×

জাতীয়

কাঙাল হরিনাথ শোষিতের জন্য কাজ করে গেছেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১০:১২ পিএম

কাঙাল হরিনাথ শোষিতের জন্য কাজ করে গেছেন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন যে সমগ্র বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত, শোষক ও শোষিত এবং তিনি ছিলেন শোষিতের পক্ষে। এদেশের শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। একইভাবে কাঙাল হরিনাথ শোষিতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন কাজ করে গেছেন। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকালে রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জাদুঘর আয়োজিত ‘কাঙাল হরিনাথ: জীবন-কর্ম ও নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম’ শীর্ষক সেমিনার, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহ-সভাপতি কবি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া। আলোচনা করেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শিশির কুমার রায়। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, কাঙাল হরিনাথ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। কুমারখালীর পবিত্র ও উর্বর মাটি জন্ম দিয়েছে কাঙাল হরিনাথ ছাড়াও গগন হরকরা, মীর মোশাররফ হোসেন প্রমূখের মতো বিদগ্ধ গুণিজনকে। কুমারখালীতে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, ফকির লালন সাঁইজির আখড়া। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কাঙাল হরিনাথ অসচ্ছল এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ততটা শিক্ষিত হতে না পারলেও অবহেলিত গ্রামবাংলায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। নির্লোভ এ ব্যক্তিত্ব পরবর্তীতে সাংবাদিকতা পেশা হিসাবে গ্রহণ করে সমাজের অসহায়, শোষিত, নিষ্পেষিত মানুষের অধিকার আদায়ে ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ শীর্ষক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন যা পরবর্তীতে সাপ্তাহিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, কাঙাল হরিনাথ ১ হাজার গান রচনা করেছেন বলে জানা যায়। এসব গান সংগ্রহ ও গবেষণায় কেউ এগিয়ে এলে তাকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় জাদুঘরের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হবে। আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কাঙাল হরিনাথের মতো মানুষ পৃথিবীতে সবসময় আসে না। সমাজ সংস্কারক ছিলেন তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি সমাজের জন্য যে অবদান রেখে গেছেন তা অপরিসীম। খলিল আহমদ বলেন, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ সম্পর্কে জানতে গেলে এ মহান সংগ্রামী মানুষটি সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি। বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে হলে কাঙাল হরিনাথের জীবন-কর্ম তুলে ধরতে হবে। শিশির কুমার রায় বলেন, গ্রাম বাংলার রেনেসাঁ পুরুষ ছিলেন কাঙাল হরিনাথ। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন অনেক অবহেলিত। এক সময় তিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন। কুমারখালিতে কাঙাল হরিনাথ জাদুঘর নির্মাণের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় এসেছেন। মূল প্রবন্ধে কামরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, কাঙাল হরিনাথ শুধুমাত্র ‘কাঙাল’ এবং ‘গ্রামীন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ’ পরিচয়ে পরিচিতি পেলেও তার কার্য পরিধি ও কর্ম স্বীকৃতি বিশাল ক্যানভাসে তেমনই একজন মহামানব, যিনি নিঃস্বার্থ নির্মোহ এক জনমের সবটুকু উৎসর্গ করেছেন মানুষের জন্য, সমাজের কল্যানের জন্য। সেই সমাজ, সেই মানুষ হয়তো কখনো কখনো তার যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারে না। হয়তো সেই আক্ষেপ, সেই বেদনা জীবনকালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে নীরবে ক্ষয় করেছে, মন মন্ত্রণায় বিদ্ধ করেছে। তিনি নিজেকে এক প্রকার সরিয়ে নিয়েছিলেন সমস্ত জাগতিক বিষয়বস্তু থেকে একাকীত্বের নিমগ্নতায়। মো. কামরুজ্জামান বলেন, গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হরিনাথ মজুমদার ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। আলোচনা শেষে একক সংগীত পরিবেশন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সংযুক্তা দাস। শিল্পী গেয়ে শোনান ‘দাড়িয়ে আছো তোমার গানের ওপারে’, ‘গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে’, ‘এই কথাটি মনে রেখো’, ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে’, ও ‘আমার দেশের মাটি তো পরে ঠেকাই মাথা’।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App