×

জাতীয়

নির্বাচন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জানতে চাইল ইইউ দল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৩, ০১:১৮ এএম

নির্বাচন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জানতে চাইল ইইউ দল

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ছয় সদস্যের নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল দিনভর একের পর এক বৈঠকে নির্বাচনী তথ্য জেনে নিয়েছে। এমনকি নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা আছে কিনা- তাও জানতে চেয়েছে। সিরিজ বৈঠকে তারা কথা বলেছে কম, শুনেছে বেশি এবং যা শুনেছে তা তাদের নোটখাতায় লিখে নিয়েছে। জানার জন্য যে অংশে প্রশ্ন করা দরকার শুধু সেই অংশে প্রশ্ন করেছে। এর বাইরে দলটির সদস্যরা নীরব ছিলেন। সবকটি বৈঠক শেষে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে। প্রসঙ্গত, আজ সফরকারী দলটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধিদলের বৈঠক দিয়ে সফরকারী দলটি দিন শুরু করে। এরপর মানবাধিকার কমিশন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর এবং বিকালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করে। সফরের প্রথমদিন গত রবিবার ইইউ প্রতিনিধিদল কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকায় এসেছে ইইউ প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের নেতা চেলেরি রিকার্ডো এবং সদস্য মেরি-হেলেন অ্যান্ডারলিন রবিবার সকালে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় সফরকালে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। তারা নির্বাচনী পরিবেশ যাচাই করবেন। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা- প্রতিনিধিদল সে বিষয়ে সুপারিশ করবে। এর আগে গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব আসাদ আলম সিয়ামসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে তারা বৈঠক করেন। বৈঠক চলে ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত।

নির্বাচন নিয়ে সহিংসতার কোনো আশঙ্কা আছে কিনা- জানতে চায় ইইউ দল : আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার কোনো আশঙ্কা আছে কিনা, তা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পর্যবেক্ষক দলটি। বৈঠক শেষে এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা আছে কিনা- তা কমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কমিশনের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক দলকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়নি। এ নিয়ে কমিশনকে কোনো প্রশ্নও করা হয়নি। তবে বৈঠকে সবধরনের মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তার ব্যক্তিগত ধারণা, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে পারে।

পুলিশের সঙ্গে ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক : বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। বৈঠকের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক কামরুল আহসানের সঙ্গে দেখা করেন ইইউর প্রতিনিধিদল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইইউ দূতাবাসের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রাইগার-ব্রাউন, সফররত ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান রিকার্দো চিল্লেরি, ইইউ প্রতিনিধিদলের সদস্য মারি হেলেন জে.পি. এন্ডারলিন, দিমিত্রি লোনানু, ক্রিশ্চোফার শ্যামনে, ক্রিটিনা দস রামোস আলভেস এবং ইয়ান জেমস মিলার। তবে পুলিশের সঙ্গে ইইউর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কী বিষয় আলোচনা হয়েছে তা জানাতে পারেনি সূত্রটি।

নির্বাচনে ৬ সপ্তাহ পার্বত্য অঞ্চল পর্যবেক্ষণে রাখতে চায় ইইউ : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয় সপ্তাহ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে আসা ছয় সদস্যের নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, তারা আমাদের কাছে সহায়তা চাচ্ছে। আমরা বলেছি সব ধরনের সহায়তা দেব। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় যাওয়ার বিষয়ে বলেছে। এ বিষয়টি দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আমরাও দেখি। আমাদের দিক থেকে সব সাপোর্ট দেয়ার বিষয়ে বলেছি। নির্বাচনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং তাদের থাকা, পরিদর্শন করা বা চলাচল করার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা আমরা দেব। আরেকজন জানতে চান, ২০০৮ সালে তারা যখন এসেছিলেন তখন ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছিলেন এবারো পাবেন কিনা? আমরা বলেছি ২০০৮ সালের চেয়েও ভালো এনজয় করবেন। কারণ ২০০৮ সালে যোগাযোগব্যবস্থা ততটা মসৃণ ছিল না। ওখানে গেলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, আমরা বলেছি এটা যেহেতু নির্বাচনকেন্দ্রিক এটি নির্বাচন কমিশন দেখবে। এটার সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত না। আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা নির্বাচনের আগে ছয় সপ্তাহ পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা অবজারভে রাখতে চায়। তারা নির্বাচনের সময় আসবে। আমরা বলেছি সেটি নির্বাচন কমিশন দেখবে। আর আমাদের দিক থেকে অনুরোধ করেছি এটা যেহেতু বিশেষ তিনটি জেলা সেখানে কিছু নিরাপত্তার ইস্যু আছে। যদিও এখন আগের চেয়ে অনেক অনেক ভালো পরিবেশ। আমরা তাদের ব্র্রিফ করেছি যে তিনটি জেলায় ২৬টি উপজেলা, ১২২টি ইউনিয়ন এবং প্রশাসনিক বিষয়ে। তারা খুবই সন্তুষ্ট। তিনি জানান, সরকারের আমন্ত্রণে তারা এসেছে, নির্বাচন বিষয়ে অবজারভার হিসেবে এসেছে এটিই তাদের উদ্দেশ্য। আমরা বলেছি এটা যেহেতু তাদের নির্বাচনকেন্দ্রিক ভিজিট এটি তারা নির্ধারণ করবে। এটি আমাদের পার্ট না। তারা কবে ভিজিট করবে সেটি জানাননি। আমরা বলেছি তারা আমাদের মেহমান সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগিতা আমরা করব। সেখানে তারা কী করবে না করবে সেটি দেখবে নির্বাচন কমিশন। আমরা তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছি- এখানে স্থানীয় প্রশাসন আছে, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সেনাবাহিনী আছে, সুতরাং তারা যাতে নিরাপত্তার ইস্যুটি মাথায় রাখে সেটি বলেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App