×

জাতীয়

হাটে পর্যাপ্ত গরু, দাম চড়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩, ১২:৫৮ এএম

হাটে পর্যাপ্ত গরু, দাম চড়া

ছবি: ভোরের কাগজ

কেনাবেচা আজ থেকে শর্ত মানছেন না ইজারাদার ট্রাক নিয়ে টানাটানি

আসন্ন কুরবানির ঈদকে ঘিরে প্রস্তুত করা হয়েছে রাজধানীর অস্থায়ী ও স্থায়ী পশুর হাট। আজ রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে পশু কেনাবেচা। এরই মধ্যে হাটগুলোতে আনা হয়েছে গরু-ছাগল। প্রতিটি হাটে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও দাম চড়া। গরু কেনার আগে দাম যাচাই করতে আসা ক্রেতারা এমনটাই দাবি করছেন। খামারি বা বিক্রেতারা বলছেন, গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ও যাতায়াত খরচ বেশি হওয়ায় এ বছর পশুর দাম তুলনামূলক বেশি। তবে সব জিনিসের মতো পশুর দাম বাড়ায় কেনাবেচায় প্রভাব ফেলবে না এমন মত বিক্রেতাদের। এদিকে সিটি করপোরেশন থেকে হাট বসানোর নানা শর্ত দেয়া হলেও তা মানছেন না ইজারাদাররা। নির্ধারিত সময়ে আগেই বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে গরু। এছাড়া হাটে কোনো পশু জোরপূর্বক ঢোকানো যাবে না এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। রাস্তা বন্ধ করেও হাট বসানো হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজধানীর পোস্তগোলা পশুর হাটে ৪০টি বড় সাইজের গরু এনেছেন খামারি আল-আমিন মিয়া। এর মধ্যে ১৫টি দেশি, শাহীওয়াল ১৫টি, ফ্রিজিয়ান ৫টি ও নেপালি জাতের ৫টি। তার ভাষ্য, গরুগুলোর ওজন ৯ মণ থেকে শুরু করে ২৩ মণ পর্যন্ত হবে। তার কাছে থাকা সবচেয়ে বড় ২৩ মণ ওজনের গরুর নাম ‘লাল বাদশা’। এর দাম হাঁকিয়েছেন সাড়ে ৯ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত দাম উঠেছে ৬ লাখ। আজ রবিবার সিটি করপোরেশন থেকে আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আল আমিন ৯ মণের একটি নেপালি গরু ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় আমার গরুর খামার আছে। হাটে ৪০টি গরু এনেছি। একটি নেপালি জাতের গরু বিক্রি করেছি। সবচেয়ে বড় গরুর দাম উঠেছে ৬ লাখ টাকা। দাম আরেকটু বেশি বললে বিক্রি করে দেব। তার আশা সব গরু মিলে ১ কোটির মতো বিক্রি করতে পারবেন তিনি।

এ বছর পশুর দাম বেশি কিনা- এমন প্রশ্নে এই খামারি বলেন, সবকিছুর দাম বেশি। গোখাদ্যের দাম চড়া। দাম এ বছর তো একটু বেশি হবেই। গরু আনতে গিয়ে যাতায়াত খরচও বেড়েছে। যদি ভারত কিংবা নেপাল থেকে অর্থাৎ বিদেশি কোনো গরু হাটে না এলে ঈদের আগেই সব গরু বিক্রি করে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতে পারব।

হাটে গরু কিনতে আসা হাবিবুল বাশার বলেন, গরু কেনার আগে দেখতে এসেছি। এ বছর দাম অনেক চড়া। ৩ মণ ওজনের গরু গত বছর ৭০ হাজার টাকায় কিনেছিলাম, এবছর দাম চাচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বিক্রেতারা দাম কমাতেও চায় না। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য এ বছর দাম অনেক বেশি। দেখি পরে দাম কমে কিনা। তা ছাড়া গরু কিনে ৫ দিন ধরে রাখার জায়গা নেই। তাই ঈদের একদিন আগে দাম দেখে একটা গরু কিনব। বাজার যে চড়া, শেষে ছোট সাইজের গরু কিনতে হতে পারে।

পোস্তগোলা শ্মশানঘাট পশুর হাটের ইজারাদার শাহনূর রহমান গাজী বলেন, পশুর হাটের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খামারিরা ভালো জায়গার জন্য আগেই চলে এসেছেন। রবি ও সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হবে। ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং বুথ, জাল টাকা শনাক্তের বুথসহ নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা আছে। শর্ত ভঙ্গ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গরু বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছু না বললেও ১ নম্বর হাসিল কেন্দ্রে কর্তব্যরত ইজারাদারের নিয়োজিত হাসিলকারীরা বলেন, ক্রেতারা দেখতে এসে কিনতে চান। না দিলে হাট বিমুখ হবে। তাই দুয়েকটা বিক্রি করা হয়েছে। এদিকে ধোলাইখাল পশুর হাট, রহমতগঞ্জ ক্লাব মাঠের পশুর হাট, যাত্রাবাড়ী দনিয়া কলেজ মাঠ পশুর হাট ও মেরাদিয়া পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সব হাটেই উঠেছে পর্যাপ্ত গরু। বিক্রেতারা নির্দিষ্ট স্থানসহ রাস্তার দুই পাশে গরু সাজিয়ে রেখেছেন। ঢাকার বাইরে থেকে গাড়িতে করে গরু আসছেই। বেশির ভাগ গরু আসছে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও খুলনা থেকে। বাকি জেলাগুলো থেকেও গরু আসছে। হাটে দেশি, শাহীওয়াল, নেপালি গরুই বেশি। এ ছাড়া রয়েছে ফ্রিজিয়ান, রেড চিটাগাং ক্যাটেলসহ নানা জাতের গরু। রাজধানীর হাটগুলোয় জায়গা পেতে বিক্রেতাদের একধরনের প্রতিযোগিতা কয়েকদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট এলাকার বাইরের রাস্তার ওপরও গরুর হাট বসেছে।

