×

জাতীয়

উন্নয়ন আর স্বচ্ছ ইমেজে আনোয়ারুজ্জামানের জয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৩, ০১:৫১ এএম

উন্নয়ন আর স্বচ্ছ ইমেজে আনোয়ারুজ্জামানের জয়

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

দিনভর টিপটিপ বৃষ্টি। কখনো জোরে, কখনো হালকা। এরই মধ্যে নাগরিক জীবন শুরু নাগরিক নিয়মে। নেই কোনো কোলাহল। নেই মাইকের আওয়াজ। নেই মিছিল-মিটিং। শান্ত শহরের ব্যস্ত মানুষ মনোযোগী নিজ কাজে। এ যেন এক অন্য সিলেট। গত এক মাস মিছিল-সমাবেশ আর মাইকের আওয়াজে ঘুম ভাঙত নগরীর, আজ তা শান্ত। নির্বাচনের মিলনমেলা শেষে কাক্সিক্ষত নতুন মেয়র নির্বাচিত করে ফের পুরনো চেহানায় ফিরে গেছে সিলেট। নতুন কোনো উল্লাস নেই। যেন জানে সবাই। সবকিছু জানাই ছিল। খেলার ফলাফল জানার পরও দর্শক যেমন শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত মাঠে বসে থাকে- বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শুধু ঘরে ফেরা, অনেকটা তেমনি। আগের দিন সন্ধ্যার পর থেকেই সিলেট শহর ছিল খেলা শেষে ঘরে ফেরার মতো।

একমাত্র হোটেল নির্ভানা ইন ছাড়া সমগ্র সিলেট শহরই ছিল বিনাযুদ্ধে রাজ্য জয়ের যে নীরবতা অনেকটা সে রকমই। নির্ভানা ইনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আনন্দ উল্লাস ছিল গভীর রাত পর্যন্ত। আর বাইরে কিছু বিজয়ী কাউন্সিলরের মোটরসাইকেল নিয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশ ছাড়া শহরবাসীর আর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। ভোটের আগেই মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। শহরের অলিগলি রাজপথে নৌকার প্রার্থীর হাস্যোজ্জ্বল ছবি বলে দিচ্ছিল ভোটের পরও জয়ের হাসি হাসবেন তিনি। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় মাঠ ছিল পুরোপুরি নৌকার দখলে। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে সব মহলে সমালোচিত। তবে নজরুল ইসলাম বাবুলের ৫০ হাজার ৩২১ ভোট পাওয়াকেও অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ফুলের কাঁটা : নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল থেকে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত পুরো সময়টাতে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য সিলেট সিটি সারাদেশে সুনাম অর্জন করলেও গতকাল ফলাফল ঘোষণার পর পরই ৫ নং ওয়ার্ডের ৪র্থ বারের মতো নির্বাচিত কাউন্সিলর রেজোয়ান আহমেদের বাসায় পরাজিত অন্য এক প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালায়। এ সময় কাউন্সিলর রেজোয়ানের বড় ভাই সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাসদ নেতা লোকমান আহমদ উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনায় সিলেটের নাগরিক সমাজে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।

যে কারণে নৌকার জয় : মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জান চৌধুরীর বিজয়ের হিসাব নিয়ে খুব বেশি একটা আলোচনা হচ্ছে না। কারণ তিনি যে বিজয়ী হবেন এটা যেন সবারই জানা বিষয়। তবে এক লাখ ভোটের ব্যবধান হবে- এটাই ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা। তাদের বক্তব্য হলো আমাদের দলের ভোট আমরা ঠিকই পেয়েছি। কিন্তু সাধারণ ভোটারদের আমরা ভোটে টানতে পারিনি। বরং জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল কাস্টিং ভোটের প্রায় অর্ধেক ভোট লাভ করায় অনেকেই আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। কারণ যদি আরো বেশি ভোট কাস্ট হতো তাহলে বাবুল হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতায় চলে আসতেন বলে অনেকে মনে করছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিজয়ের অন্যতম কারণ সারাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন। পদ্মা সেতুসহ সারাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন, বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির কারণে নৌকার প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাসদ সিলেটের সভাপতি লোকমান আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচনী আবহ খুব জোরদার ছিল। নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ ছিল তা ভোটের মাঠেই প্রমাণিত হয়েছে। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্তিশালী কোনো প্রার্থী ছিল না। এছাড়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ব্যক্তিগত ইমেজ ভোটের মাঠে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, নিরুত্তাপ ভোট ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় বিশেষ করে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় নির্বাচনটা উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। যা ভোট হয়েছে, তা কাউন্সিল পদে। মিশ্র সন্তুষ্টি : মোট ৪৬ শতাংশ ভোট কাস্ট হওয়া নিয়ে শহরে মিশ্র সন্তুষ্টি লক্ষ্য করা গেছে। যেমন আওয়ামী লীগ বা সরকারি মহল বলছে এত অপপ্রচার আর বিরোধিতার পরও যা হয়েছে তা সন্তুষ্টজনক। আবার বিএনপির লোকজন বলছে ৫০ শতাংশ ভোট কাস্ট না হওয়া মানে শহরবাসী নির্বাচন বর্জন করেছে।

শাহজাহান মাস্টারের চমক : নির্বাচনের পর শহরজুড়ে একমাত্র আলোচনা ছিল শাহজাহান মাস্টারের ৩০ হাজার ভোট পাওয়া নিয়ে। এই প্রার্থী একা একাই একটি সাইকেলের মধ্যে একটি হ্যান্ডমাইক নিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াতেন। তার কোনো পোস্টার-লিফলেট, কর্মী বা এজেন্ট ছিল না। সবাইকে তাক লাগিয়ে তিনি ৩০ হাজার ভোট পেয়ে সিলেটবাসীর নতুন আলোচনার উপাদান হয়েছেন। অনেকে বলছেন ছক্কা সয়ফুরের মতো তার পূর্ব পরিচিতি থাকলে তিনিও সিলেটি হুজুগ তুলতে পারতেন।

কাউন্সিলর পদে বিএনপি-জামায়াত : নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন সৈয়দ তৌফিকুল হাদী। মহানগর বিএনপির সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কৃত হন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পাঁচবারের মতো জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। মহানগর বিএনপির সাবেক এই যুগ্ম আহ্বায়ক দলীয় সিদ্ধান্তে সদ্য বহিষ্কৃত হয়েছেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পান সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ। তিনি জামায়াতপন্থি হিসেবে পরিচিত। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মো. নজরুল ইসলাম। ওয়ার্ড বিএনপির এই সদস্য নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত হন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টিতেই বিএনপি-জামায়াত নেতারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App