×

জাতীয়

ঈদুল আজহা: সংকটকালে ত্যাগের ঈদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৩, ০৮:৩৫ এএম

ঈদুল আজহা: সংকটকালে ত্যাগের ঈদ

ফাইল ছবি

মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা আগামীকাল বৃহস্পতিবার। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ী পশু কুরবানি করবেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন। এবারও আমাদের জীবনে পবিত্র ঈদুল আজহা এসেছে এমন এক সময়ে- যখন নানাবিধ সংকটে ধুকছে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপেট বিশ্বজুড়ে মন্দা ও মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে কঠিন করে তুলেছে। চলমান এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ঈদের নামাজে প্রার্থনা করা হবে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। কুরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।

প্রধানমন্ত্রী পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন। তিনি তার বাণীতে বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, প্রতিবারের মতো এবারো ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে।’

গতবারের মতো এবারো করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করবেন মুসলমানরা। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কুরবানীকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য দ্বারা যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে সব প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আজহার পূর্ববর্তী জুমার খুৎবায় এ বিষয়ে মুসল্লীদের সচেতন করা হয়েছে।

হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পালিত হয় ঈদুল আজহা। এজন্য আগের দিন চাঁদ দেখার প্রয়োজন নেই, নেই কোনো অনিশ্চিয়তাও। ঈদুল আজহা আমাদের দেশের মানুষের কাছে কুরবানির ঈদ নামেই সমধিক পরিচিত। কুরবানি দেয়া আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। সাধারণত উট, দুম্বা, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া কুরবানি করার বিধান রয়েছে। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভের ভেতরেই রয়েছে কুরবানির প্রকৃত তাৎপর্য। এই ঈদে পশু কুরবানিই প্রধান ইবাদত। ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন কুরবানির জন্য। ঈদের জামাতে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, মুসলিম উম্মাহ এবং সারা বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে।

কুরবানি করার জন্য পশু কেনার পর্বও সেরে ফেলেছেন অনেকে। যারা গ্রামে কুরবানি করবেন তারাও ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছেন বাড়িতে। কুরবানির পশুর যতœ-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ। আজ বুধবারও সারাদেশে জমজমাট কুরবানির পশুর হাট। পশু কিনে ভবনের কার পার্কিং ও সামনের খোলা জায়গায় রেখেছেন। মহল্লার বাজারসহ অলিগলিতে বিক্রি হচ্ছে তাজা কাঁঠালপাতা, খড়-বিচালি-ভুসিসহ নানা পশুখাদ্য।

ঈদুল আজহার ইতিহাস বহু প্রাচীন। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত অনুসরণ করেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কুরবানি দিয়ে থাকেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কুরবানির জন্য মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। পরপর দুবার তিনি পশু কুরবানি করেন। তৃতীয়বার একই নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন, পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তার কেউ নেই। আল্লাহ তাকেই কুরবানি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)- কে আল্লাহর নির্দেশ জানালেন। শিশু ইসমাইল (আ.) নির্ভয় চিত্তে সম্মতি দিয়ে পিতাকে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে বলেন।

কুরবানি করতে উদ্যত হজরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্রস্নেহে যেন হৃদয় দুর্বল না হয়ে পড়েন, সেজন্য নিজের চোখ বেঁধে নিয়ে পুত্রের গলায় ছুরি চালান। আল্লাহর অপার কুদরতে এ সময় হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানি হয়ে যায়। ঈদের নামাজের জামাতের আগে খুতবায় হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর কুরবানির এই কাহিনী তুলে ধরেন ইমামেরা। বিন¤্র চিত্তে তাদের স্মরণ করবেন সারা বিশ্বের মুসলমানরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App