×

জাতীয়

নামি প্রতিষ্ঠানেই ভর্তিযুদ্ধ: একাদশে ভর্তি শুরু ১০ আগস্ট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩, ১১:২০ এএম

নামি প্রতিষ্ঠানেই ভর্তিযুদ্ধ: একাদশে ভর্তি শুরু ১০ আগস্ট

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব পদ্ধতি ভর্তি করবে নটর ডেম, হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ

শিক্ষা বোর্ডগুলো আগামী ১০ আগস্ট থেকে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তি আবেদন শুরুর কথা ভাবছে । তবে দেশজুড়ে এত কলেজ ও আসন থাকার পরও প্রতি বছর নামিদামি কলেজেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির লড়াই দেখা যায়। অন্যদিকে অখ্যাত, নামসর্বস্ব কলেজ ও মাদ্রাসা যথারীতি শিক্ষার্থী সংকটে পড়ে। এবার এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে অনলাইনে শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে। অপরদিকে, নিজস্ব পদ্ধতি ভর্তি করবে নটর ডেম, হলিক্রস ও সেন্ট যোসেফ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবারের মতো এবারও জিপিএ-৫সহ ভালো ও মধ্যম মানের ফল করা শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানে তুমুল ভর্তিযুদ্ধ শুরু হবে। আসন সংকট না থাকলেও মানসম্মত কলেজে আসন কম। তবে এই ভর্তিযুদ্ধ থেকে বের করে আনতে এসএসসির পর শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশকে কারিগরি শিক্ষার দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, ভর্তিতে কোনো আসন সংকট হবে না। একাদশ শ্রেণিতে আসন আছে ২৫ লাখের মতো। যা পাস করা শিক্ষার্থীর চেয়ে ৮ লাখ বেশি। তিনি বলেন, এর মধ্যে একাদশে ভর্তির নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যা আজ সোমবার শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। তিনি জানান, খসড়া নীতিমালায় আগামী ১০ আগস্ট থেকে ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে আবেদন শুরুর তারিখ প্রস্তাব করেছি। ভর্তি ফি ওই বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। নীতিমালায় বড় কোনো পরিবর্তন না এলেও কলেজে ফি-তে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে গত শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফল। এবার পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৪ হাজারের বেশি। এখন শিক্ষার্থীদের চিন্তা একাদশ শ্রেণিতে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে। যদিও সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ভর্তিযোগ্য প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ২৫ লাখের মতো। ফলে সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও প্রায় ৮ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির কলেজ শাখা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড একাদশ শ্রেণি এবং বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে কলেজে একাদশ ও মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে। অন্যদিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ক্লাস শুরু হবে এক সপ্তাহ পর, ৭ অক্টোবর।

নীতিমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ১০ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে তিন ধাপে চলবে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া। ২০ সেপ্টেম্বরে মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করে ভর্তির জন্য এক সপ্তাহ সময় দেয়া হবে। ১ অক্টোবর থেকে ক্লাস শুরু করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভর্তির খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে দেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ড এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা পাস করা শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যান্য বছরে পাস করা শিক্ষার্থীরাও ম্যানুয়ালি আবেদন করতে পারবে। বিদেশি কোনো বোর্ড বা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সনদের মান নির্ধারণের পর ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা যে কোনো (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। মানবিক বিভাগ থেকে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে আবেদন করা যাবে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকেও এ দুই বিভাগের একটিতে আবেদন করা যাবে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম কার্যকর হবে।

ভালো কলেজগুলোতে একই জিপিএ পেয়ে ভর্তির সুযোগ পেল, আমি কেন পাইনি- প্রতি বছর এমন অভিযোগ আসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। তাদের দাবি, আমিও জিপিএ-৫ পেয়েছি, যে ভর্তি সুযোগ পেয়েছে সেও জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাহলে আমি কেন ভর্তির সুযোগ পাইনি? এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনালে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে (জিপিএ নয়) ভর্তির মেধাক্রম তৈরি করা হবে। প্রার্থী যেন তার প্রাপ্ত নম্বর মাথায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দের তালিকা দেন। নয়তো জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও অনেকেই প্রথম ও দ্বিতীয় তালিকায় জায়গা পাবে না।

