×

জাতীয়

খামারের গরুতে ঝোঁক ক্রেতাদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৩, ০৮:৫৪ এএম

খামারের গরুতে ঝোঁক ক্রেতাদের

ছবি: ভোরের কাগজ

চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও জমে উঠেনি হাট

ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রামের কুরবানির পশুর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পশু এসেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ১২টি পশুর হাটে মাঝারি থেকে বড় আকারের গরু বেশি। তবে ঈদের মাত্র তিন বাকি থাকলেও এখনো জমেনি পশুর হাট। বিক্রেতারা চড়া দাম হাঁকছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। এদিকে পশুর হাট এখনো জমে না উঠলেও নগরী ও আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা এগ্রো ফার্মগুলোতে অর্ধেকের বেশি গরু এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করছেন খামারিরা। এসব খামারে দেশের নানা অঞ্চলের পাশাপাশি ভারতের গরুও ঠাঁই পেয়েছে। অনলাইনেও বিভিন্ন অ্যাগ্রো ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ক্রেতারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নগর ও ১৫ উপজেলায় ২২২টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী ৬০ ও অস্থায়ী ১৬২টি। নগরে ১০টি হাটে পশু বেচাকেনা চলছে। অন্যগুলো ১৫ উপজেলায়। এবার চট্টগ্রামে চাহিদার চেয়ে পশুর উৎপাদন কিছুটা কম। তবে ঘাটতি হবে না। কারণ উপজেলা পর্যায়ের বাজারগুলোতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গরু কেনাবেচা হলেও মহানগরীর বাজারগুলোতে বাইরের জেলা থেকেও গরু আসে। প্রতি বছর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা থেকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা পশু নিয়ে চট্টগ্রামের হাটে আসেন। এবারো তার ব্যতিক্রম নেই। ভারতীয় গরুও আসছে চট্টগ্রামের বাজারে। এসব বাজারে আনোয়ারা ও বাঁশখালী থেকেও নিয়ে আসা হয়েছে গরু।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, এবার ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে পশুর কোনো ঘাটতি হবে না। চট্টগ্রামে এবার আট লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি পশু কোরবানি দেওয়া হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা ও নগরের ৮ হাজার ২২০টি খামারে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। অবশিষ্ট পশু দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আসছে। ডা. আলমগীর বলেন, বাজারে আসা পশুর স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পশুর হাটে সেবা দেয়ার জন্য চট্টগ্রামে ১২২টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে কাজ করছে ছয়টি মেডিকেল টিম।

নগরীতে তিনটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সাগরিকা, বিবিরহাট ও পোস্তারপাড় বাজার। এর বাইরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-চসিক এবার ১৪ শর্তে মোট ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি পেয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে। যদিও ২৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে অনুমতি চেয়েছিল চসিক। তবে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং সার্বিক যাচাইবাছাই শেষে ৯টি স্থানে পশুর হাট বসাতে অনুমতি দেওয়া হয়। বাজারগুলো হচ্ছে- বাকলিয়ার নূরনগর হাউজিংয়ের মাঠ, পতেঙ্গার খেজুরতলা বাঁধসংলগ্ন মাঠ, পতেঙ্গার হোসেন আহমেদপাড়াসংলগ্ন টিএসপি মাঠ, পতেঙ্গায় মুসলিমাবাদ রোড, পাঁচলাইশের ওয়াজেদিয়া মোড়, আউটার রিং রোডে সিডিএ মাটির মাঠ, হালিশহর বড় পোলের গোডাউন এলাকা, সল্টগোলা রেলওয়ে ক্রসিংসংলগ্ন মাঠ এবং দক্ষিণ পতেঙ্গার বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ।

নগরীর সাগরিকা পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলা থেকে গরু আসছে। মূল বাজারের বাইরেও বিসিক শিল্পনগরীর বিভিন্ন প্লটে ত্রিপলের সামিয়ানা টানিয়ে খাইন বানিয়ে পশু রাখা হয়েছে। তবে খাইনে গরু রাখার জন্য টাকা দিলেও দূর-দূরান্তের জেলাগুলো থেকে আসা বিক্রেতারা স্বস্তিতে রয়েছেন। ঝড়-বৃষ্টিতে গরু রাখা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা নেই। সাগরিকা বাজারে গরু, ছাগল ও মহিষ বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। বেপারিরা পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন, দাম জিজ্ঞেস করছেন। সাগরিকা পশুর বাজারের ইজারাদার এরশাদ মামুন বলেন, এখনো বিক্রি কম, সামনে হয়তো বাড়বে। কোরবানির দুয়েকদিন আগে বিক্রি বেশি হয়। ট্রাকভর্তি গরু আসছে। এবার পরিবহন ভাড়াও বেশি। পর্যাপ্ত গরু এই বাজারে এসেছে।

নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর পুলিশ

এদিকে, নগরীর পশুর হাটগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। হাটে জাল টাকার লেনদেন ঠেকাতে সরকারি ও বেসরকারি তফসিলি ব্যাংকগুলো বুথ বসিয়েছে। হাটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে গতকাল রবিবার সকালে নগরীর সাগরিকা বাজার পরিদর্শন করেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এ সময় তিনি গরু বিক্রেতা ও হাট ইজারাদারদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন এবং সিএমপির নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, নগরীর পশুর হাটগুলোতে নিশ্চিন্তে পশু কেনাকাটার জন্য সিএমপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। পশুর হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশের টিম থাকছে। সিসিটিভির মাধ্যমে হাট তদারকি করা হচ্ছে।

সাধারণত হাট থেকে কুরবানির পশু নগদ টাকায় কিনতে হয়। এতে টাকার নিরাপত্তা নিয়ে অনেকে ভয়ে থাকেন। এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে নগরীর দুটি পশুর হাটে ‘ক্যাশলেস’ বা নগদবিহীন লেনদেন করা যাবে। এসব হাটে নগদ টাকার পরিবর্তে কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে পশু কেনা যাবে। নগরের সাগরিকা ও নুর নগর হাউজিং অ্যাস্টেট এলাকার কর্ণফুলী পশুর বাজারে ৫০ কোটি টাকা ডিজিটাল লেনদেনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা বলেন, কোরবানির বাজারকে ঘিরে স্মার্ট লেনদেনের ব্যবস্থা থাকবে। সবাইকে জাল টাকা পরীক্ষা করে দেয়া হবে। পশুর বাজার যতদিন চলবে, ততদিন বুথ থাকবে।

অন্যদিকে কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পশুবাহী যানবাহনের নিরাপদ চলাচল ও চাঁদাবাজিমুক্ত মহাসড়ক নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে হাইওয়ে পুলিশ। মহাসড়কের কোথাও কোনো সংগঠন বা কোনো চক্রকে চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। কারো বিরুদ্ধে কুরবানির পশুবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজির তথ্য পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়ন। এছাড়া আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নির্বিঘ্নে গাড়ি চলাচল, যাত্রীর নিরাপত্তা এবং ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ ও স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ। ইতিমধ্যে বিভিন্ন যানবাহনের মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সভা হয়েছে।

খামারের গরুতে ঝোঁক ক্রেতাদের

কুরবানির পশুর হাট এখনো জমে না উঠলেও নগরী ও আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা এগ্রো ফার্মগুলোতে অর্ধেকের বেশি গরু এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করেছেন খামারিরা। তারা জানান, হাট থেকে গরু কিনলে বাসার সামনে নিয়ে কয়েকদিন রাখতে হয়। আর খামার থেকে গরু কিনলে কুরবানির দিন সকালেও নেয়ার সুযোগ আছে। ক্রেতারা ওজন মেপে নিশ্চিত হয়েই গরু কিনছেন। এসব কারণে খামারে পালিত গরুর দিকে ঝোঁক অনেক ক্রেতার। অনেক ক্রেতা আগেই কুরবানির পশু পছন্দ করে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে বুকিং দিয়ে রেখেছেন।

এদিকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও কুরবানির পশু বিক্রি চলছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চট্টগ্রামে ১৩৯টি অ্যাগ্রো ফার্মের তথ্য রয়েছে। আর চট্টগ্রাম বিভাগেই রয়েছে ২৪ হাজার ২৭৩টি ফার্মের পশুর ছবি ও নানা তথ্য। নগরীর বায়েজিদ এলাকায় এশিয়ান অ্যাগ্রো ফার্মে ৩৫০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় ইউনিক্যাম অ্যাগ্রো লিমিটেড-এ ১০০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া চৌধুরী র‌্যাঞ্চ অ্যাগ্রো, মাফ অ্যাগ্রো লিমিটেড, ক্লিপটন গ্রুপের অজি ডেইরি এন্ড অ্যাগ্রো, এনকেআরএল অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, শাহ আমানত অ্যাগ্রো, এফএ এন্ড অ্যাগ্রো, তাজউয়ার অ্যাগ্রো, আরবিস অ্যাগ্রো ফার্ম, রাজ অ্যাগ্রো, চাটগাঁইয়া অ্যাগ্রো, সাজেদা অ্যাগ্রো, সারা অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডসহ নগরীতে ৪০-৪৫টি অ্যাগ্রো ফার্ম পশু কেনাবেচা করছে বলে জানিয়েছেন মালিকরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App