উত্তরা থেকে দিয়াবাড়ি পর্যন্ত অল্প সময়ে যাতায়াতের অপেক্ষা আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে। মতিঝিলের পথে চলতে শুরু করেছে মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইনের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের আনুষ্ঠানিক ‘পারফরম্যান্স টেস্ট’ শুরু হয়েছে। শুরুতেই সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার ( ৭ জুলাই) বিকেল ৪টা ৩৪ মিনিটে সবুজ পতাকা উড়িয়ে সিগন্যাল দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলের পথে ছুটে গেছে মেট্রোরেল। তবে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু হওয়ায় এই মেট্রোরেলে কোনো যাত্রী ছিলো না। শুক্রবার বিকালে ওবায়দুল কাদের পরীক্ষামূলক চলাচলের প্রথম ধাপ পারদর্শিতা পরীক্ষা বা পারফরম্যান্স টেস্টের উদ্বোধন করেন। মেট্রারেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ থেকে নিয়মিত মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল করবে। আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী পরিবহনে চলাচলের উদ্বোধন করবেন। শেখ হাসিনার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প এমআরটি লাইনের আরো একটি মাইলস্টোন অতিক্রম করতে যাচ্ছি। এরপর আরো ৫টি লাইনের কাজ শুরু হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা মোট ৬টি মেট্রোরেলে যুক্ত হবে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করছে। যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। মেট্রোরেল থেকে প্রতিদিন ২৬ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ডিএমটিসিএল কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানান, তিন ধাপে পরীক্ষামূলক টেস্ট চলবে। চলাচলের সময় কোনো ধরনের বাধা, চ্যালেঞ্জ কিংবা কারিগরি ত্রুটি খতিয়ে দেখতেই ধাপে ধাপে এ ধরনের পরীক্ষা চালানো হবে। এখন থেকে প্রতি শুক্রবার এবং রাতের বেলায় ‘পারফরম্যান্স টেস্ট’ চলতে থাকবে। পরের ধাপে ‘সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন টেস্ট’ শুরু হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘ট্রায়াল রান’ সফলভাবে শেষ হওয়ার পর মেট্রোরেল সম্পূর্ণ প্রস্তুত হবে। এরপরই যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রধানমন্ত্রী আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের মেট্রেরেলের উদ্বোধন করবেন। পারফরম্যান্স টেস্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত ৩০ জুন পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ এর সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। উত্তরা উত্তর ষ্টেশন থেকে আগারগাঁও শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের সার্বিক অগ্রগতি ৯৫ দশমিক ২০ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯০ দশমিক ২৪ শতাংশ। মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের অগ্রগতি ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের ৭টি মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিজয় সরণি মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৭ শতাংশ, ফার্মগেট স্টেশনের ৯৮ শতাংশ, কারওয়ান বাজার স্টেশনের ৯৫ শতাংশ, শাহবাগ স্টেশনের ৯৪ শতাংশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের ৯৭ শতাংশ, বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনের ৮৬ শতাংশ এবং মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৫ শতাংশ। অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়, ডিএমটিসিএল এর কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ বাস্তবায়নে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৪টি মেট্রোরেল লাইন বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। এগুলো হলো- এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫, নর্দান রুট এবং এমআরটি লাইন-৫ ও সাউদার্ন রুট। এছাড়া আরো দুইটি লাইন এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা খোঁজা হচ্ছে। প্রকল্পের শুরুতে মেট্রেরেলের গন্তব্য নির্ধারণ করা হয়েছিলো উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার পথ। কিন্তু পরবর্তীতে মেট্রোরেল লাইন কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরফলে এমআরটি লাইন-৬ এর মোট দৈর্ঘ হবে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ছিলো-প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার সম্প্রসারনে খরচ বেড়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।