×

জাতীয়

জব্দ স্বর্ণের ২৫ শতাংশ পুরস্কারের প্রস্তাব বাজুসের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ১০:৪০ এএম

জব্দ স্বর্ণের ২৫ শতাংশ পুরস্কারের প্রস্তাব বাজুসের

ছবি: সংগৃহীত

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রুহিনা ইকবাল। প্রথমবারের মতো ঘুরতে আরব আমিরাতের শহর দুবাই যান। দুবাইয়ের বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি নিজের ও পরিবারের জন্য কিছু স্বর্ণালঙ্কার কেনেন। এ সময় দুবাইপ্রবাসী তার এক আত্মীয় একটি স্বর্ণের বার বাংলাদেশে বহন করে আনার কথা বলেন।

বিনিময়ে তাকে ২০ হাজার টাকা ট্যাক্স ও ১০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকসহ মোট ৩০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলেন। রুহিনা জানতে পারেন, দুবাইয়ে ভ্রমণকারীরা স্বর্ণ কিনলে ভ্যাট সম্পূর্ণ ফ্রি। বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি করতে ৪ বছর আগে নীতিমালা করে সরকার। এ সময়ে দেশে বাণিজ্যিকভাবে স্বর্ণ আমদানি হয়েছে মাত্র ১৪৮ কেজি। অথচ দেশে প্রতি বছর ২০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন চাহিদা রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, স্বর্ণের চাহিদার ১ শতাংশও বাণিজ্যিকভাবে আমদানি হচ্ছে না। ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে বছরে ৫-৬ মণ স্বর্ণ এলেও বাকি স্বর্ণের হদিস নেই। অর্থাৎ

আমদানি নীতিমালা কাগজে থাকলেও এর বাস্তবায়ন নেই। স্বর্ণ নীতিমালা আরো যুগোপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে চোরাচালান বন্ধে আরো কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। চোরাচালান প্রতিরোধ কার্যক্রমে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের ২৫ শতাংশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের মধ্যে পুরস্কার হিসেবে বিতরণেরও অনুরোধ তাদের।

আইনগতভাবে ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে স্বর্ণ আনা অবৈধ না হওয়ায় এসব স্বর্ণ আটকানোও যাচ্ছে না। এছাড়া বৈধ আমদানি যতটা হচ্ছে, এর কয়েকগুণ বেশি স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যম আসছে। এতে সরকার একদিকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া রাজস্ব নীতিমালাও স্বর্ণ ব্যবসার সহায়ক নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ২০ থেকে ২৫ টন স্বর্ণের চাহিদা আছে। অথচ বাংলাদেশে বছরে আমদানি হয় ৬৫ থেকে ৭০ কেজি র্স্বণ। বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে আসা ৫৪ টন স্বর্ণের মধ্যে আমাদের দেশে ২০ থেকে ২৫ টন স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে।

সম্প্রতি দুবাই ঘুরে আসার সময় ভোরের কাগজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় দুবাইয়ে দীর্ঘদিন বসবাসরত তার একজন পরিচিতের সঙ্গে। তিনি বলেন, আপনি যদি ২টি স্বর্ণের বার নিয়ে যান, তবে বিমানের টিকেটের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘দুটি বার নেয়া বৈধ। বাংলাদেশে আমার পরিচিত একজনের কাছে পৌঁছে দিলেই হবে।’

দুবাই থেকে ফেরার পথে পাশে থাকা যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এভাবে দুবাই থেকে প্রতিদিন স্বর্ণ আসছে বাংলাদেশে। এসব স্বর্ণ যাত্রীর নিজস্ব মালামাল হিসেবে আনা হলেও দেশে পৌঁছানোর পর চলে যায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হাতে। বাজুস সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে একজন যাত্রী ১০০ গ্রাম বা প্রায় সাড়ে ৮ ভরি করে বিদেশি অলংকার আনতে পারবেন। কিন্তু বিভিন্ন ফাঁকফোঁকর দিয়ে স্বর্ণের প্রচুর গহনা দেশে ঢুকছে।

দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় ‘গোল্ড স্যুক’-এ গিয়ে বেশ কয়েকটি স্বর্ণের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ। দুবাই থেকে ২২ ক্যারেটই সবচেয়ে বেশি আসে বাংলাদেশে। ট্যাক্স দিয়ে বৈধভাবে কেউ দুটি বার দেশে পাঠালেও প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ থাকে। এছাড়া বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বারগুলো গলিয়ে অলংকার বানিয়ে বিক্রির সময় ভ্যাট-মজুরি, খাদ দিয়ে অতিরিক্ত লাভ করে।

বর্তমানে দেশে বৈধপথে দুভাবে স্বর্ণ আমদানি করা যায়। স্বর্ণ নীতিমালার আওতায় লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে স্বর্ণ আমদানি করতে পারে। আবার ব্যাগেজ রুলসের আওতায় স্বর্ণ ও বার শুল্ক পরিশোধ করে আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক আমদানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ একেবারেই কম। স্বর্ণ ব্যবসা বৈধতার মধ্যে আনতে ২০১৮ সালে সরকার স্বর্ণ নীতিমালা করে। নীতিমালা অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর ২০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদার ১ শতাংশও বাণিজ্যিকভাবে আমদানি হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নীতিমালার আওতায় গত ৪ বছরে ৮টি প্রতিষ্ঠান ১৪৫ কেজি স্বর্ণ আমদানি করেছে। এর সিংহভাগ আমদানি করেছে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত কোনো স্বর্ণ আমদানি করেনি।

জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক, ইন্স্যুরেন্স, ফ্রেইট চার্জ, এলসির কমিশনসহ সব মিলে প্রতি ভরিতে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ব্যাগেজ রুলসের আওতায় প্রতি ভরি স্বর্ণ আনার খরচ ২ হাজার টাকা। স্বর্ণের বারের বাইরে ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার আনতে পারবেন বিনা শুল্কে। আর এ কারণেই বাণিজ্যিক আমদানি নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

কাস্টমসের তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন ব্যাগেজ রুলসের আওতায় ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামের বিমানবন্দর দিয়ে ১০০ কেজির বেশি স্বর্ণ আসছে। স¤প্রতি এ মাধ্যমে তা বেড়ে যাওয়ায় এর অপব্যবহারের বিষয়টি সামনে এসেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App