×

জাতীয়

কুরবানির পশু বিক্রেতারা শেষ দুই দিনের আশায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৩, ০৩:০২ পিএম

কুরবানির পশু বিক্রেতারা শেষ দুই দিনের আশায়

ছবি: সংগৃহীত

আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলিম উম্মার বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আর বাকি ৩ দিন। এই ঈদে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি প্রধান আকর্ষণ পশু কুরবানি। ঢাকায় এবার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে বসানো হয়েছে ১৯টি পশুর হাট। এসব হাটের ইজারা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন। শর্ত অনুযায়ী, গতকাল রবিবার থেকে ঢাকার হাটগুলোতে পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। হাটগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত গরু। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে ঢাকায় আনা হয়েছে এসব গরু। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ছাগলও আনা হয়েছে। কিন্তু এখনো পুরোদমে জমে উঠেনি কুরবানির গরু-ছাগল কেনাবেচা। গত দুই দিনে কিছু গরু বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা আশা করছেন, আগামীকাল মঙ্গলবার ও পরদিন বুধবার পুরোদমে কেনাবেচার শুরু হবে। যা চলবে ঈদের আগের দিন মধ্য রাত পর্যন্ত।

ক্যাশলেস লেনদেন হওয়ায় স্বস্তিতে ক্রেতা-বিক্রেতা : এদিকে হাটগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পুলিশের পাশাপশি র‌্যাবেরও অস্থায়ী বুথ বসানো হয়েছে। আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি রয়েছে হাট ইজারা কমিটির সদস্যরা। তাদের পরণে বিশেষ পোশাক। এবারের ঈদে ক্রেতা বিশেষ করে বিক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সবচেয়ে খুশির বিষয় হচ্ছে হাটগুলোতে ক্যাশলেস ডিজিটাল ব্যাংকিং লেনদেন ব্যবস্থা চালু। বিক্রেতাদের একাউন্টে ঢুকছে গরু বিক্রির টাকা। এতে করে হাটে বা বাড়ি ফেরার পথে টাকা চুরি বা ছিনতাই হওয়ার ভয় নেই। খিলগাঁও হাটে জামালপুর থেকে আসা মনোয়ার হোসেন জানান, ৫টা বড় গরু নিয়ে এসেছি। একটা গরু বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। সেই টাকা ব্যাংকিং সিস্টেমে আমার একাউন্টে দেয়া হয়েছে। হাট শুরু হওয়ার আগেই আমার নামে একাউন্ট খোলা হয়েছে। সেই একাউন্টে টাকা জমা হয়েছে। আমাকে একটা স্লিপ দেয়া হয়েছে। এখন আর টাকা ছিনতাই বা চুরি হওয়ার কোনো ভয় নেই। এছাড়া প্রতিটি হাটে জাল নোট চেকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

শর্ত ভঙ্গ করে সড়কের ওপরে বসছে হাট : হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হলেও ইজারাদাররা কোনোভাবেই মানছেন না শর্ত। সিটি করপোরেশনের শর্তানুযায়ী, রাস্তার ওপর কোনোভাবেই হাট বসানো যাবে না। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। খিলগাঁও রেলওয়ে কলোনির নির্দিষ্ট মাঠ ছাড়িয়ে হাট বসানো হয়েছে। শাহজাহানপুর আমতলী থেকে কলোনির ভেতর দিয়ে মতিঝিল বালক উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে সড়কটি দিয়ে। কিন্তু গতকাল সরেজমিন দেখা গেল, পুরো সড়কটির দুই পাশে বেপারিরা সারি সারি করে গরু বেঁধে রেখেছেন। হাট কমিটির লোকজনই তাদেরকে গরু রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শুধু গরু নয়, গরুর জন্য আনা খাবার খড় জড়ো করে রাখা হয়েছে। এতে রাস্তার অর্ধেক বন্ধ। মতিঝিল ও শাহজাহানপুরের দুই প্রবেশ দ্বারে ইজারাদারের লোকজন কোনো যানবাহন ঢুকতে দিচ্ছেন না। লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। ফলে রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের মোড় হয়ে ঘুরে যেতে হচ্ছে। এজন্য ওই এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট।