যাত্রাবাড়ি পশুর হাটে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে গরু কিনতে আসা ইমন রহমান বলেন, হাটে পছন্দের মতো অনেক গরু রয়েছে। কিন্তু দাম অনেক বেশি। ঈদের আগে দাম কমতে পারে। সেই আশায় আছি। গরু কিনতে এলে টাকা ব্যাংকের বুথে রাখব। ক্যাশলেস এই পদ্ধতি অনেক ভালো। টাকা ছিনতাই নিয়ে ভয় থাকে না।

এদিকে ধোলাইখাল পশুর হাটে নিজের গরুর পাশেই খড়ের বস্তার ওপর মাথায় হাত রেখে বসে ছিলেন কুষ্টিয়ার খামারি আকবর আলী। তার পাশে ১২ বছরের ছেলে বস্তার ওপরই ঘুমিয়ে পড়েছে। আকবর আলী ভোরের কাগজকে বলেন, ১০টা মাঝারি ও ছোট সাইজের গরু এনেছি। গরু আনতে ও জায়গা পেতে অনেক কষ্ট হয়ে গেছে। কুষ্টিয়া থেকে গরু আনার সময় ফরিদপুর, ভাঙ্গা ও পদ্মা পার হয়ে মুন্সিগঞ্জে এবং পোস্তগোলা ব্রিজ পার হওয়ার আগে ও পরে টাকা দিতে হয়েছে। কোথাও ২০০, কোথাও ৫০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। পুলিশ, স্থানীয় নেতারা গাড়িপ্রতি এসব টাকা নিচ্ছেন। দুই জায়গায় জোরে টান দিয়েছি। সবমিলে ৩ হাজার টাকা গেছে। এরপর হাটে ভালো জায়গা পেতে বড় ঝড় গেছে। এখন আশা গরুগুলো যেন ভালো দামে বিক্রি করতে পারি।

তিনি বলেন, ক্রেতারা দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। দাম বলছেন কম। কিন্তু গরুর খাবারের দাম বেশি বলে কমে বিক্রি করতে পারছি না। দেখা যাক সামনে কী হয়। গরু বিক্রির ৫ দিন থাকবেন কোথায়- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আর থাকব কোথায়। খড়ের বিচালির ওপর। বাপ-বেটা পালা করে রাতে গরু পাহারা দেব।

এদিকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা গরুর ট্রাকগুলো বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে তাঁতিবাজার ও পোস্তগোলায় ঢুকতেই পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। আশপাশের পশুর হাটগুলোর লোকজন অবস্থান করছেন এই দুই জায়গায়। গরুর ট্রাক আসা মাত্রই নিজেদের হাটে নিতে এক ধরনের প্রতিযোগিতায় নামছেন তারা। হাটে গরু ঢুকলেই লাভ বেশি।

মাগুরা থেকে ট্রাক ভর্তি করে গরু নিয়ে আসার সময় পোস্তগোলায় এমন প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েন আসাদুল ইসলাম। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমি গরু নিয়ে যাচ্ছিলাম যাত্রাবাড়ী হাটে। কিন্তু পোস্তগোলা ও ধোলাইরপাড় হাটের লোকজন আমাদের গাড়ি তাদের হাটে ঢুকাতে জোর করে। আমার কথাই শুনতে চায় না। পরে যাত্রাবাড়ী হাটের লোকজন এসে আমাকে সহায়তা করে। আমরা যে হাটে মন চায় নিব, তারা টানাটানি জোরাজুরি করবেন কেন?

এসব বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, আমাদের শর্ত অনুযায়ী আজ থেকে হাটে পশু কেনাবেচা করা যাবে। কেউ যদি নিয়ম অমান্য করে আগে পশু বিক্রি করে, এরকম অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। পশুর গাড়ি টানাটানি হলে পুলিশ বিভাগকে জানাতে হবে। তারা ব্যবস্থা নেবে। রাস্তার ওপরে হাট বসানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতি হাটে আমাদের মোবাইল টিম থাকবে- এমন কিছু থাকলে জরিমানা করা হবে। এছাড়া জাল টাকা শনাক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বুথ থাকবে। নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশসহ র‌্যাবের টিম থাকবে প্রতি হাটে। সুষ্ঠু পশুর হাটের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, এ বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৭টি অস্থায়ী ও ২টি স্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার অস্থায়ী ৯টি পশুর হাট হলো- উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী ক্লাব সংলগ্ন এলাকার পশুর হাট, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন আশপাশের এলাকা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকা, যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ মাঠ, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল এলাকা, রহমতগঞ্জ ক্লাব এলাকা ও আমুলিয়া মডেল টাউন এলাকা। এছাড়া ডিএসসিসির আওতায় সারুলিয়ায় স্থায়ী পশুর হাটটি তো রয়েছেই। অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় অস্থায়ী ৮টি হাট হলো- ভাটারা পশুর হাট, উত্তর দিয়াবাড়ি পশুর হাট, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের পাশে আফতাবনগর এলাকার পশুর হাট, মিরপুর-৬ এলাকার পশুর হাট, মোহাম্মদপুরের বসিলা পশুর হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠের খেলার মাঠ, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা পশুর হাট ও ৪৪ নং ওয়ার্ডের কাঁচকুড়া বেপারিপাড়া পশুর হাট। এছাড়া রয়েছে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App