×

জাতীয়

জেয়া, লু’র গুরুত্বপূর্ণ কী কথা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

জেয়া, লু’র গুরুত্বপূর্ণ কী কথা

রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা > সিরিজ বৈঠক আজ

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে শক্তিশালী মার্কিন প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছেছে। এরপর থেকেই ঢাকায় নতুন করে উত্তাপ ছড়াতে থাকে। তাদের এই সফরের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী হবে, নির্বাচন ঠিকঠাক মতো হবে কিনা, আওয়ামী লীগ সরকার থাকবে না বিদায় নেবে- এমন জল্পনা-কল্পনা চলছে। এরই মধ্যে উজরা জেয়ার এক টুইট, ‘গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনের জন্য অপেক্ষায় আছি’- এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সবমিলিয়ে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কী কথা বলেন উজরা জেয়া- সেদিকেই নজর সবার। এরআগে গতকাল প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসেছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ ও প্রত্যাবাসন সম্পর্কে জানতে চেয়েছে দলটি।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন উজরা জেয়া। পাশাপাশি তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। এমনকি রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। আজ সফরের ব্যস্ততম দিন কাটাবে প্রতিনিধি দলটি। এদিন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবেন তারা। সফরকারী দলটি সকালে সরকারি এবং বিকালে শ্রমিক নেতা ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দিনভর বৈঠকে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অগ্রগতি, নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, রোহিঙ্গা সমস্যা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন (ডিএসএ), আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে সহায়তা নেয়ার ব্যাপারসহ চীন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের এ সফরে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের বিষয়টি সামনে আসতে পারে। তবে এ ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ককেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে দেশটির প্রতিনিধিদল ভারত সফর শেষ করে বাংলাদেশে আসে। প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলি কৌর অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। দলটি ঢাকায় পৌঁছেই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

এর আগে, দিল্লি সফর শেষে ঢাকায় আসার কয়েকঘন্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এক টুইটবার্তায় বলেন, বাংলাদেশে আমার প্রথম সফর। এই সফরে সরকারি কর্মকর্তা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনের জন্য অপেক্ষায় আছি। মঙ্গলবার রাতে এই টুইটের পর বুধবার সকালে আরেক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, বাংলাদেশে থাকতে পেরে রোমাঞ্চিত। উষ্ণ স্বাগতমের জন্য ধন্যবাদ। এরআগে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

গতকাল বুধবার দিনভর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি। এদিন সকাল ৯টায় উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল বিশেষ বিমানে করে কক্সবাজারে পৌঁছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিনিধিদলটি উখিয়া বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করে। পরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতার বাইরে নিউট্রিশন সেন্টার, কালচারাল মেমোরি সেন্টার ঘুরে দেখে ও কক্সবাজারে কর্মরত প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। বিকেলে কক্সবাজারে সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ঢাকা ফিরে আসেন আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। কক্সবাজার সফরে তাদের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থী বিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়েসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল ছিল।

জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, সফরকারী মার্কিন প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা অবনতির কারণ এবং প্রত্যাবাসন নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা অবনতির কারণ সম্পর্কে আমরা বলেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য কমিয়ে দেয়ায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি রোহিঙ্গাদের খাবার সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে ক্ষুধার যন্ত্রণায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রোহিঙ্গাদের খাবারের জন্য অর্থ সহায়তা বাড়িয়ে দিতে বলেছি। পাশাপাশি প্রত্যাবাসন সম্পর্কে আগে যা বলেছি এখনও তাই বলছি। জবাবে মার্কিন প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফরকারি দলটি দেখা করবে। এসময় তারা রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সাহায্য বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে। কত টাকা বাড়িয়ে দেবে তা ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তবে সফরকারী দলটিকে বেশ আন্তরিক মনে হয়েছে। ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কথা বলেছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য নতুন মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর এবারই যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ঢাকায় সফরে এলেন। চার দিনের সফরে এলেও আজ বৃহস্পতিবারই মূল বৈঠকগুলো হবে। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন তারা। তারপর রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবে প্রতিনিধি দল। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, উজরার সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অগ্রগতি, নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও রোহিঙ্গা সমস্যা মূল ফোকাসে থাকার আভাস রয়েছে। থাকবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার মূল বৈঠকটি হবে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির আন্ডার সেক্রেটারির ঢাকা সফরে তাই আলোচনার টেবিলে থাকবে নির্বাচন প্রসঙ্গ। এক্ষেত্রে ওয়াশিংটন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার প্রক্রিয়া ঢাকার কাছে জানতে চাইতে পারে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক বলেন, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন প্রসঙ্গ আনবে। তবে নির্বাচন প্রসঙ্গে কোনো বিষয়গুলো জানতে চায়, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তারা কোনো তথ্য দেয়নি। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন দলটি নির্বাচন প্রসঙ্গ তুললে সরকারের সংশ্লিষ্টরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়ে প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করবেন। এক্ষেত্রে সর্বশেষ বাংলাদেশের যেসব সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তার চিত্র তুলে ধরা হতে পারে। এরআগে গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়। এ সফরের সময় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তার মধ্যে নির্বাচনের প্রসঙ্গও আসতে পারে।

দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে উজরার বৈঠকে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো পাঠ দেয়া হয়েছে কিনা তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে। যদিও নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠেছিল কিনা তা স্পষ্ট হয়নি। মে মাসে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করলে রাজনীতিতে হইচই পড়ে যায়। অন্যদিকে এ ইস্যুতে রাশিয়া, চীন ও ভারতের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভিন্ন। তারা মনে করে নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে দিল্লি সফরের সময় ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে নতুন ভিসানীতির কারণ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। এতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসে।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের ঘোষণার কথাই বলব। তিনি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছেন। এর উদ্দেশ্য হলো একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান করা। আমরা মনে করি, এমন নির্বাচন প্রতিটি গণতন্ত্রের বিকাশ ও উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা সফর নিয়ে উজরা বলেন, ঢাকা সফরে আমরা সরকারের সঙ্গে অনেক ইস্যুতে আলোচনা করব। এদের মধ্যে মানবিক সহযোগিতা ও নির্বাচন প্রক্রিয়া থাকবে। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বিষয় থাকবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনে শ্রম অধিকার ও সভা সমাবেশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়। ইন্দো প্যাসিফিক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিককে আরো সমৃদ্ধ, নিরাপদ, সংযুক্ত, অংশগ্রহণমূলক, স্থিতিশীল করতে কোয়াডের মতো নতুন নতুন গ্রুপের মাধ্যমে আমাদের ভারতীয় বন্ধুদের সঙ্গে অভিন্ন পদ্ধতি ও প্রতিশ্রæতি শেয়ার করি। আমাদের কূটনৈতিক আলোচনা নিয়ে খুব বেশি বিস্তারিত বলব না। তবে অবশ্যই এটি আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা আমাদের উভয় সরকারের জন্য শেয়ার করার বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App