×

জাতীয়

ঢিলেঢালা চেকপোস্টের সুযোগ নেয় অপরাধীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৩, ০৯:৫৫ এএম

ঢিলেঢালা চেকপোস্টের সুযোগ নেয় অপরাধীরা

ফাইল ছবি

৬ হাজার ডাকাত-ছিনতাইকারী নিয়ে পুলিশের মাথাব্যথা

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবনায় পড়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কুরবানির ঈদের ছুটিতে ছিনতাই ও চুরি বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের পরিকল্পনা কাজে আসেনি। ঢিলেঢালা চেকপোস্ট নগরীর নিরাপত্তায় কোনো কাজেই আসেনি। বিশেষ করে ফার্মগেটে পুলিশ সদস্য খুন ও রামপুরায় ছুরিকাঘাতের সাংবাদকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে পুলিশ। এ অবস্থায় ঢাকায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে তারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, রাতের ঢাকার শেষ ভাগের সময়টাকে ছিনতাইকারীরা বেছে নিতে চায়। এমনিতেও রাতে ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যায়। রাত ২টার পর রাস্তা আরো অনেক ফাঁকা হয়ে যায়। এ সময় ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়। অবশ্য ঈদের আগে ২৭ জুন মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনার দাবি করেন, ছিঁচকে চোর, মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টিসহ এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে এক মাস ধরে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এ পর্যন্ত ৬০০ পেশাদার অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তখন তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করব ঈদের আগে যেন তাদের জামিন না হয়। জামিন পেলে তারা ফের অপরাধে জড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। এ

অবস্থায় চিহ্নিত ছিঁচকে অপরাধীরা জামিন না পেলেও ঈদের ছুটিতে রাতের ঢাকা ছিল অনেকটাই অরক্ষিত। পুলিশ টহল ও চেকপোস্টের মধ্যে লুকোচুরি করে অপরাধীরা। ঢাকার রাস্তায় রাতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১২৫টির মতো চেকপোস্ট থাকে বলে ডিএমপি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

এ প্রসঙ্গে সাবেক মহাপুলিশ পরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ছুটির সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা ভালো করে তদারকি করা উচিত। ভোরে নীরব ঢাকার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। ঈদের ছুটিতে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়ার কথা ছিল ডিএমপির। তাহলে কী হলো প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এতে কারো গাফলতি ছিল কিনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করেছে কিনা, কারা তদারকি করেছে, সেখানে ব্যত্যয় বা অবহেলা ছিল কিনা- এসব দেখতে হবে। কারো গাফলতি থাকলে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, চেকেপোস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রয়োজন মতো তা বসানো হয়। এর মাধ্যমে গাড়ি চুরি কমেছে। চেকপোস্টে সঠিকভাবে তদারকি ও তল্লাশি করলে ছিনতাই কমাতে তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন ভোরের কাগজকে জানান, সন্দেহভাজন যানবাহন ও মানুষকে চেকপোস্টে তল্লাশি করা হয়।এমনিতে মধ্যরাত থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত আর ছুটির দিনে সকাল ৮টা পর্যন্ত চেকপোস্ট বহাল রাখা হয়। অনেক সময় রাস্তায় মানুষ ও যানবাহন না থাকায় চেকপোস্টে দায়িত্বরতরা ঢিলেঢালাভাবে কাজ করেন। এই সুযোগে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় চেকপোস্টে যথার্থভাবে দায়িত্ব পালন করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।

তিনি বলেন, ঈদের আগে ১ হাজার ৭৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর ডিএমপি সূত্র বলেছে, ঈদের পরের দুদিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ১৪৫ জন সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী, চোর ও ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপির তথ্য বলছে, রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে ৬ হাজারের বেশি মানুষ জড়িত। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ১ হাজার ৭৩৭ জন এবং ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ৪ হাজার ৪৬১ জন। ডিএমপির সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন এন্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেমে (এসআইভিএস) এ তথ্য রয়েছে।

থানা পুলিশের রেকর্ড থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় ১৯২টি চুরি, ৩৪টি ছিনতাই ও ২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে তেজগাঁও এলাকায়। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অনেক ঘটনায় মামলা হয়নি, সাধারণ ডায়রি হয়েছে। আবার ঝামলো এড়াতে অনেক ভুক্তভোগী থানায় যাননি। ২০২২ সালে রাজধানীতে অন্তত ১ হাজার ৬০৩টি চুরি, ১৪৫টি ছিনতাই ও ২৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব অপরাধীর অধিকাংশ ভাসমান। তারা ঢাকায় অপরাধ করে ঢাকার বাইরে চলে যায়। এতে অপরাধ ঠেকানো পুলিশের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বাড্ডা, দারুস সালাম, যাত্রাবাড়ী এলাকায় অন্তত ১০টি ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে। ঈদের আগের রাতে জামালপুরের আটজন ব্যাপারী রাজধানীর আফতাবনগর হাটে গরু বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। তাদের ২৮ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় থানায় সীমানা নিয়ে রশি টানাটানিতে মামলা করা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন ভুক্তভোগীরা। এর আগে গত ২১ জুন বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যানে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রিয়াজ হোসেন নামের এক স্কুলছাত্র আহত হয়। তিনি নবীনগর হাউজিং এলাকার একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

ডিএমপির ৫০ থানার তথ্য মতে, ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগে তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ও ডাকাত সবচেয়ে বেশি, আর সবচেয়ে কম মিরপুর বিভাগে। থানা হিসেবে ছিনতাইকারী ও ডাকাতি বেশি ভাটারা, শাহবাগ ও শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায়। এরপর রয়েছে হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, তেজগাঁও, রমনা, হাতিরঝিল ও উত্তরা পশ্চিম থানা। পুলিশের মিরপুর বিভাগের মধ্যে পল্লবীতে ছিনতাই-চুরির সংখ্যা বেশি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App