×

জাতীয়

ফের মুখোমুখি দুই দল, বাড়ছে উত্তাপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৩, ০৯:১৩ এএম

ফের মুখোমুখি দুই দল, বাড়ছে উত্তাপ

ফাইল ছবি

‘মহাসমাবেশ’ বনাম ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ’

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে আছে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল। পালন করে আসছে ধারাবাহিক কর্মসূচি। আগামী ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলটির কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার সমাবেশ করে আসছে ক্ষসতাসীন আওয়ামী লীগও। গত ১২ জুলাই নয়াপল্টন ও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আলাদা সমাবেশ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলেও জনভোগান্তি ছিল চরমে। দুই দলের কর্মীদের মিছিলের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। বিরক্ত হয়ে পায়ে হেঁটেই চলাচল করতে দেখা গেছে অনেককে।

১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকায় দুই দলের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসেন। একইদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগও শান্তি সমাবেশ পালন করে। বিএনপি তাদের সমাবেশ থেকে ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।

একইদিন ঢাকায় ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশের ঘোষণা দেয় যুবলীগ। ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগও এই সমাবেশে অংশ নেবে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ও পশ্চিম গেটে এই সমাবেশ করবে তারা। সমাবেশে বড় জমায়েতের টার্গেট নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের এই সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়া ঢাকার পাড়ায়-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে মহানগর আওয়ামী লীগ। গতকাল রবিবার ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক যৌথসভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা গেছে।

একইদিনে পাশাপাশি দুই দলের এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সমাবেশ ঘিরে দুই দলেরও নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যেও উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ বলছে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে সরে বিএনপি পুরনো চেহারায় ফিরছে। তাদের নেতাদের বক্তব্য উত্তেজনাপূর্ণ- যা সহিংসতার দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। এরকম কিছু করার চেষ্টা হলে বিএনপিকে রাজপথেই

কঠিন জবাব দেয়া হবে। আর বিএনপি বলছে, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিএনপিও কোনো ছাড় দেবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন তাদের নেতারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনী বছরে দুই দল তাদের শক্তিমত্তা দেখাবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে এতে বড় ধরনের কোনো সংঘাত বা সহিংসতা সৃষ্টির তেমন আশঙ্কা নেই।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপি ক্রমাগত উশৃঙ্খলতা ও নাশকতার দিকেই হাঁটছে। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলে যে কর্মসূচি শুরু করেছিল সেখান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালের মতো রূপ নিতে যাচ্ছে তাদের উশৃঙ্খলতা। আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কোনো ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবে না। আমাদের যে ধারাবাহিক কর্মসূচি উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শান্তির সমাবেশ করছি, তারই অংশ হিসেবে ২৭ জুলাই ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ আমরা করব।

তিনি বলেন, বিএনপি এখন পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার চেষ্টা করছে। তবে আমরা তাদের কোনো ফাঁদে পা দেব না। আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে সেরকইমই নির্দেশনা দেয়া আছে। বিএনপি উশৃঙ্খল আচরণ করছে। তাদের চেহারা ও কথাবার্তায় সেটা ফুটে উঠেছে। মহাসমাবেশের নামে তারা যে কোনো নাশকতা করতে পারে। সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছি না। আমাদের কর্মীরা অহেতুক আক্রমণকারী হবে না। কিন্তু বিএনপি যদি আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে সেটার জবাব তারা পাবে।

বিএনপি তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই পালন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা। এক দফা দাবিতে তাদের যে আন্দোলন- এই আন্দোলনকে তারা আরো বেগবান করার ঘোষণা দিয়েছেন। দলটির নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ তাদের সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগ বরাবরই পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে গণতন্ত্র ও দেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করছে। তারা দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যেতে চায়। আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এসব কর্মসূচিতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে আর আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে দেশকে সংঘাতের পথে নিয়ে যাচ্ছে। উসকানি দিচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগের মূল চরিত্র উন্মোচন হচ্ছে। এটা বলতে দ্বিধা নেই- তারা সন্ত্রাস, ভয় দেখানো, আক্রমণ ও হামলায় অত্যন্ত পারদর্শী। তবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি যদি তারা নস্যাতের চেষ্টা করে, আমরাও কোনো ছাড় দেব না।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের বছরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ শক্তিমত্তা দেখাতে চাইবেই। একইদিনে দুই দলের সমাবেশকে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হিসেবেও দেখছেন না তারা। আইন বা সংবিধানের মধ্য থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, একইদিনে দুই দলের সমাবেশকে পাল্টা কর্মসূচি বলতে চাই না। নির্বাচনের বছরে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের শক্তিমত্তা দেখাতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা যদি আশা করি নির্বাচনের বছর তারা শুধু সেমিনার করবে; সেটা করলে তো হবে না। তবে সব পক্ষ যতক্ষণ পর্যন্ত আইন বা সংবিধানের গণ্ডির মধ্যে থেকে তাদের কর্মসূচি পালন করবে- ততক্ষণ সেটাকে স্বাগত জানাতে হবে।

তিনি বলেন, সমাবেশ ঘিরে আগে থেকে ভীতি ছড়ানোর কোনো দরকার নেই। যতক্ষণ না পর্যন্ত সহিংসতা শুরু করছে বা কেউ কাউকে দেখে নেয়ার মতো অবস্থা তৈরি করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে জনমনে কোনো আশঙ্কা নয়, একটা অস্বস্তি দানা বাঁধছে। আমাদের রাজনীতিবিদদের নিজের ভালোটা বোঝার বুদ্ধিটুকু আছে। কী করলে নিজেদের ভালো হবে, সেটা মাথায় রেখেই তারা অবাস্তব কোনো কর্মকাণ্ডের দিকে যাবে না। ২০২৩ সালে এটা কোনো পক্ষকেই সুবিধা দেবে না। এটা তারা বুঝতে পারেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App