×

জাতীয়

নজরদারির অভাবে জঙ্গিবাদ বিস্তৃতির আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৭ এএম

নজরদারির অভাবে জঙ্গিবাদ বিস্তৃতির আশঙ্কা

ফাইল ছবি

নজরদারির অভাবে জামিনে নিয়ে বহু সংখ্যক জঙ্গি পালিয়ে যেতে সমর্থ হওয়ায় জঙ্গিবাদ বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এলাকায় পুলিশ হেফাজত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি পালিয়ে যায়। তাদের পালিয়ে যাওয়ার ৭ মাস পেরুলেও এখনো তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। এরই মধ্যে দেশের নৃশংস গুলশান হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা ঘটনার ৭ বছরপূর্তি হলো গতকাল শনিবার। এ ঘটনায় হওয়া মামলাটিও এখনো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। যদিও চলতি মাসেই মামলাটির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানির মধ্য দিয়ে বিচারকার্য শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা।

গত ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার একটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গুলশান হলি আর্টিজান হামলা মামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৭ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও খালাস চেয়ে আসামিদের আপিল শুনানির জন্য উচ্চ আদালতে আসে। পরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গত বছরের ১২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চকে মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি ও নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব দেন।

হামলায় ১৭ জন বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৭ আসামি হলেন- হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। এর মধ্যে অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে

বেকসুর খালাস দেন আদালত। হলি আর্টিজান মামলার বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। গত ১৩ জুন বিচারপতি শহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৭ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গির ডেথ রেফারেন্সের শুনানি ২০ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করেন। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তরিকুল ইসলাম হীরা বলেন, ২০ জুলাই পুনরায় শুনানি শুরুর পর চার-পাঁচ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের নিষ্পত্তি করা হতে পারে।

এদিকে, নজরদারির অভাবে জামিনে নিয়ে বহু সংখ্যক জঙ্গি পালিয়ে যেতে সমর্থ হওয়ায় জঙ্গিবাদ বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) তথ্যানুযায়ী, ২০০১-২০ সালের মধ্যে চরমপন্থির অভিযোগে ১ হাজার ৯৪৫টি মামলায় ৯ হাজার ৭২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে এটিইউয়ের মিডিয়া এন্ড অ্যাওয়ারনেস শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার আসলাম খান জানান, গত ৩ বছরে ১৮৮ চরমপন্থি সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। র‌্যাবের তথ্যে দেখা গেছে যে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬৭ জন ও গত ২০২২ সালে ১৭০ জনকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন জানান, গত ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ঝিনাইদহে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির এক কর্মীকে স¤প্রতি ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩ এর একটি ইউনিট। তুহিন রেজা নামে গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তি প্রায় ১৮ বছর ধরে আত্মগোপন করে একটি বেসরকারি টিভি স্টেশনের ভিডিও এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এ ঘটনাটি থেকে বোঝা যায় যে, কীভাবে সন্দেহভাজন ও দোষী জঙ্গিরা তাদের পরিচয় গোপন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিচ্ছে। র‌্যাব মুখপাত্র মঈন জানিয়েছিলেন, তাদের কাছে আগে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ৩০০ জনের বেশি জামিনে রয়েছে ও তাদের অধিকাংশই পলাতক। তারা অনলাইনে সক্রিয় থেকে সদস্য সংগ্রহের দিকে মনোনিবেশ করছে। তারা সুরক্ষিত ও এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করে, যা ক্র্যাক করা খুব কঠিন। তবে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব কঠোর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে।

কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা বলেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলাম এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় হুমকি। কারণ এই সংগঠনটি পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনতাইকারী দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। সিটিটিসির উপকমিশনার এসএম নাজমুল হক বলেন, উগ্রবাদের দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া অনেক লোক আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মামলার শুনানির জন্য অনেকে আদালতে হাজির হয়নি।

দুই পলাতক জঙ্গির বিষয়ে জানতে চাইলে, সিটিটিসির এ কর্মকর্তা জানান, তারা আদালতে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত এক ডজনেরও বেশি গ্রেপ্তার করেছেন, তবে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা ঘটনার আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি-মাইনুল ইসলাম শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা দেশেই লুকিয়ে আছে ও তাদের দ্রুতই গ্রেপ্তার সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App