×

জাতীয়

এডিস লার্ভা এবার বেশি, ব্যাপকতা বাড়ার আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৩, ০৯:৪৮ এএম

এডিস লার্ভা এবার বেশি, ব্যাপকতা বাড়ার আশঙ্কা

মৌসুমের আগেই এ বছর দেশজুড়ে বাড়তে থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গুর প্রকোপ যে এ বছর বেড়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর দৈনিক যে তথ্য এবং এই ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশার ওপর পরিচালিত প্রাক-বর্ষাকালীন জরিপের তথ্যও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হবে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা বছরে ৩ বার মশার জরিপ করে। প্রাক-বর্ষা, বর্ষা ও বর্ষাপরবর্তী জরিপ। সম্প্রতি প্রাক-বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার প্রজননস্থল শনাক্ত, পূর্ণাঙ্গ মশা ও লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং কার্যক্রম পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৮টি ওয়ার্ডে ১৮ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়।

জরিপের সঙ্গে যুক্ত কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ভোরের কাগজকে জানান, গতবারের চেয়ে এবার এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে। কবিরুল বাশার বলেন, সম্প্রতি আমরা প্রাক-বর্ষা মৌসুমের জরিপ শেষ করলাম। জরিপে দেখা গেছে, গত প্রাক-বর্ষা মৌসুমের তুলনায় এ বছর এডিসের লার্ভা ৪ থেকে ৫ শতাংশ বেশি মিলেছে। যা আশঙ্কাকে আরো ঘনীভূত করছে। আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই কীটতত্ত্ববিদ।

প্রসঙ্গত; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০০০ সালে প্রথম এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়। এর ব্যাপকতা দেখা দেয় ২০১৯ সালে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৯ সালে এই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। ২০২১ সালে রোগী ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন; আর মৃত্যু হয়েছিল ১০৫ জনের। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬১ হাজার ৭৬৩ জন। এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ২৮১ জন। যা মৃত্যুর রেকর্ড গড়া ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০১৯ কিংবা ২০২২ সালের পরিস্থিতির চেয়েও চলতি বছর পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু প্রায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে- উল্লেখ করে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, শুধুমাত্র ঢাকায় নয়, বিভিন্ন জেলায় এমনকি সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এডিস বাহিত এই জ্বর। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, গাজীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী- এসব জেলায় এবার ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়বে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে আশঙ্কা হচ্ছে- ২০১৯ কিংবা ২০২২ সালে ডেঙ্গুর যে ভয়াবহতা ছিল এর চেয়েও বেশি হতে পারে চলতি বছর।

জানা যায়, গত বছরের প্রাক-বর্ষা মৌসুমের জরিপে রাজধানীর ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা মিলেছিল। আর বর্ষাংপরবর্তী জরিপে এটি ছিল ৪ শতাংশের বেশি। সদ্য সমাপ্ত জরিপে প্লাস্টিকের নানা ধরনের পাত্র, কোমল পানীয়ের বোতল, ফেলে দেয়া টায়ার, দইয়ের পাত্র, ডাবের খোসা, সিরামিকের পাত্র, ছাদবাগানের ফুলের টব, কলাপসিবল গেটের নিচের অংশ, পানির মিটারের কাছের গর্ত, গাড়ির গ্যারেজেসহ অনেক কিছুতেই লার্ভা পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষকরাও বলছেন, এডিসের বংশ বিস্তারে এখন আর বৃষ্টির প্রয়োজন হয় না। ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সারাবছরই পানি জমিয়ে রাখা হয়। তাই মৌসুম ছাড়াও এডিস মশা পাওয়া যায়।

রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, ডেঙ্গুর ধরনের কারণে প্রকোপ বাড়ে বা কমে। ডেঙ্গুর ধরন ৪টি। এগুলো হলো- ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। কোনো ব্যক্তি এই ৪ ধরনের যে কোনো একটি ধরনে আক্রান্ত হলে ওই ব্যক্তির ওই ধরনের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে ওঠে। অর্থাৎ কেউ ডেন-১ এ আক্রান্ত হলে পরের বার ডেন-১ দিয়ে আক্রান্ত হবেন না। বাকি অন্য ৩টি ধরনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানও (আইইডিসিআর) বলছে- এ বছর ডেন-২ ও ডেন-৩ দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

এদিকে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের যে সংখ্যা; সেটিও উদ্বেগের বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে এবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শক সিনড্রোমে বেশি রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App