×

জাতীয়

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন ইইউ'র প্রতিনিধিদল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৩, ০৫:১৮ পিএম

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন ইইউ'র প্রতিনিধিদল

ছবি: ভোরের কাগজ

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

এ সময় কয়েকজন আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্যদের কাছে রাখাইন রাজ্যে তাদের ওপর হওয়া নিপীড়নের বর্ণনা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়ার কথাও জানান তারা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে বিমানযোগে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে সড়কপথে তাদের নেওয়া হয় উখিয়ার মধুরছড়া (ক্যাম্প-৪) রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছালে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইইউর মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইয়ামোন গিলমোর।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধিদলটি ক্যাম্প-৪ ও ক্যাম্প-১৮ আশ্রয়শিবিরে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর পরিচালিত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম, ইউনিসেফ পরিচালিত লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত ই–ভাউচার সেন্টার পরিদর্শন করেন। বেলা ১টার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ ইউএনএইচসিআরের কমিউনিটি সেন্টারে অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া একজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, সম্পদ লুটের বিবরণ তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও কথা ওঠে। রোহিঙ্গারা সেখানে বলেন, চীনের মধ্যস্থতায় কিছুদিন ধরে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চলছে। কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। ফিরে যাওয়ার আগে রোহিঙ্গারা প্রথমে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি চান। তারপর মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গারা ফিরতে আগ্রহী।

আরেকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, মতবিনিময় সভায় একজন রোহিঙ্গা নারী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দাতাগোষ্ঠীর সাহায্য কমিয়ে আনার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আগে রোহিঙ্গা পরিবার প্রতি ১০ ডলার করে দেওয়া হতো। এখন আট ডলার দেওয়া হয়। তা দিয়ে রোহিঙ্গা পরিবারের চলতে কষ্ট হচ্ছে। বৈঠকে আশ্রয়শিবিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর সুরক্ষা, রোহিঙ্গা শিশুর পড়াশোনা, নারী শিশু পাচার নিয়েও কথা ওঠে।

মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া আরেক রোহিঙ্গা নেতা জানান, সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনখারাবি-অপহরণ, চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের। তাঁরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।

বেলা দেড়টার দিকে ইইউর প্রতিনিধিদল আশ্রয়শিবিরের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম পরিচালিত রোহিঙ্গাদের কালচারাল সেন্টার পরিদর্শন করেন।

প্রতিনিধিদলে রয়েছেন, ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভেলেক, ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিও ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রিগার-ব্রাউন ও বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক কর্মসূচির তত্ত্বাবধানকারী আনা অরল্যান্ডিনি।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর। গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলটি সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে সরাসরি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। সেখানে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কাযক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজার সৈকত এলাকায় তার কার্যালয়ে (আরআরআরসি) সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধিদলের মতবিনিময় সভা করার কথা রয়েছে। রাতে কক্সবাজারে অবস্থানরত জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবে ইইউ প্রতিনিধিদল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App