×

জাতীয়

ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতা, নগরবাসীর দুর্ভোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৩, ০৮:৫৯ এএম

ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতা, নগরবাসীর দুর্ভোগ

ছবি: ভোরের কাগজ

কুরবানি ঈদের দিন থেকে থেমে থেমে ঝরছে বৃষ্টি, যার জন্য পশু কুরবানি দিতেও যেমন সমস্যায় পড়তে হয়েছে দেশবাসীকে তেমনি ঈদ আনন্দ কিছুটা ফিকে হয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। তার ওপরে গতকাল শনিবার দুপুরের পর ঢাকার আকাশ কালো হয়ে নেমে আসে অন্ধকার, তার পরে তুমুল বর্ষণ। এ যেন বর্ষার ভরা যৌবন। জানালায় কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই বর্ষণ কারো কারো জন্য বৃষ্টিবিলাস হলেও দুর্ভোগ হয়েছে পথচলতি মানুষের। বেশি অসুবিধায় পড়েন পথচারী বা বস্তিবাসীরা। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে অনেক ঘরের ভেতর পানি জমে গেছে। বয়ষ্ক ও বাচ্চাদের নিয়ে কোনো রকমে চৌকির ওপরে থাকতে হয়েছে বস্তিবাসীদের। তলিয়ে গেছে রান্নার চুলা ও টয়লেট। একে কুরবানির ঈদের ছুটি থাকায় কোনো কাজ কর্ম নেই, তার ওপরে ভারি বর্ষায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় এক অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন তারা।

এদিকে অবিরাম বৃষ্টিতে জমা পানিতে হেডলাইট জ্বালিয়ে দূরন্ত গতিতে ছুটছে কিছু কিছু যানবাহন। আর ভারি বৃষ্টিতে রাজধানীর নিচু এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গায় জমে গেছে পানি। রাজধানীর হাতিরঝিল, কারওয়ান বাজার, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, বাড্ডা, রামপুরা, ধানমন্ডিসহ বেশ কিছু এলাকায় পানি জমে গেছে। এদিকে পানি জমায় পোঁয়াবারো রিকশা ও সিএনজিচালকদের। ২০ টাকার পথ একশ টাকা হাঁকছে রিকশা, আবার সিএনজি তো আরো বেশি, এক-দেড়শ টাকার পথ ৪-৫শ টাকা চাচ্ছে তারা।

এদিকে গতকাল রাজধানীর গণমাধ্যম ও যেসব বেসরকারি অফিস-আদালত খোলা ছিল। ফলে অফিসগামীদের কর্মীদের আসা-যাওয়াতে সমস্যা সৃষ্টি হয় এই ভারি বর্ষণে। কেউ ভিজে আবার কেউ বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা বা সিএনজিতে করে অফিসে আসা বা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ভারি বর্ষায় রাজধানীর অনেক কাঁচা বাজার, মাছ বাজার এমনকি ফুটপাতও তলিয়ে যেতে দেখা গেছে।

এছাড়া, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ী থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত ড্রেন না থাকা এবং নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করাসহ নগরপিতাদের খামখেয়ালিপনাকেই দুষছেন রাজধানীবাসীরা। তার ওপরে কুরবানির ঈদের ময়লা আবর্জনা, বর্জ্য ড্রেনে ঢুকে পানি নিষ্কাষণের পথ কিছুটা রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সহজে পানি সরছে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ রবিবারও সারাদেশে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আবারো রাজধানীর বহু এলাকা জলমগ্ন হতে পারে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকায় ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে ও তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৯১ মিলিমিটার, সিলেটে ৯৯ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ৭৪ মিলিমিটার, রংপুরে ৪৫ মিলিমিটার, বরিশালে ২৫ মিলিমিটার, খুলনায় ১৫ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App