×

জাতীয়

আন্দোলনের আবহে ভোটের গণসংযোগে বিএনপি নেতারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩১ এএম

আন্দোলনের আবহে ভোটের গণসংযোগে বিএনপি নেতারা

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে হাতে আছে ছয় মাসেরও কম সময়। রাজনৈতিক দলগুলো এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। দলীয়প্রধানের নির্দেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা জনসংযোগে নেমে পড়েছেন অনেক আগেই। বিএনপি আন্দোলনে থাকলেও ভোটের প্রস্তুতি নিতে পিছিয়ে নেই দলটির নেতারা। বিশেষত. কুরবানির ঈদকে জনগণের পাশে যাওয়ার একটা উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছেন সব দলের নেতারাই। ভোটের বার্তা নিয়ে তৃণমূলে ছুটে গেছেন তারা। এই নিয়ে আমাদের পৃথক প্রতিবেদন।

জাতীয় নির্বাচনের আগে শেষ ঈদ। তাইতো বিএনপির নেতারা এবার ঈদুল আজহা কাটিয়েছেন ভিন্ন আবহে। দলটির শীর্ষ নেতাসহ সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সবাই ছিলেন নিজ এলাকায়। ঈদের দিন তারা ছুটে বেড়িয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছাকাছি যেতে। কুরবানির মাংস বিলিয়েছেন। সাধ্যমতো দান-খয়রাতও করেছেন। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের খোঁজ নিয়েছেন। মতবিনিময় সভায় নেতাকর্মীদের দিয়েছেন আন্দোলনের বার্তা।

নির্বাচন প্রশ্নে দলটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য- সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরিতে তাদের মূল ফোকাস এখন আন্দোলন। তাদের দাবি, নির্বাচনের জন্যই বিএনপি আন্দোলন করছে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের মাধ্যমেই বিএনপির নির্বাচনী প্রস্ততি সম্পন্ন হবে। অর্থাৎ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি অর্জন করাটাই মূলত বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি।

তবে সূত্র বলছে, আন্দোলনের পাশাপাশি বিএনপির ভোটের সব প্রস্তুতি চলছে নেপথ্যে। এ বছরের শেষ কিংবা আগাম বছরের শুরুতে নির্বাচন হলেও যাতে প্রস্তুতির ঘাটতি না থাকে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতারা সমন্বয় করে পুরো কাজ গুছিয়ে আনছেন। এরই ধারাবাহিকতায় শীর্ষ নেতারা তৃণমূল ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেছেন নানামুখী তৎপরতা। তাইতো জাতীয় নির্বাচনের জন্য এলাকায় নিজের পোক্ত অবস্থানকে জানান দিতে ঈদুল আজহার ছুটির দিনগুলো নেতারা বাড়তি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। কেউ ফিরে এসেছেন ঢাকায়, কেউ এখনো গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন এলাকায়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে বাবা মায়ের করব জিয়ারত করেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়েন জনসংযোগে। জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতি ও সরকারের দুর্নীতি-লুটপাটে জনগণ দিশাহারা। এ পরিস্থিতিতে মানুষের মনে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। তবুও বিএনপি নেতাকর্মীরা ঈদ উপলক্ষে সামর্থ্য অনুযায়ী স্ব-স্ব এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন- এটা তো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা সমর্থকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি, অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। আশা করছি, জনগণ এবার জেগে উঠবে। ঈদে নির্বাচনী প্রচারণার প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিবের সাফ উত্তর- বিএনপির মতো বড় দল সব সময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আলাদা করে নির্বাচনী প্রস্তুতি বা প্রচারণার প্রয়োজন হয় না।

খালেদার ঈদ শুভেচ্ছায় মাত্র ৪ জন নেতা! : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে কারামুক্ত হয়ে ‘ফিরোজায়’ ওঠার পর থেকে প্রতিটি ঈদের দিন সন্ধ্যায় দলটির শীর্ষ নেতারা সেখানে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন দলীয়প্রধানের সঙ্গে। নেতারা এলাকায় থাকালেও সন্ধ্যার আগে ঢাকায় ফিরে আসেন। সবাই মিলে দলবেঁধে গিয়ে হাজির হোন ফিরোজায়। তাদের সঙ্গে বিএনপির অঙ্গ ও সংগঠনের নেতারাও থাকেন। তবে এবারের চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। নিজ এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত নেতারা কেউই ফেরেননি ঢাকায়। ঢাকায় অবস্থানরত মাত্র ৪ জন নেতা দলীয়প্রধানের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তারা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় প্রবেশ করেন চার নেতা। দুই ঘণ্টা অবস্থান করে রাত ১০টায় তারা বের হয়ে আসেন। পরে গেটের সামনে অপেক্ষামাণ সাংবাদিকদের কাছে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এটা একটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ ছিল- ঈদ উপলক্ষে। এই সাক্ষাতে কেনো রাজনৈতিক আলাপ হয়নি। আমরা তার ( খালেদা জিয়ার) সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেছি। দলীয়প্রধান আমাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে সাবেক স্পিকার বলেন, শারীরিকভাবে তার উন্নতি হয়েছে- এটা বলা যায় না। তার চিকিৎসার বিষয়ে আগে যেভাবে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন- আমরা আজকে তাকে যতটুকু দেখেছি- বাইরে অ্যাডভান্স সেন্টারে একান্তভাবে প্রয়োজন।

মাঠে সক্রিয় রাখা হচ্ছে প্রার্থীদের : সূত্র জানায়, আন্দোলন কিংবা ভোটের প্রস্তুতি- সব পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ আগে থেকেই মাঠে সক্রিয় রাখা হচ্ছে বিএনপির সম্ভাব্য যোগ্য প্রার্থীদের। তাদের ওপর দায়িত্ব বাড়াতে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগর পর্যায়ে কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে। এসব কর্মসূচি মূলত তত্ত্বাবধান করতে দেয়া হয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। এক্ষেত্রে জুলাইয়ের মধ্যভাগে সরকার পকনের একদফা আন্দোলনে কার পারফরমেন্স কতটুকু তা দেখেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হবে। এ বিষয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতার বক্তব্য- বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি মূলত শুরু হয়েছে গত বছরের বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়েই। দলে সব ধরনের প্রস্তুতিই চলছে। তার ভাষায় বর্তমান সরকারের পতন হলেই সবকিছু দৃশ্যমান হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে গিয়ে জয়ী হওয়ার মতো সক্ষম রাজনৈতিক দল। তবে আমাদের কাজ একটাই এখন, আর তা হলো ভোটের অধিকার আদায় করা। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের ঘোষণা আসার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে।

বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের দাবি- ঈদের ছুটিতে আমি বা বিএনপির কেউ নির্বাচনী প্রচারণা বা গণসংযোগ করিনি বা করছি না। মূলত সাংগঠনিকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে আন্দোলন বেগবান করা এবং দেশের নাজেহাল পরিস্থিতি জনগণের কাছে তুলে ধরতে বিএনপি তৃণমূলে সাংগঠনিক কাজ করছে। এতে নির্বাচনী গণসংযোগ বা প্রচারণার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বর্তমানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন নিশ্চিত করাই বিএনপিসহ অন্য সমমনা রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App