×

জাতীয়

প্রতিকার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার লাইজু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম

প্রতিকার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার লাইজু

প্রতিকার চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার লাইজু। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর রামপুরা এলাকার বাসিন্দা লাইজু। স্বামীর মৃত্যুর পর ১৪ মাসের পিতৃহারা শিশু সন্তান সানজিদা হোসেন চৈতিকে নিয়ে একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু গুনে ধরা সমাজের কিছু অসভ্য প্রকৃতির মানুষ তার এই ভালো থাকা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, রাজধানীর রামপুরা থানার নুতনবাগ, লোহার গেইট এলাকার মাল্টি প্লাসের ১৩৮৩/৮/১৫/এ (মরিয়ম ভিলা) বসবাস করে আসছে লাইজু। স্বামী মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেনের অকালমৃত্যুর পর তিনি ওই ঠিকানায় স্বামীর রেখে যাওয়া ফ্ল্যাটে ১৪ বছরের একটি কন্যা সন্তান নিয়ে বসবাস করছে। বিগত দিনগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করলেও স্বামীর মৃত্যুর পর লাইজু ও তার সন্তানের উপর নেমে আসে প্রতিবেশীদের অমানুষিক নির্যাতন। তার প্রতি অত্যাচার করার মূল কারণ হচ্ছে, তার স্বামীর রেখে যাওয়া ফ্ল্যাটটি। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টার দিকে কে বা কাহারা লাইজুর ফ্ল্যাট মেইন গেটে তালা ভাঙার চেষ্টা চালায়। তখন লাইজু তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া অবস্থায় ছিলেন। ওই সময় লাইজু ও তার মেয়ে ভয়ে চিৎকার দিলে দুর্বৃত্তরা চলে যায়।

বিষয়টি সকালে লাইজু ফ্ল্যাটের মালিক- বিশেষ করে আতিক, হাসান, আকাশ এবং ল্যান্ড মালিক তামিমকে অবহিত করেন এবং বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দারোয়ান করিম হোসেনকে পরিবর্তন করতে বলেন। এর কারণ হচ্ছে এই দারোয়ান করিম হোসেন এবং তার স্ত্রী সালমা বেগমের বিরুদ্ধে থানায় জিডি এবং পরবর্তীতে মামলা দায়ের করা হয় (রামপুরা থানা জিডি নং ৫৩৪,তারিখ ১০/০৩/২০২৩ ও রামপুরা থানার নন এফআই নং ২৬৫/২০২৩ তারিখ ০৪/০৫/২০২৩) সেই জিডিতে উল্লেখ ছিল দারোয়ান করিম হোসেন এবং তার স্ত্রী সালমা বেগম মিলে লাইজুর সঙ্গে সময়-অসময়ে বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি ও অশ্লীল কথাবার্তা বলতো। তারা ক্রমাগতভাবে স্বামী নেই এমন দুঃখ-কষ্টের মধ্যে একমাত্র মেয়ে সন্তান নিয়ে লাইজুকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।

ওই ভবনের কয়েকজন বাসিন্দার সূত্র থেকে জানা যায়, কতিপয় ফ্ল্যাট মালিকদের ধারণা ছিল- অস্বাভাবিকভাবে নির্যাতন করলে, স্বামীর রেখে যাওয়া সুন্দর একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাবে লাইজু। আর এই সুযোগে ওই বিল্ডিংয়ের কতিপয় ফ্ল্যাট মালিক লাইজুর ফ্ল্যাটটি ‌সহজেই পাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে। এই কৌশল অবলম্বন করে উক্ত স্বার্থবাদী মানুষগুলো লাইজুর পিছনে দারোয়ান করিম হোসেন ও তার স্ত্রী সালমা বেগমকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করে এই ঘটনার জন্ম দিয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে লাইজু ওই দারোয়ান করিম হোসেন এবং তার স্ত্রী সালমা বেগমের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত করিম হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেন এবং ওয়ারেন্ট হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান করিম হোসেনকে সার্বিক সহযোগিতা এবং জামিন করানোর জন্য উক্ত ভবনের একাধিক ফ্ল্যাট মালিক লাইজুর বিপক্ষে গিয়ে দারোয়ানের পক্ষে অবলম্বন করে।

কারণ দারোয়ান করিম হোসেনের ওই কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন দারোয়ান হয় তো বা তাদের নাম বলে দেয়ার আশঙ্কা ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জুলাই লাইজু রামপুরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হয়। লাইজুর উপর প্রতিনিয়ত, অত্যাচার-নির্যাতন কর্মেই বেড়েই চলছে। সে বিষয়টি অবহিত করার জন্য মামলা বা জিডি করার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবহিত করার পরেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পুলিশ প্রশাসন।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়, এসআই মারুফকে তদন্তের জন্য দেয়া হলে তিনি উল্টো লাইজুকে অবাঞ্ছিত ও অবন্তর কথা-বার্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে লাইজু জানান। তবে লাইজু বলেন, পাশের ফ্ল্যাটের মালিক সালেহ অধিকাংশ সময় বলেন আপনার ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে চলে যান। পাশাপাশি বাড়ির মালিক মরিয়ম বেগমও ফ্ল্যাটটি ক্রয় করার ইচ্ছে প্রকাশ করে। লাইজু একটি ফ্লাটের মালিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি ওই ভবনের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তার স্বামীর মৃত্যুর পরে ওই লোকগুলো তার প্রতি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে স্বামীর রেখে যাওয়া এই ফ্ল্যাটটি থেকে উচ্ছেদ পরিকল্পনায় নানা ধরনের আকাঙ্ক্ষা এবং স্পৃহা নিয়ে ওই ব্যক্তিরা বাড়ির দারোয়ান করিম হোসেনকে দিয়ে নাটক শুরু করে এবং অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

লাইজু আইনি প্রতিকার পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বিশেষ র‌্যাব ও থানা পুলিশের কাছে ধরনা দিলে কোন সুফল পায়নি। এভাবে একটি অসহায় মেয়ে লাইজু এবং তার কন্যা সন্তান সানজিদা হোসেন চৈতি জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়া মেয়েটির ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষ করে পুলিশ সুপার (এসপি) পরিচয় দিয়ে লাইজুকে বিভিন্ন কৌশলে ভয়-ভীতি কথাবার্তার কথা লাইজু সাংবাদিকদের জানান।

এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে অসহায় লাইজু এবং তার কন্যা সন্তান নিরাপদ বসবাস করতে পারবে বলে এলাকাবাসীর দাবি। লাইজু এবং তার সন্তানের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি কামনা করছে তারা।

ফ্লাটের মালিক সালেহ জানান, দারোয়ানের ঘটনাটি সত্য, এ বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার দরবার হয়েছে। দারোয়ানকে বের করে দেয়া হয়েছে।

তবে কয়েকজন ফ্ল্যাট মালিকের বিরুদ্ধে লাইজুর ফ্ল্যাট ক্রয় করার প্রস্তাব দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন।

লাইজুর অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা রামপুরা থানার এসআই মারুফ হোসেন জানান, এই বিষয়ে উভয়কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App