×

জাতীয়

উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের প্রত্যাশায় লিটনে আস্থা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৩, ০১:৪৬ এএম

উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের প্রত্যাশায় লিটনে আস্থা

এএইচএম খাইরুজ্জামান লিটন

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় নগরজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। এ যেন ঈদুল আজহার আগে আরেক ঈদ। উৎসবের সঙ্গে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বিপুল পরিমাণ ভোটে জয়যুক্ত হওয়ার পেছনে কী কী ম্যাজিক কাজ করেছে সেগুলো নিয়েও সরগরম শহরের পাড়া-মহল্লা। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নিলেও ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ ভোটের রহস্য কী, সেটি নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, খায়রুজ্জামান লিটন জানতেন তার প্রতিদ্ব›দ্বীরা প্রার্থী হিসেবে দুর্বল। এরপরও তিনি প্রচার-প্রচারণায় কোনো কমতি রাখেননি।

পাশাপাশি রাজশাহীতে দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটানো এবং ৩০-৩৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানে প্রতিশ্রুতির কারণে তার পক্ষে ভোটের জোয়ার বয়ে গেছে। এছাড়া যারা নতুন ভোটার, তারা একচেটিয়া লিটনকে সমর্থন করায় ভোট ব্যবধানের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে- যা রাসিক নির্বাচনে অতীতে কখনো দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত সরাসরি ভোটে অংশ না নিলেও তাদের নেতাকর্মীরা ঠিকই কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছে। ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিএনপির থেকে বহিষ্কৃত ৬ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশের ভোটার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তাদের অনেকে উন্নয়নকে বেগবান করতে খায়রুজ্জামান লিটনকে ভোট দিয়েছেন। জামায়াতের যারা ভোট দিয়েছেন, তারা মেয়র পদে নির্বাচন বর্জন করা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা) মুরশিদ আলম ফারুকীকে ভোট দেয়ায় তার ভোটসংখ্যা ২য় সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৪৮৩ হয়েছে। মুরশিদ আলম ফারুকী নির্বাচনে অংশ নিলে ভোটসংখ্যা আরো বেশি হতো এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তিনিই হতেন বলে জানা গেছে। কেননা রাজশাহীতে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির তেমন সমর্থক নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এজন্য জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন প্রায় কাছাকাছি সংখ্যক ভোট পেয়েছেন।

সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আহম্মেদ শফিউদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, অতীতের আলোকে যদি ভোট নিয়ে কথা বলতে হয়, তাহলে প্রথমেই বলব, এবারের ভোটে প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দল অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, তারা একদমই অজানা অচেনা মুখ। আগেই বোঝা গিয়েছিল, লিটন প্রায় ফাঁকা মাঠে গোল দিতে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি বিপুল পরিমাণ ভোট পেয়েছেন। এর পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে দুর্বল প্রতিপক্ষকে দুর্বল না ভাবা। ভোটকে কেন্দ্র করে লিটন জনগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। ব্যাপক জনসংযোগ করে রাজশাহী শহরে একটি উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। তিনি আরো বলেন, খায়রুজ্জামান লিটনের নগর পরিকল্পনা নিয়ে আমরা প্রায়ই সমালোচনা করে থাকি। কেননা সামাজিক উন্নয়ন রাজশাহীতে তেমন হয়নি। তবে অবকাঠামোগত দৃশ্যমান উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। যা মানুষকে আকৃষ্ট করেছে, তাকে আবার ভোট দেয়ার জন্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫৬ শতাংশ ভোট পড়া কম কথা নয়। কারণ বিএনপি-জামায়াত ভোটে আসেনি। তারা এলে হয়তো আরো বেশি ভোট পড়ত। তবে, একজন ট্রান্সজেন্ডার প্রার্থীর (সাগরিকা, ১৭,১৮,১৯ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসন) বিজয়ী হওয়া প্রমাণ করে, রাজশাহীর ভোটাররা কতটা উদার ও সচেতন। তারা রাজশাহীর ভালোর কথা চিন্তা করেই খায়রুজ্জামান লিটনকে ভোট দিয়েছেন।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও খায়রুজ্জামান লিটনের নির্বাচনী প্রচারণা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী খান কামাল ভোরের কাগজকে বলেন, খায়রুজ্জামান লিটনের এই জয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জয়। বিএনপি বলেছিল, তারা ভোটে না এলে, ভোট বানচাল হয়ে যাবে। মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। কিন্তু বাস্তবে কী হলো? অর্ধেকের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছে। এর পেছনে খায়রুজ্জামান লিটনের উন্নয়নমূলক কাজ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখেন, মেয়র পদে খায়রুজ্জামান লিটনের প্রতিদ্ব›দ্বী যারা, তাদের কারো ফেসভেলু নাই, রাজনৈতিকভাবেও তেমন সক্রিয়তা নেই। সুতরাং ভোট তারা কম পাবে- এটাই স্বাভাবিক। সবচেয়ে বড় বিষয় দুর্বল প্রতিপক্ষ জেনেও খায়রুজ্জামান লিটন যেভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন, সেটি বলার বাইরে। আমরা মহানগর আওয়ামী লীগও কাউকে ছোট মনে না করে থানা, ওয়ার্ড, মহল্লা ও কেন্দ্রভিত্তিক আলাদা কমিটি করে প্রচারণার কাজ করেছি। সব শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে ৯০টি জনসভা করেছি। পাশাপাশি মানুষ চিন্তা করেছে, কাকে বিজয়ী করলে রাজশাহীর লাভ হবে, সেটিও বড় ফ্যাক্টর। আমি মনে করি, ভোটের দিন যদি ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি না হতো, আরো ৫ শতাংশ ভোট বেশি পড়ত।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম ভোরের কাগজকে বলেন, দুর্বল প্রতিদ্ব›দ্বীদের সঙ্গে লড়াই করে বড় ব্যবধানে লিটন মেয়র হলেও ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছেন- এমনটি ভাবা যাবে না। কারণ লিটন আওয়ামী লীগের ভোটগুলোই পেয়েছে। রাজশাহীতে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সমর্থন সংখ্যা এই ভোটে ফুটে উঠেছে। একই সঙ্গে এত ভোট পাওয়ার বিষয়ে উন্নয়নমূলক কাজও অনেক সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি লিটন ঠাণ্ডা মাথায় সব মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছেন। সাংগঠনিক কাঠামো ভালো ছিল। প্রচার-প্রচারণা করেছেন অনেক। নতুন ভোটাররাও চোখ বন্ধ করে লিটনের উপর ভরসা রেখেছে। যেটি লিটনের উন্নয়নমূলক কাজের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু ভোরের কাগজকে বলেন, দৃশ্যমান উন্নয়ন ও ৩০-৩৫ হাজার কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করি। আরেকটি বিষয় সবার অবাক লাগলেও বলতে চাই, রাজশাহীর মানুষ দলমত নির্বিশেষে ব্যক্তি লিটনকে ভোট দিয়েছে। কারণ যেগুলো মেয়রের কাজ নয়, রাজশাহীবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে সেগুলোও করে চলেছেন খায়রুজ্জামান লিটন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App