×

জাতীয়

ঈদ ঘিরে সক্রিয় ছিনতাই টানা ও অজ্ঞান পার্টি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩, ০৮:৫৫ এএম

ঈদ ঘিরে সক্রিয় ছিনতাই টানা ও অজ্ঞান পার্টি

ফাইল ছবি

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। জমতে শুরু করেছে কুরবানির পশুর হাটগুলো। এরই মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছিনতাই, টানা ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। তবে এবার কুরবানির পশুর হাট বসার আগে থেকেই তাদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এদের খপ্পরে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর সংখ্যা আসলে অনেক বেশি হলেও পরিসংখ্যানে তা উঠে আসে না। কারণ আইনগত প্রক্রিয়ায় ঝামেলার কারণে অধিকাংশ ভুক্তভোগীই থানায় অভিযোগ করেন না। এছাড়া ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেখানে সক্রিয় হচ্ছে সে জায়গা পরিহার করে অন্য জায়গা, এমনকি মধ্যরাত ও ভোরকে ছিনতাইয়ের জন্য বেছে নিচ্ছে তারা।

যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলমান রয়েছে। প্রায়ই ধরা পড়ছে এসব চক্রের সদস্যরা। সম্প্রতি তাদের ধারাবাহিক অভিযানে ছিনতাই, টানা ও অজ্ঞান পার্টির শতাধিক সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। গত ৪ মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিট শুধু ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আগের বছরের ১২ মাসে গ্রেপ্তার হয়েছিল ১০৩ ছিনতাইকারী।

এদিকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অজ্ঞান, টানা ও ছিনতাই পার্টির দৌরাত্ম্য বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প রাখা হবে, জাল নোট শনাক্ত করার মেশিনের পাশাপাশি এটিএম বুথও থাকবে। বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাটে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থায় থাকবে, যাতে মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টি কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে। ঈদের ছুটিতে সারাদেশে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্যক্রম প্রতিরোধে দৃশ্যমান টহলে থাকবে র‌্যাব।

গত ১৪ জুন রাজধানীর গুলিস্তানে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ৩৫ হাজার টাকা খোয়ান মামা-ভাগনে। অচেতন অবস্থায় মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ও মো. আজিজুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৫ জুন রাত পৌনে ৩টার দিকে মানিকনগর সরদার বাড়ির গলিতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সেকেন্দার শেখ নামে এক অটোরিকশাচালক আহত হন।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৭ জুন রাজধানীর ধানমন্ডি ৬ নম্বর রোড থেকে মো. আলম নামে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অটোরিকশাটি খুইয়েছেন বলে জানান ধানমন্ডি থানার এসআই শামসুল হক।

গত ১৭ জুন ঢাকায় চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে আলী রিফাত নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। রিফাতকে নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসা লঞ্চের যাত্রী ইসমাইল হোসেন জানান, সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে কিছু খাইয়ে অচেতন করে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গত ২০ জুন রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন এলাকায় ছুরিকাঘাতে সুরুজ আলী (৪০) নামে এক পাঠাও চালকের মৃত্যু হয়। নিহতের স্ত্রী বন্যা আক্তার জানান, ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেল নেয়ার জন্য তার স্বামীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। গত ২১ জুন বুধবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রিয়াজ নামের এক স্কুলশিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।

রিয়াজের বড় ভাই মিরাজ জানান, মোহাম্মদপুরের এডুকেশন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াজ। বন্ধুকে নিয়ে রিকশায় ঘুরতে বের হয়েছিল। চাঁদ উদ্যানের সামনে যাওয়া মাত্রই ৪-৫ জন ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে কোনো কিছু বোঝার আগেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক বলেন, ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীর সংখ্যা আসলে অনেক বেশি হলেও পরিসংখ্যানে তা উঠে আসে না। কারণ অনেকেই ঝামেলার ভয়ে থানায় অভিযোগ করেন না। তবে সমস্যা হচ্ছে এসব অপরাধী বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হলেও বের হয়ে আবার একই কাজে জড়াচ্ছেন। এক্ষেত্রে পুনর্বাসন করা যাচ্ছে না। আর অধিকাংশ সময় ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত হতে দেখা যাচ্ছে মাদকসেবীদের। মাদক বন্ধ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা না গেলে এদের তৎপরতা বন্ধ করা দুরূহ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App