাকার পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য কীটতাত্ত্বিকদল, ল্যাবরেটরি, মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। একই সঙ্গে জেলা হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ, রোগী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি চিকিৎসকদল গড়ে তুলতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ভোরের কাগজকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন যে পর্যায়ে আছে- ভালোর দিকে যাওয়ার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। থেমে থেমে বৃষ্টি আরো শঙ্কা বাড়াচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমা হলে সেখানে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এই ডিমগুলো ফুটে লার্ভা, পিউপা ও উড়ন্ত মশায় পরিণত হয়। সিটি করপোরেশনের মশক নিধনের যে কার্যক্রম চলমান আছে- তাতে কতটা সুফল মিলবে?

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বর্তমান যে পরিস্থিতি তা প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সীমিত নেই। এখন সামাজিক আন্দোলন ছাড়া, প্রত্যেক নাগরিকের সম্পৃক্ততা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসায় স্যালাইন, পরীক্ষার জন্য কিটসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পর্যাপ্ত রয়েছে বলে দাবি করা হলেও, অনেক জায়গায় ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যবহৃত স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার সুযোগে ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করছেন কিছু অসাধু বিক্রেতারা। নিরুপায় রোগীর স্বজনরা তা বেশি দাম দিয়েই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

রাজধানীর কয়েকটি ফার্মেসির বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ করে প্যারাসিটামল ও স্যালাইন জাতীয় ওষুধের চাহিদা বাড়লেও কোম্পানির প্রতিনিধিরা চাহিদা অনুসারে ওষুধ দিচ্ছে না। বেক্সিমকো, বায়োফার্মা, পপুলার, লিব্রাসহ অনেক ওষুধ কোম্পানি ডিএনএস স্যালাইন তৈরি করে। স্বাভাবিক সময়ে একেকটি ফার্মেসিতে এ স্যালাইনের চাহিদা থাকে ১০ থেকে ১২টি। কিন্তু বর্তমানে চাহিদা বেড়ে ৪০ থেকে ৬০টি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, আন্দরকিল্লা, জামাল খান, চেরাগী পাহাড় এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে দুই সপ্তাহ ধরে মিলছে না আইভি স্যালাইন। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বন্ধ থাকায় তারাও স্যালাইন পাচ্ছেন না। যদিওবা কোথাও স্যালাইন মিলে সেখানে ৯০ টাকার স্যালাইন আড়াইশ থেকে ৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে এখন স্যালাইনের কোনো সংকট নেই। কিছু দিন আগে কিছু ক্ষেত্রে যে সংকট ছিল তা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। ফার্মেসিতে বাড়তি দামে স্যালাইন বিক্রির বিষয়টি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে জানানো। যাতে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান জানান, তার জেলায় সরকারি-বেসরকারি দুই পর্যায়েই কম বেশি স্যালাইন ও প্যারাসিটামল সংকট রয়েছে। তবে জেলার বাউফলে স্যালাইন সংকট থাকলেও অন্যান্য উপজেলায় সংকট আছে কিনা তা জানাতে পারেননি তিনি।

এদিকে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৫১ জনে। চিকিৎসকরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুরোগীদের অবস্থা খুব তাড়াতাড়ি অবনতি হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ হেমোরেজিক ফিভার ও শক সিনড্রোম। এছাড়া হাসপাতালে দেরিতে ভর্তিও আরেকটি কারণ। যা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মৃতদের ৮০ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে ৩ দিনের মধ্যে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App