উদাহরণ দিয়ে তারা বলেছেন, ধরা যাক ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে আসন আছে আড়াই হাজার। সেখানে প্রথমেই ভিকারুননিসা থেকে পাস করা ছাত্রীরা অগ্রাধিকার পাবে। এরপর যে সিট ফাঁকা থাকবে তাতে বাইরে থেকে ভর্তি করানো হবে। সেখানে যদি পাঁচশ আসনে বাইরে থেকে ছাত্রী নেয়া হয়, সেই আসনের বিপরীতে ২০ হাজার আবেদন পড়লে সাড়ে ১৯ হাজারই বাদ পড়বে। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট শূন্য আসনের ৯৩ শতাংশ মেধা কোটা হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব শূন্য আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এবং ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীন দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারী সন্তানদের জন্য রাখা হয়েছে। এসব আসনে শিক্ষার্থী না থাকলে তা মেধা কোটায় বিবেচিত হবে। কোটার ক্ষেত্রে আবেদনকারী সংখ্যা বেশি হলে মেধার ভিত্তিতে তালিকা করতে হবে।

পুরো ভর্তি প্রক্রিয়াটি অনলাইনে হলেও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বোর্ডে ম্যানুয়ালি ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। প্রবাসীদের সন্তান বা বিকেএসপি থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বা খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিভাগীয় বা জাতীয় পর্যায়ে অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বোর্ডে ম্যানুয়ালি আবেদন করতে পারবে। এক্ষেত্রে বোর্ড উপযুক্ত প্রমাণপত্র যাচাই-বাছাই করে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা করে দেবে।

২০২৩ সালে একাদশে ভর্তির খসড়া নীতিমালায় ভর্তি ফি গত বছরের মতোই নির্ধারণ করা হয়েছে। একাদশের ভর্তির ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশন চার্জ ও ভর্তি বাবদ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটনে বাংলা ভার্সনে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, ইংরেজিতে ৫ হাজার টাকা; ঢাকার বাইরের মেট্রোপলিটন এলাকায় বাংলা ভার্সনে ৩ হাজার, ইংরেজিতে ৩ হাজার টাকা; জেলা শহরে বাংলায় ২ হাজার, ইংরেজিতে ২ হাজার টাকা এবং উপজেলা/মফস্বল পর্যায়ে বাংলায় ১ হাজার ৫০০ ও ইংরেজিতে ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন ফি গ্রহণ করা যাবে না।

নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটনে বাংলা ভার্সনে ৭ হাজার ৫০০, ইংরেজিতে ৮ হাজার ৫০০; ঢাকার বাইরে মেট্রোপলিটন এলাকায় বাংলায় ৫ হাজার, ইংরেজিতে ৬ হাজার; জেলা শহরে ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা এবং উপজেলা/মফস্বলে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফি আদায়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে রসিদ দিতে হবে। দরিদ্র, মেধাবী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে উল্লিখিত সব ফি যতদূর সম্ভব মওকুফ করতে বলা হয়েছে। সব ফির বিবরণ স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বোর্ডে ঝুলিয়ে দিতে হবে। কোনোভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না।

নির্ধারিত ফির বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান অর্থ নিলে বোর্ডে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক সত্যতা পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অতীতে অনেক প্রতিষ্ঠানের ভর্তির সার্ভার বন্ধ করে রাখা হয়। এবারও তাই হবে।

নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি করবে নটর ডেম, হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ : ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। তবে চার্চ পরিচালিত তিনটি কলেজ হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ এবং নটর ডেম কলেজ নিজের মতো করে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের শিক্ষার্থী নির্বাচিত করে। প্রতি বছরের মতো এবারো এ তিন কলেজ নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি করাবে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস রোজারিও বলেন, হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে প্রতি বছর আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র নির্বাচিত করি। এবারো একই পদ্ধতিতে ভর্তি করানো হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App