×

জাতীয়

ডেঙ্গুতে একদিনের ব্যবধানে দুই অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৭ এএম

ডেঙ্গুতে একদিনের ব্যবধানে দুই অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম নাজিয়া সুলতানার মৃত্যু হয়েছে। গত দুদিন ধরে তিনি রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ৩০তম বিসিএসের মেধাবী এই কর্মকর্তা ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এর আগে ২৩ জুলাই ডেঙ্গুতে মারা যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (পাবলিক একাউন্ট ডিপার্টমেন্ট) কান্তা বিশ্বাস। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। কান্তা বিশ্বাসও ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এক দিনের ব্যবধানে এই দুই অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু ডেঙ্গুর ভয়াবহতা নিয়ে ভীতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। গর্ভবতী নারীদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। তবে এ পর্যন্ত কতজন গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে মারা গেছেন সেই হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাটি আমরা জেলা, লিঙ্গ ও বয়সভিত্তিক আলাদা করছি। তবে গর্ভবর্তী নারীদের মৃতের সংখ্যাটি এখনো আমরা আলাদা করিনি। একদিনের ব্যবধানে দুজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। বিষয়টিও যেহেতু সামনে এসেছে আমি এমআইএসকে অনুরোধ করব যেন এই তথ্যগুলো সুনির্দিষ্ট করে তা সরবরাহ করে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুর এই সময়ে গর্ভবতী নারীরা অন্যদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে জটিলতাও বেশি হতে পারে। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে গর্ভবতী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে গর্ভের শিশুর ক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রভাব পড়ার তথ্য নেই। তবে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে গর্ভবতী নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগটি ওই নারীর থেকে তার গর্ভের শিশুতে ছড়িয়ে পড়ার অশঙ্কা থাকে। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে গর্ভবতী নারীর অতিরিক্ত রক্তপাত, বুকে পানি জমা, যকৃতে সমস্যা হতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, ডেঙ্গুতে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। তবে গর্ভবতী নারীরা রয়েছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। কারণ গর্ভকালীন অবস্থায় প্রাকৃতিকভাবেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল থাকে। কাজেই ডেঙ্গু খুব দ্রুত ওই নারীর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ডেঙ্গু রোগে গর্ভবতীর মৃত্যুর হার অন্যদের তুলনায় ৩ গুণেরও বেশি। তাছাড়া গর্ভবতী নারীদের ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মা ও গর্ভস্থ শিশুর জীবনে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

গর্ভবতী নারীর জটিলতা প্রসঙ্গে এই ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ বলেন, গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে ঘন ঘন বমির কারণে এমনিতেই শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ সময় গর্ভবতী নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অত্যধিক জ্বরে শরীরে আরো বেশি পানিশূন্যতা দেখা দেয়, রক্তচাপ কমে যায়। এর ফলে গর্ভপাত হতে পারে। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় বা তৃতীয় মাসে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে এর ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। এ সময় গর্ভবতী নারীর শরীর থেকে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এর ফলে শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়।

ফলে গর্ভের শিশুর মৃত্যু হতে পারে, অন্যদিকে অসময়ে অপরিপক্ক শিশু প্রসব হতে পারে। তাছাড়া গর্ভবতী নারীর শরীর থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস গর্ভস্থ শিশুর শরীরে সংক্রমিত হয়ে নবজাতকের ডেঙ্গু রোগ দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে মায়ের শরীরে এমনিতেই পানি জমে। যে গর্ভবতী নারীর উচ্চ রক্তচাপ বা প্রি-এক্সামশিয়ায় ভুগছেন, তাদের শরীর থেকে আমিষ বের হয়ে যায়। রক্তের প্ল্যাটিলেট কমে যায়। রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া দুর্বল থাকে। ডেঙ্গুতেও শরীরে এরকম জটিলতা তৈরি হয় বলে গর্ভবতী নারী দ্রুত শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অবস্থায় যদি কোনো গর্ভবতীর প্রসব বেদনা শুরু হয় বা জরুরি অপারেশনের প্রয়োজন হয়, তখন এক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। রক্তের প্ল্যাটিলেট কম থাকার কারণে প্রসবকালীন বা অপারেশন চলাকালীন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে প্রসূতির মৃত্যু হতে পারে। তাই ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলেই গর্ভবতী নারীকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি ডেঙ্গু নিশ্চিত হয়, তবে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App