×

জাতীয়

জেপি নেতা সালাম হত্যা: কিলার নয়নকে খুঁজছে পুলিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৩, ০৩:৫৭ পিএম

জেপি নেতা সালাম হত্যা: কিলার নয়নকে খুঁজছে পুলিশ

আব্দুস সালাম বাহাদুর ও আকাশ আহম্মেদ নয়ন। সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

জাতীয় পাটি (জেপি) কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক আব্দুস সালাম বাহাদুর হত্যাকাণ্ডে মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তারকৃত চাঁদনী ও তার মা মমতা বেগমসহ ৩ জনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ।

রিমান্ডের দ্বিতীয় (শনিবার) দিনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক আক্তারুজ্জামান নিশ্চিত করেন। সেই সঙ্গে কিলার নয়নসহ তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।

পুলিশ জানায়, ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর সালাম খুনের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। মৃত্যুর আগে তাকে কথিত বান্ধবী চাঁদনী ও তার সহযোগীরা মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। এতে নেতৃত্ব দেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গাজিন্দা বড় পাড়া গ্রামের মৃত ইদু চোরার ছেলে আকাশ আহম্মেদ নয়ন (৪৫)।

সূত্র জানায়, গত ১৫ জুলাই বিকেল ৩টা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের গাজিন্দা গ্রামের চাঁদনীর বাড়িতে সালাম বাহাদুরকে আটকিয়ে চালানো হয় নির্যাতন। চাঁদনীর পৈত্রিক নিবাস বরিশাল জেলায়। প্রায় ৪ বছর আগে এখানে জমি কিনে বাড়ি করেন। থাকতেন মা, বাবা ও ভাইবোন নিয়ে। এরই মধ্যে একাধিক বিয়ে করে বিভিন্ন পুরুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে হাতিয়ে নিতেন মোটা অংকের টাকা পয়সা। আর এসব অপকর্মের শেল্টার দিয়ে টাকা পয়সার ভাগ নিতেন আকাশ আহম্মেদ নয়ন।

সূত্র আরো জানায়, জেপি নেতা সালাম হত্যাকাণ্ডের আগে চাঁদনী টোপ দিয়ে তাকে গাজিন্দা গ্রামে এনে ঘরের ভিতরে আটক করেন। তার সাথে নয়ন ও তার সহযোগী হজ ডাকাত, সুলতান, শরিফ, জসিম, রুবেল ও পিন্টু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দফায় দফায় নির্যাতন চালায়। সালামের কাছ থেকে নেয়া হয় ৭ লাখ টাকার চেক ও সাদা ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর। এর মধ্যে বাস্তা বাসস্ট্যান্ডের পল্লী চিকিৎসক মোশারফকে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। এরপর তার হাত ভেঙ্গে দেয় তারা। অব্যাহত নির্যাতনের ফলে সালাম পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন তারা। চাঁদনীসহ আরো ২ জন আহত সালামকে নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। তবে পথেই মৃত্যু হয় সালামের। এক পর্যায়ে চাঁদনী ও তার সহযোগীরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। পরে নিহতের ছোট ভাই আব্দুল করিম খলিফা বাদী হয়ে শেরে-বাংলানগর থানায় অজ্ঞাত আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিহত সালাম বাহাদুরের বাড়ী পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকান্দি গ্রামে। তিনি ঢাকার ধানমন্ডির ২৭ নাম্বার রোডের ৩৫/এ বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করতেন। রাজনীতির পাশাপাশি সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠিকাদার ও গার্মেন্টস এক্সসোরিজ ব্যবসা করতেন তিনি।

গ্রামবাসীদের দাবি, ডাক নাম নয়ন হলেও তার সাথে আকাশ আহম্মেদ যোগ করে গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বাহিনী। ইতোপূর্বে স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তার স্বামী ডা. মঈন আহম্মেদকে মারধর ও গাড়ি ভাংচুর করে নয়ন ও তার সহযোগীরা। ডা. মঈন থানায় অভিযোগ করে প্রতিকার পাননি। এছাড়াও তার ধারাবাহিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন বাড়ি ছাড়া ছিলেন প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম ছাহিমের পরিবার। এরপর থেকেই নয়নের অপকর্মের ধারাবাহিকতা বেড়েই চলছে।

ধল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, নয়নকে উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক পদ দেয়ার কথা শুনে ইতিপূর্বে আমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভা বর্জন করেছি। নয়নের এমন অপকর্মের দায়ভার আওয়ামী লীগ নিতে পারে না বলেও জানান তিনি।

সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান শহিদ বলেন, উপজেলা কমিটিতে খসড়া তালিকায় তার নাম থাকলেও চুড়ান্ত তালিকায় নেই। কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায়ভার দল নিতে পারে না বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ বেগমের কাছে নয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুদে বার্তায় বলেন, আমিতো জানি ধল্লার কিছু তোমাদের মতো নামিদামী সাংবাদিক এদেরকে দিয়ে জমি দখল বিদেশ ফেরতসহ অন্য এলাকা থেকে কোনো লোক আসলে চান্দাবাজি করায়ে ভাগ করে নেয়াটাই এখন প্রধান আয়ের উৎস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App