×

জাতীয়

খাঁ খাঁ করছে আজিজ মার্কেট, হতাশ বিক্রেতারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৩, ০৯:৩৯ এএম

খাঁ খাঁ করছে আজিজ মার্কেট, হতাশ বিক্রেতারা

ছবি: সংগৃহীত

অন্যান্য বছর এই সময়ে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটে ঈদের কেনাকাটার ধুম পড়লেও এবার তেমনটি দেখা যায়নি। সারি সারি দোকান থাকলেও ক্রেতাহীন অলস সময় পার করছেন বসে বসে। ফলে এবারের ঈদে বেচাবিক্রি নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। বেশির ভাগ দোকানেই একই চিত্র বিরাজ করছে। নতুন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে বসে আছেন দোকানিরা। কিন্তু পুরো মার্কেট ঘুরে অল্প কয়েকজন ক্রেতার দেখা মিলল।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার তেমন চাপ নেই। দুয়েকজন আসছেন, দেখছেন, ঘুরে ঘুরে কিনছেন। আবার কেউ না কিনে চলে যাচ্ছেন। আবার এমন কিছু গলিতে ক্রেতার দেখা না মেলায় বিক্রয়কর্মীরা মোবাইলে গেম খেলে, হাসিঠাট্টা করে সময় পার করছেন। বেশ কয়েকটি দোকানের মালিক ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেচাবিক্রি নেই। ঈদের আর একদিন বাকি। ফলে এ বছর ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রিতে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারলেন না তারা।

কথা হলো মুক্তা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী রেজাউল করিম চৌধুরী শিফনের সঙ্গে। ভোরের কাগজকে তিনি জানান, অন্যান্য বছর এই সময়ে দম ফেলার ফুসরত মিলত না। আর এখন একদমই ক্রেতা নেই। বসে বসে অলস সময় পার করতে হচ্ছে। অন্যান্য বছর যেমন দাম থাকে এবারো প্রায় একই দামেই পোশাক এনেছি। কিন্তু ক্রেতা আসছে না। হতাশ লাগছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, অনলাইন বিজনেস একটি বড় কারণ। অনেক বেশি অনলাইন মার্কেটিংয়ের ফলে তরুণ-তরুণীরা ভিড়ের কারণে মার্কেটে আসতে চান না। তারা ঘরে বসেই সেরে ফেলেন কেনাকাটা।

একই রকম কারণ উল্লেখ করলেন মেঘ এর বিক্রয় প্রতিনিধি মাহিন। তিনি বলেন, অনলাইনে এখন বেশি কেনাকাটা হয়। সময় এবং পরিশ্রম কমাতে বেশির ভাগ তরুণ অনলাইন থেকে পণ্য কেনা শুরু করেছেন। যার প্রভাব পড়েছে ঈদবাজারে। এত অফার দেয়ার পরও ক্রেতারা পোশাক কিনছে না। ওপাস এর ম্যানেজার মো. ইয়াসীন জানান, আজিজ মার্কেটের বেশির ভাগ ক্রেতা তরুণ। তরুণ-তরুণীদের নানা ডিজাইনের জামাকাপড়ের জন্য বিখ্যাত শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট।

সুলভ মূল্যে ভালো মানের পোশাকের জন্য এই মার্কেটের পরিচিতি রয়েছে। এখানকার ক্রেতারা বেশির ভাগই তরুণ-তরুণী। বিশেষ করে তারা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া। কিন্তু তারা কোথায় চলে গেলেন! অবশ্য লকডাউনের পর ভালোই বিক্রি ছিল, কিন্তু এর পরের ঈদ আর জমছে না। কোথায় যেন ছন্দপতন ঘটে গেছে। সেই ছন্দ ফিরে আসছে না।

টিশার্ট, পোলো শার্ট ও পাঞ্জাবি পাওয়া যায় থ্রিজি ফ্যাশনে। এখানকার বিক্রয়কর্মী মো. রাজু বলেন, অন্যান্য বছর ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা জমে উঠত। কিন্তু এবার সেভাবে বিক্রি নেই। অপরদিকে সবকিছুর দাম বাড়তি, এসব কারণেই মানুষ কেনাকাটা কম করছেন বলে মনে হচ্ছে।

বেচাকেনা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে শাল মহুয়ার স্বত্বাধিকারী রবিউল ইসলাম বলেন, বেচাবিক্রি নেই। দিনে পাঁচ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। অন্যান্য বছরে এ সময়ে কেনাকাটা শুরু হলেও এবার হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ আর কত কিনবে? সবকিছুরই তো দাম বেশি। সাধারণ মানুষ কাপড় কিনবে নাকি পেটের ভাত জোগাবে? তার ওপর এলসি বন্ধ থাকার কারণে বাইরে থেকে কাপড় আসছে না। অথচ সরকার আমাদের কাছ থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স সবই নিচ্ছে, কিন্তু আমাদের ব্যবসা হচ্ছে না। এমনকি ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পোশাকের ওপর ৭০, ৫০ এবং ২০ শতাংশ ছাড় ঘোষণার পরও বিক্রি হচ্ছে না।

বুশরা ফ্যাশনের মালিক সাব্বির হোসেন বলেন, বেচাকেনা নেই। করোনার সময়ও আমরা ঈদ পেয়েছি। তখনো বেচাকেনা কিছুটা ছিল। কিন্তু এবার নেই বললেই চলে। এর একটা বড় কারণ মূলত কুরবানিতে মুসলমানরা পোশাক কেনাকাটা করে না। পুজোও দূরে চলে গেছে। যে কারণে অন্যবারের চেয়ে ৫০ শতাংশ বিক্রি কম হচ্ছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পোশাকের ব্যবসাটা দেউলিয়া হয়ে গেছে। মানুষ গরু, মাছ সবই কিনছে, কেবল কাপড়ই কিনছে না। আবার কাপড়ের ব্যবসার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করা হয়েছে- যে কারণে ব্যবসায়ীরা দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে। ৫ শতাংশ যুক্ত করা হলে ক্রেতারা কাপড় কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত এবং ব্যবসায়ীরা দুর্নীতির আশ্রয় কম নিত। তিনি বলেন, আজিজ মার্কেটে তিন শ দোকানের মধ্যে দুই শই কর্মচারীর বেতনই দিতে পারবে না। কারণ বিক্রির অবস্থা শোচনীয়।

থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোছাম্মৎ নাসরিন সুলতানা সপরিবারে এসেছেন ঈদ কেনাকাটা করতে। জানতে চাইলে ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, রমজানের ঈদ যেভাবে উদযাপন করা হয়, কুরবানির ঈদ সেভাবে হয় না। পুরো বাজেট চলে যায় কুরবানিতে। তারপরও শিশুদের জন্য রঙিন পোশাক না কিনলে ভালো লাগে না। ঈদ উদযাপন করে মূলত শিশু আর তরুণরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App