একই পরিস্থিতি রাজধানীর পোস্তগোলা হাট, ধোলাইখাল ও কমলাপুর পশুর হাটেও। এসব হাটে সীমানার বাইরেও গরু রাখা হয়েছে। প্রতিটি অলিগলিতে গরুর হাট বসেছে। কমলাপুর স্কুলের মাঠের গরুর হাট বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে কমলাপুর পশুরহাটের ইজারাদার জাকির হোসেন বলেন, এটা বসানো যায়। প্যানেল মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন। রাস্তায় গরু বসেছে সঠিক। কিন্তু যান চলাচলে কোনো সমস্যা

হচ্ছে না। জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, রাস্তার ওপরে হাট বসানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতি হাটে আমাদের মোবাইল টিম আছে। এমন কিছু থাকলে জরিমানা করা হবে। কিন্তু গতকাল সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ কোনো প্রতিনিধিকে হাটে দেখা যায়নি।

পশু কেনাবেচা জমেনি : এদিকে গত দুই দিনে কিছু গরু কেনাবেচা হলেও খুব একটা জমে উঠেনি। এ নিয়ে বিক্রেতারাও খুব একটা উদ্বিগ্ন নন। তারা আশা করছেন, আগামীকাল মঙ্গলবার ও পরদিন বুধবার পুরোদমে গরু বিক্রি হবে। কারণ, এখন ক্রেতারা আসছেন, দরদাম করছেন। বেশির ভাগ মানুষের গরু রাখার জায়গা নেই। গরু চুরি হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া গোখাদ্যের দামও বেশি। এজন্য ঈদের আগের দিনই অধিকাংশ ক্রেতা কুরবানির পশু কিনবেন।

ধোলাইখালে পশুরহাটে ওয়ারী থেকে গরু কিনতে আসা সোলাইমান কবির বলেন, ঈদের এখনো ৩-৪ দিন বাকি। আজ গরু দেখতে এসেছি। কিনব পরে। গরু রাখার মতো জায়গা নেই। এছাড়া দেখাশোনার মতোও মানুষ নেই। আমার ছোট ছেলে গরু কেনার বায়না ধরেছে। তাই তাকে নিয়ে গরু দেখতে এসেছি। দামের বিষয়ে তিনি বলেন, দাম তো বেশি হবেই। এ বছর সব জিনিসের দাম বেড়েছে। বাজারের প্রথম দিকে দাম একটু বেশি থাকে। পরে কম হয়। তাই পছন্দের গরু কম দামে কিনতে পারব বলে আগে থেকেই হাট ঘুরছি।

জামানুর রহমান নামে এক খামারি বলেন, ৩০টি মাঝারি ও ছোট সাইজের গরু এনেছি। একটি মাত্র বিক্রি হয়েছে। সবাই দাম দেখছে। কিন্তু কিনছে না। অনেকেই দাম শুনে চলে যাচ্ছে। যারা দাম বলছে তা অনেক কম। দেখা যাক, এখনো ৩ দিন আছে। ঈদের দিনও বিক্রি করতে পারব। আশা করছি, এই কয়েকদিনে সব গরু বিক্রি করতে পারব।

ধোলাইখাল হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, হাটে গরু পর্যাপ্ত আছে। প্রথমদিন অনেক ক্রেতা এসেছেন। তবে বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। সামনের তিনদিনে বিক্রি বাড়বে। কারণ, অনেকে গরু কিনে বাসায় রাখতে পারে না।

ময়মনসিংহ থেকে ৮টি মাঝারি ও বড় সাইজের গরু এনেছেন ফজলু মিয়া। তিনি জানান, ক্রেতারা আসছেন, দরদাম করছেন। বড় সাইজের একটা লাল গরু দেখিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ওই গরুটা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে আমার কেনা। তারপর পরিবহন খরচ, গোখাদ্য তো আছেই। কিন্তু ক্রেতা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম বলেছেন। এই দামে বিক্রি করলে লোকসান হবে। তাই ছাড়িনি। তবে ঈদের আগে কাক্সিক্ষত দামে তিনি গরু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App