×

জাতীয়

রাজপথে মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩, ০৯:৫৩ এএম

রাজপথে মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি

রাজপথে মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি। ছবি: সংগৃহীত

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর আজও মাঠে থাকছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আজ সোমবার সারা দেশে জেলা শহর ও মহানগরে জনসভা পালন করবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তার অংশ হিসেবে বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয়ভাবে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিএনপির দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায় সরকার। আওয়ামী লীগ চায় সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন। এই দুই ইস্যুতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে দুই রাজনৈতিক দলই। এতদিন তাদের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু গত শনিবার রাজপথে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের পর ভিন্ন আলামত টের পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের আশঙ্কা, ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনের পথ ছেড়ে দাবি আদায়ে আবারো সংঘাতের পথই বেছে নিচ্ছে বিএনপি। অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে ২০১৪ সালের অগ্নিসন্ত্রাসের সেই দুঃসহ স্মৃতি। আন্দোলনের নামে আবারো কি রক্তাক্ত হবে রাজপথ? আবারো সেই চলন্ত বাসে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি? আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ তেমনই।

পল্টনের মহাসমাবেশ থেকে গত শুক্রবার ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। আওয়ামী লীগ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রাস্তা বন্ধ না করতে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শান্তি সমাবেশে ঘোষণা দেন, বিএনপি রাস্তা বন্ধ করলে তাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হবে। সরকারি দলও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার স্পষ্টতই জানিয়ে দেন, কোনো দলকেই রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নিতে দেয়া হবে না। এরপর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে আসে। তবে সতর্ক অবস্থানে থাকার ঘোষণা দেয়া হয় ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষ থেকে। অবস্থান নেয় যুবলীগও।

এরপর শনিবার সকাল থেকেই ঢাকার প্রতিটি প্রবেশপথে সতর্ক অবস্থান নেয় সরকার দলীয় সমর্থকরা। টহল জোরদার করে পুলিশ। র‌্যাব ও বিজিবিকেও টহল দিতে দেখা গেছে। পুলিশের বাঁধা উপক্ষো করে বেলা ১১টায় বিএনপি তাদের কর্মসূচি শুরুর জন্য অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। পুলিশ বিএনপি নেতাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। বিএনপি কর্মীরাও অনড় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশের ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ। বিএনপি কর্মীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।

আওয়ামী লীগের কর্র্মীদের সঙ্গেও বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়। সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন কর্মীও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে বেশ কয়েকটি বাসও গাড়িতে আগুন দেয় বিএনপির কর্মীরা। পুলিশের গাড়িতেও হামলা করে তারা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির বেশকয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে। দলটির দুই সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর রায় ও আমান উল্লাহ আমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

জানা গেছে, রাজধানীর মাতুয়াইলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে ৪টি বাসে আগুন দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বিএনপি কর্মীরা পুলিশ ভ্যানে হামলা করে, ভাঙচুর চালায়। তারা বিভিন্ন প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। রাস্তার পাশে থাকা অনেক গাড়িতে হামলা করে। সদরঘাটে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুন দেয়া হয় তুরাগ পরিবহনের একটি বাসেও। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ৭টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে বিএনপি।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাবতলী-উত্তরা ও ধোলাইখালের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে বিএনপির কর্মীরা। একাধিক ককটেল ও হাতবোমারও বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। ধোলাইখালে বিএনপি কর্মীদের হামলায় সূত্রাপুর থানার এসআই নাঈম গুরুতর আহত হন। রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে তাকে দেখতে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নারায়নগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচি থেকেও পুলিশের ওপর হামলা করে বিএনপি কর্মীরা। এতে সিদ্বিরগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা আহত হন। আহত হন ওয়ারী জোনের যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসানও। এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ৪৭ নম্বর

ওয়ার্ডের নেতা মহিবুর রহমানের ওপর বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা হামলা করে বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ। বিএনপি আবার অগ্নিসন্ত্রাসে ফিরেছে বলেও অভিযোগ করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শনিবার বিকালে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্য হয়েছে। বিএনপির এক দফা হলো অগ্নিসন্ত্রাস। তাদের সিদ্ধান্ত ছিল ঢাকার সব প্রবেশ পথ বন্ধ করে তারা অবস্থান নেবে। সেজন্য নেতাকর্মীদের অতিরিক্ত জামা-কাপড়, চাদরসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছিল। লন্ডন থেকে তাদের নেতা এমনও বলেছে- ১টা লাশ পড়লে তারা ১০টা লাশ ফেলবে। লাশ ছাড়া সে কথা বলে না। সে এমনও বলেছে- আন্দোলন করো, টাকার কোনো অভাব হবে না। কাদেরের অভিযোগ, বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাস আবার শুরু হয়ে গেছে। ২০১৩-১৪ সালের নির্মম-নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি শুরু হয়ে গেছে। বিদেশি বন্ধুদের আমরা বারবার বলে আসছি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা ওয়াদাবদ্ধ। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পথে প্রধান বাঁধা বিএনপি- সেটা আবারো প্রমাণ হলো।

অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ বিনা উস্কানীতে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। তাদের দাবি শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। শনিবারের ঘটনার জন্য পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করে তারা। বিএনপি ফের পুরনো মূর্তিতে আভির্র্ভূত হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপি আবারো ‘ভয়ঙ্কর অগ্নিসন্ত্রাস’ শুরু করেছে। তাদের চরিত্র সবার জানা, তারা অগ্নিসন্ত্রাসী। শনিবার আমরা দেখেছি, তারা কতগুলো বাস পুড়িয়েছে। এর আগেও জীবন্ত মানুষকে তারা পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। আমরা তাদের ভয়ঙ্কর অগ্নিসন্ত্রাসী রূপ আবার দেখলাম। বাংলাদেশে যেন এ ধরনের সন্ত্রাসীরা ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবিন নানক বলেন, বিএনপির আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযাগ, মানুষ পুড়িয়ে মারা। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। তারা কোনোদিনই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারবে না। শনিবার ঢাকায় তারা যে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। তা কোনো সভ্য সমাজ মেনে নেবে না। জনগণ যেভাবে তাদের আগেও প্রতিরোধ করেছে, গতকালও করেছে। ভবিষ্যতেও করবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শুক্রবার সমাবেশের নামে গন্ডগোল করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। তাই তাদের নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এজন্য শনিবার তারা আবার আগুনসন্ত্রাসে লিপ্ত হয়েছে। তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, বাস পুড়িয়েছে, মানুষের সম্পত্তিতে আগুন দিয়েছে। তারা যেসব বাস পুড়িয়েছে সেগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস। অনেক কষ্ট করে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে যে মানুষ বাস কিনেছে, সেই বাস তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। অথচ সেই মানুষগুলোর কোনো অপরাধ ছিল না।

তিনি বলেন, এভাবে যারা রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ায়, মানুষের সহায়-সম্পত্তি, স্বপ্নকে পোড়ায়, তাদের বর্জন করতে হবে, তাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। যারা দেশের ভূমি ও সম্পদ বিশ্ববেনিয়ার হাতে তুলে দিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হাতে লড়তে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, রাজনীতিতে সহিংসতা পরিহার করাই উত্তম। যে রাজনৈতিক দল সহিংসতার দিকে যাবে, তারা জনসমর্থন হারাবে। এটি এখন পরিক্ষিত। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আসছেন। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসছেন। সংলাপের সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই সংলাপের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, এটি ঠিক- নির্বাচন নিয়ে সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। সংবিধান একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতর থেকেই সংলাপের মাধ্যমে সংবিধান অনুসরণ করে নিশ্চয়ই একটা পথ বের করা যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App