×

জাতীয়

জনবল সংকটে ঢাকার ৫ পাসপোর্ট অফিস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:০০ এএম

জনবল সংকটে ঢাকার ৫ পাসপোর্ট অফিস

প্রতীকী ছবি

বেড়েছে গ্রাহকসেবা > যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেন আনসার সদস্যরাও

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের মধ্যে নেয়া ১০ বছর মেয়াদি মেগা প্রকল্পের মধ্যে ২০১৮ সালে চালু হয় ই-পাসপোর্ট প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের মাধ্যমেই পাসপোর্ট অধিদপ্তর সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় মেগাসিটি ঢাকাবাসীদের নির্বিঘেœ পাসপোর্ট সেবা দিতে বর্তমানে পাঁচটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যদিও আগে শিডিউল বিপর্যয় থাকলেও তা এখন পুরোপুরি শূন্যের কোটায়।

এখন ই-পাসপোর্ট কিংবা এমআরপি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষে রি-ইস্যুর জন্য যারা আবেদন করছেন তারা দু-একদিনের মধ্যেই পাসপোর্ট জমার তারিখও পেয়ে যাচ্ছেন। অথচ কিছুদিন আগেও এর জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। ই-পাসপোর্টের আবেদন অনলাইনে জমার পর নির্ধারিত তারিখে আবেদন সরাসরি জমা দেয়া, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি তোলার জন্য পাসপোর্ট অফিসের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। আবেদনকারীরা নির্ধারিত কাউন্টারগুলোতে ফরম জমা দিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি তুলে চলে যাচ্ছেন নিমিষে। এটা বর্তমানে শুধু আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের চিত্র নয়, রাজধানীর পাঁচটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে। এছাড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস হওয়ার কারণে চাপ কমেছে আগারগাঁওয়ে।

সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস এবং আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্বস্তিতে আছেন সেবাগ্রহীতারা। যারা পাসপোর্ট করাতে ভোগান্তি মনে করতেন তারা নিজেরাই পাসপোর্টের ফরম পূরণ করে নির্ধারিত তারিখে এসে সব কাজ শেষ করছেন। কোনো দালাল ও ঝামেলা ছাড়াই মিলছে পাসপোর্ট।

তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসের পরিসর বাড়লেও জনবল সংকটের কারণে বাড়তি চাপ পড়েছে কর্মকর্তাদের ওপর। আনসার সদস্যদের দিয়েও চালানো হচ্ছে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। এছাড়া বিভিন্ন সময় সার্ভারডাউন থাকার কারণে টাকা জমা দেয়া এবং জমা দিতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়তে হয় সেবাগ্রহীতাদের। এই সমস্যা সমাধান করতেও সেবাগ্রহীতাদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। নির্ধারিত তারিখে জমা দিতে না পারলে আবার তারিখ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার শরণাপন্ন হয়ে পাসপোর্ট জমা দিতে পারছেন সেবাগ্রহীতারা।

সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দেয়ার জন্য প্রথমেই টোকেন দেয়া হচ্ছে। তারপর লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে ছবি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার জন্য নির্ধারিত কক্ষে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কোনো ভুল বা সংশোধন থাকলে তা তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে লোকবল স্বল্পতার কারণে সেখানে কিছুটা স্থবিরতা দেখা গেছে। এছাড়া আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করতে দেখা গেছে আনসার সদস্যদেরও।

ঠিক একইভাবে পাসপোর্ট প্রিন্ট হওয়ার পর নিতে আসাদের ভবনের দোতলায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সেখানেও টোকেন নিয়ে সিরিয়াল ধরতে হচ্ছে। সেই টোকেনে থাকা নির্ধারিত নম্বর এলে নির্ধারিত জায়গায় স্বাক্ষর দিয়ে নিজেদের পাসপোর্ট নিচ্ছেন। এছাড়া যারা উপস্থিত হতে পারছেন না তারা প্রত্যয়নপত্র এবং যিনি নিতে গেছেন তার পরিচয়পত্র দেখালে উল্লিখিত ব্যক্তির পাসপোর্ট নিতে পারছেন।

আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আগে যেখানে পাসপোর্ট করতে আসা কিংবা পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতাদের দীর্ঘলাইন প্রধান সড়কে গিয়ে ঠেকত, তা এখন আর দেখা যায় না। কারণ আগে রাজধানী ঢাকার সবার পাসপোর্টের আবেদন করতে হতো আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট কার্যালয়ে। বর্তমানে আঞ্চলিক পাসপোর্ট সেবা চালু হওয়ায় চাপ কমেছে আগারগাঁওয়ে। যে যে থানা এলাকার বাসিন্দা সেই থানা এলাকা যে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস রয়েছে, সেখানেই ফরম জমা দিচ্ছেন। তবে জনবল সংকটের বিষয়টি এখানেও স্পষ্ট।

দক্ষিণ খানের বাসিন্দা শবনম ফারিয়া নির্ধারিত তারিখে আবেদনপত্র জমা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে পাসপোর্ট নিতে উত্তরা পাসপোর্ট আঞ্চলিক কার্যালয়ে যান। তিনি বলেন, আগে পাসপোর্ট করার জন্য আগারগাঁও যেতে হতো, এখন উত্তরাতে করেছি। আর নির্ধারিত তারিখের আগেই আমি পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি।

উত্তরার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, উত্তরায় পাসপোর্ট আঞ্চলিক কার্যালয় হওয়ায় আমাদের অনেক ভালো হয়েছে। এখন আর কষ্ট করে আগারগাঁও যেতে হবে না। তবে জনবল কম হওয়ায় এখানে কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি। লোকবল বাড়ালে সেবা নিতে আসাদের সময় অনেকটা বাঁচবে।

রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট নিতে যাওয়া খুশবু মরিয়ম ভোরের কাগজকে বলেন, আগে রাজধানীর সবার পাসপোর্ট করার জন্য আগারগাঁও আসতে হতো। এখন আরো পাঁচটি অফিস হয়েছে, সেজন্য এখানে চাপ অনেক কম দেখতে পেয়েছি। তবে আগের মতো ভিড় না থাকলেও কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। আর এখনো আনসার এবং দালালদের আনাগোনা দেখতে পাচ্ছি। আমি বলব, আনসার বা দালাল ধরার কোনো প্রয়োজন নেই। অনলাইনে ফরম পূরণ করে সরাসরি নির্ধারিত আঞ্চলিক কার্যালয়ে এসে পাসপোর্টের কাজ সম্পন্ন করবেন।

ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকায় পাঁচটি আঞ্চলিক কার্যালয় হওয়ায় আগে পাসপোর্টের জন্য যে ঝামেলা পোহাতে হতো তা অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই পাসপোর্ট প্রিন্ট করে গ্রাহকদের এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, পাসপোর্টের সার্ভারজনিত সমস্যার কারণে অনেক সময় টাকা জমা দেয়ায় বিঘ্ন ঘটে। এছাড়াও জমা দেয়ার ক্ষেত্রেও সার্ভারজনিত সমস্যায় পড়তে হয়। এসব সমস্যার সমাধানে আমাদের টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে।

উত্তরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক আল আমিন মৃধা ভোরের কাগজকে বলেন, ১০টি ওয়ার্ক স্টেশন। প্রতিদিন এখানে আটশোর অধিক আবেদনপত্র জমা হয়। সীমিত জনবলের মধ্য দিয়েও পাসপোর্ট গ্রহণকারীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বায়ো-এনরোলমেন্ট করতে আসা নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলছি। এমনকি যদি কারো আচরণ সন্দেহজনক হয় বা রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা এই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছেন।

নামে যাত্রাবাড়ী হলেও অবস্থিত কেরানীগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক ইসমাইল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, জনবল সংকটের মধ্যে কাজ করছি তবে আশা করি আমাদের এ সংকট খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হবে। মোহাম্মদপুরের বসিলা পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, আমার এখানে ওয়ার্ক স্টেশন রয়েছে ১১টি। কিন্তু জনবল সংকটের মধ্যে দিয়েই প্রতিদিন আমাদের সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এ অফিসে প্রতিদিন প্রায় ছয়শোর মতো আবেদন জমা হয়।

আফতাবনগর পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ অফিসে ১৫টি ওয়ার্ক স্টেশন থাকলেও জনবল সংকটের কারণে কাজ করছে ৭টি। এ সমস্যার সমাধান হলে আরো বেশি পাসপোর্ট গ্রাহকদের সেবা দিতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App