থমথমে ঢাকায় নিরাপত্তা জোরদার
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৩, ০২:০৩ পিএম
ছবি: ভোরের কাগজ
সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ বিএনপি অফিসের সামনের রাস্তা। ছবি: ভোরের কাগজ
সাইনবোর্ড এলাকার চেকিং। ছবি: ভোরের কাগজ
সাইনবোর্ড এলাকার চেকিং। ছবি: ভোরের কাগজ
সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছে। ইতোমধ্যে দুই দলকেই তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে। দুই কিলোমিটারের মধ্যে দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। এমন অবস্থায় চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে নগরবাসীর মনেও।
[caption id="attachment_451405" align="aligncenter" width="1367"] সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।[/caption]দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এমন ঘোষণা দিয়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
[caption id="attachment_451398" align="aligncenter" width="1610"] সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ বিএনপি অফিসের সামনের রাস্তা। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]এক দফা দাবি আদায়ে আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠন-যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। এছাড়া সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনকারী শরিক রাজনৈতিক দলগুলো ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করবে। পাল্টাপাল্টি এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসীর মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সমাবেশ ঘিরে সড়কে গাড়ির সংখ্যা কম দেখা গেছে।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
একইদিনে দুই বড় দলের সমাবেশকে ঘিরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে আছে পুলিশ। ইতোমধ্যেই জোরদার করা হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর প্রবেশমুখ সাভারের আমিনবাজারের বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এ সময় তল্লাশিকালে সন্দেহভাজন হিসেবে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।
ভোরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আমিনবাজার এলাকায় আমিনবাজার ২০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালের সামনে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যারিকেড বসিয়ে অস্থায়ী চেকপোস্টে তল্লাশি কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়। পুলিশ সদস্যরা ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে ঢাকার উদ্দেশে আসা যাত্রীবাহী পরিবহন থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি করেন। তারা সন্দেহভাজন যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ যাত্রীদের ঢাকায় আসার কারণ ও পরিচয় জানতে চান।
রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, যথানিয়মেই দূরপাল্লার বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। আর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দূরপাল্লার বাসগুলোও ঢাকায় প্রবেশ করছে। তবে ঢাকা আসা বাসগুলোর মধ্যে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম।
[caption id="attachment_451400" align="aligncenter" width="1599"] সাইনবোর্ড এলাকার চেকিং। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]যাত্রী কম আসার কারণ জানতে শ্যামলী, হানিফসহ বেশ কয়েকটি বাসের চালকদের সঙ্গে কথা হয়। আবুল কামাল নামে শ্যামলী বাসের চালক জানান, গতকাল থেকে ঢাকার প্রবেশমুখে বাসে তল্লাশি করছে পুলিশ। তাই যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এজন্য লোকজন ঢাকা আসছে কম।
মহাখালীতে এনা পরিবহনের হেলপার হেলাল মিয়া বলেন, দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যদি জ্বালাও পোড়াও শুরু হয়, সেই ভয় তাদের মধ্যে রয়েছে। যাত্রীদের মধ্যেও এই ভয় রয়েছে।
তিনি আরও জানান, পথে পথে পুলিশ বাসে তল্লাশি করছে। বিশেষ করে ঢাকার প্রবেশমুখে বেশি তল্লাশি করা হচ্ছে। এ সময় পুলিশ বাসের মধ্যে ভিডিও করছে। এতে যাত্রীদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
[caption id="attachment_451401" align="aligncenter" width="1599"] সাইনবোর্ড এলাকার চেকিং। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]এদিকে রাজধানীর বারিধারা, বিশ্বরোড, বিমানবন্দর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, গুলশান, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, মালিবাগ, বাড্ডা ও বনানী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক কম। ঢাকার সড়ক অনেকটাই ফাঁকা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীতে বিশৃঙ্খলা হতে পারে এমন ধারণা থেকেই নগরবাসী অনেকটা আতঙ্কে আছেন।
গাবতলী এলাকার বাসিন্দা জাবেদ সরকার জানান, সকাল থেকে ওই এলাকায় পুলিশের টহল বেশি দেখা গেছে। এছাড়া আতঙ্কে লোকজন বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। খুব প্রয়োজন হলে তারা দ্রুত কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছেন।
গুলশান ও বনানী এলাকায় দেখা গেছে, এসব এলাকায় র্যাব ও পুলিশের তল্লাশির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিচ্ছে।
রাজধানীতে দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, অবৈধ অস্ত্র ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চেক করা হচ্ছে। তবে মানুষের ভোগান্তির কথা অস্বীকার করেছে পুলিশ।
কাকরাইল, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পুলিশ সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। নাশকতা এড়াতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার সাতটি প্রবেশমুখে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ। গতকাল সকাল থেকে যানবাহন থামিয়ে সন্দেহভাজনদের শরীর-ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। শহরের ভেতরেও স্থায়ী তল্লাশি চৌকিগুলোতে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ডিএমপির পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবহনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার জন্য পরিবহন ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল চলছে এলিট ফোর্স র্যাবেরও।
বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চলাচলও তুলনামূলকভাবে কম। কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঢোকার সময় তল্লাশির কড়াকড়ির খবর পাওয়া গেছে।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, র্যাব-৩ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযান, খুন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা ও কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাব-৩ এর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এলিট বাহিনী হিসেবে অপরাধীদের অপতৎপরতা ঠেকাতে ও জনগণের সার্বিক নিরাপত্তায় র্যাব-৩ এর আওতাধীন এলাকায় রোবাস্ট পেট্রোলসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট মোতায়েন করে গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব-৩ এর এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।