×

জাতীয়

স্বাস্থ্য খাতে শতভাগ সেবা নিশ্চিত হয়নি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৩, ০২:১৩ পিএম

স্বাস্থ্য খাতে শতভাগ সেবা নিশ্চিত হয়নি

ফাইল ছবি

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি বন্ধ করা ও টাকা অলস হয়ে পড়ে থাকার অভিযোগ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিরা। তারা বলেছেন, এটি এমন একটি মন্ত্রণালয় সেখানে প্রতিবছর মন্ত্রী বাজেটের অর্থ খরচ করতে পারেন না, অথচ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেহাল, স্বাস্থ্য খাতে জনবল নেই, ডাক্তার, নার্স নেই। এসময় তারা স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করেন।

যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জবাবে বলেন, স্বাস্থ্য খাতে শতভাগ সেবা দেয়া হচ্ছে না এটা ঠিক, তবে কোভিড টিকা দেয়ায় রেকর্ড গড়াসহ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট দাবির ওপর ছাটাই প্রস্তাবে জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম বলেন, সংবিধানে ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে। কিন্তু এখানে তা অনুসরন হচ্ছে না। তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থ বছরের ১২ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা, ৬ হাজার ৯৩৩ কোটি ব্যয় হয়, ৪২ শতাংশ ফেরৎ যায়। ২০২১-২২ অর্থ বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১৭ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে ১০ হাজার ২৯২ কোটি, ফেরৎ যায় ২৯ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের এ মন্ত্রণালয়ের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৭৯৪ কোটি। প্রথম ১০ মাসে ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকাখরচ হয়েছে। যা মাত্র ৩৩ শতাংশ মাত্র। প্রথম ১০ মাসে অলস হয়ে পড়ে ছিল ৬ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকাসহ বিদেশী সহায়তার ৫৯ শতাংশই ব্যয়ই হয়নি। আরেকটা রয়েছে এ খাতে দুর্নীতি, এসেনশিয়াল ড্রাগস ৪৭৭ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এরকম বহু দুর্নীতি রয়েছে , এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।

মোকাব্বির খান স্বাস্থ্য খাতে কেন বাজেট কমানো হয়েছে তার জানতে চান। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মাত্র ৩৪ মার্কিন ডলার। যা জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। এখানে টাকার অংশ বাড়লেও সুফল পাচ্ছে না। এখানে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা পেতে হলে খরচ করতে হয়ে ৬৭ শতাংশ নিজের পকেট থেকে আর মাত্র ৩৩ শতাংশ খরচ দেয় সরকার। আর এ বিপুল পরিমান খরচ মেটাতে গরু ছাগল , জমি জমা ঋণ নিতে গিয়ে প্রতি বছর ৫২ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাচ্চে। যার ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ ভারত সহ বহু দেশে পাড়ি জমাচ্ছে।

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, এটা অত্যন্ত সেনসেটিভ, করোনার সময় প্রধানমন্ত্রী কিভাবে গণহারে ভ্যাকসিন দিলেন, এটা সত্যি বিষ্ময়। তিনি ১০ বিশ বেডের হাসপাতাল চালু করতে ডাক্তার, নার্স টেকনিশিয়ান নিয়োগ করার দাবি জানান।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়ে এখনো নিয়োগ হয়নি। অনেক অভিযোগ রয়েছে। আপনি এমপিদের নিয়োগ করার দায়িত্ব দেন, আমরা প্যানেল করে দিয়ে বে। তিনি বলেন, গত বছর ৩ হাজার কোটি টাকা ফেরৎ গেছে। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অর্থ খরচ করে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা দেবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব একজন ডাক্তারকে করার দাবি জানান। তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে শূন্য পদে কর্মী বাড়ানোর দাবি জানান। রওশন আরা মান্নান বলেন, জনগণের যদি স্বাস্থ্য সুরক্ষা না দেয়া যায় তাহলে চলবে কিভাবে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন দেশে এখন ভেজাল অসুধে জয়লাপ। আমাদের ডাক্তাররা কোম্পানির কাছ থেকে উপহার নিয়ে ভেজাল অসুধ প্রেসক্রিপশন করছে। তাছাড়া কোম্পানিগুলো বিদেশে উন্নত মানের অসুধ সরবরাহ করলেও দেশে নিম্ন মানের অসুধ বাজারজাত করছে। তিনি বাজার থেকে ক্ষতিকারক স্টেরয়েড তুলে নেবার আহ্বান জানান।

প্রতি উত্তরে স্বাস্থ্যখাতে সেবার মান শতভাগ নিশ্চিত হয়নি বলে মন্ত্রী স্বীকার করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, নানা জটিলতার কারণে শত ভাগ সেবার মান নিশ্চিত করা যায়নি। এক্ষত্রে দক্ষ জনবল এক ট্যকনিশিয়ানে অভাব রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে ইতিমধ্যে জনবল বাড়ানো এবং টেকনিশিয়ান নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুহয়েছে। আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ছাটাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খাতে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের ছাটাই প্রস্তাবের উপর জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে ৬টি মেডিকেল কলেজ ১৮শত ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতে ইতিমধ্যে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকার হাসপাতালগুলোর পরিচালনা পর্ষদের কমিটিতে রয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদেরও মনিটরিং করার সুযোগ রয়েছে। আমি আশা করছি, তারা এ ব্যপারে আরো সজাগ হবেন। তা হলে সেবার মান ভাল হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবেলায় আমরা ৩ বছর যুদ্ধ করেছি। ওই সময় ভ্যাকসিন ওষুধ ক্রয় ও হাসপাতাল নির্মাণে ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যদিও চলতি বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২৯ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মত। করোনা মোকাবেলায় সরকার ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও এই হিসাবগুলো জনসম্মুখে আসছে না। কিন্তু এটা জনগণের জানা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, করোনার পাশাপাশি দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টেও সমস্যা মোকাবেলায় সরকার আলাদা হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরপাশাপাশি স্থানীয় পর্যায় স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে হাসপাতালগুলোতে আইসিউ, সিসিইউ বেড স্থাপন করা হচ্ছে। যেটা আগে ছিলনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App