×

জাতীয়

৭২ শতাংশ কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ১১:০২ পিএম

৭২ শতাংশ কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার
দেশের ৮ বিভাগের ৩৭ জেলা এবং সিটিকর্পোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ২০৬০ জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘বাল্যবিয়ের কারণ ও সামাজিক অভিঘাত’ শীর্ষক সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকালে রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে সমীক্ষার তথ্য নীতি নির্ধারক ও অন্যান্য অংশীদারদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন-মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো: আব্দুল আজিজ, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদাকে চৌধুরী এবং অ্যাম্বাসী অব সুইডেন, বাংলাদেশ এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রেহানা খান। আলোচক ছিলেন-বিআইজিডির প্রাকটিস অ্যান্ড হেড অব জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন ক্লাস্টার এর সিনিয়র ফেলো মাহিন সুলতান, বিআইজিডির প্রাকটিস অ্যান্ড হেড অব জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন ক্লাস্টার এর সিনিয়র ফেলো রওনক জাহান, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি। স্বাগত বক্তব্য দেন-মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সমীক্ষার প্রেক্ষাপট আলোচনা করেন-যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। সমীক্ষার তথ্য উপস্থাপন করেন-মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী ও আইনজীবী অ্যাড. ফাতেমা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন-বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। তথ্য বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি জানায়-বাল্যবিয়ে দেয়া পরিবারগুলোর মধ্যে নিম্নবিত্তের হার সবচেয়ে বেশি। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতেও বাল্যবিয়ের হার প্রায় এক চতুর্থাংশ, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সাথে শিক্ষাও এ ক্ষেত্রে বড় প্রভাব বিস্তার করে। বাল্যবিয়ে দেয়া অভিভাবকদের মধ্যে প্রায় ৩১ শতাংশ (২৬০ জন) নিরক্ষর, ৪১ শতাংশ (৩৪৭ জন) অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন, ২৬ শতাংশ (২১৭ জন) স্বল্প শিক্ষিত এবং শিক্ষিত ৪ শতাংশ (৩৩ জন)। এই জরীপের অভিভাবকদের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে-১৩-১৫ বছর বয়সী কন্যাশিশুরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়, যা মোট বাল্যবিয়ের ৭২ শতাংশ। অন্যদিকে বাল্যবিয়ের শিকার ৫৭ শতাংশ কন্যাশিশুর বিয়ে ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হয়েছে। জরীপে প্রাপ্ত তথ্যে আরো দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ অভিভাবক বাল্যবিয়ের আইন সম্পর্কে অবগত হয়েও আইন অমান্য করে নানাভাবে তাদের কন্যাশিশুর বিয়ে দিয়েছেন। এ বিয়ে গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ বিয়েই রেজিষ্ট্রি ছাড়া সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বিয়ের সময় কাজীকে জন্মসনদ প্রদান করার কথা থাকলেও শতকরা ৫৪ শতাংশ অভিভাবক কাজীকে তার মেয়ের জন্মসনদ প্রদান করেনি। জরিপকালে ৩৬ শতাংশ ম্যারেজ রেজিষ্ট্রার জানিয়েছেন-সমাজে বাল্য বিয়ের হার মাত্র ১০ শতাংশ। মাত্র ৩ শতাংশ ম্যারেজ রেজিষ্ট্রার বলেছেন দেশে বাল্য বিয়ের হার ৫০ শতাংশ। সমীক্ষায় বাল্যবিয়ের কারণ ও সামাজিক অভিঘাত হিসেবে নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক অধঃস্তন গৎবাধা দৃষ্টিভঙ্গী যেমন-কন্যা সন্তানকে বোঝা মনে করা, বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে কন্যার প্রতিদায়িত্ব পালন; বাল্যবিয়ের ফলে কন্যাশিশুর উপর আসা অভিঘাত সারজীবন বয়ে বেড়ানো, মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া, স্বাস্থ্য অধিকার ক্ষুণ্ন এবং জীবনভর নির্যাতনের শিকার হতে থাকা, বাল্যবিয়ে বিষয়ক তথ্যের অভাব এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কাজের পরিবীক্ষণ না করা মিথ্যা সনদপত্র দেয়া, বাল্যবিয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের দায়িত্বহীনতা এবং জবাবদিহিতা সর্বোপরি সুশাসনের অভাব, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের সমন্বয়হীনতার বড় প্রতিফলন; আইন থাকা সত্ত্বেও এই দায়িত্বহীনতা অপরাধ হিসেবে গণ্য না হওয়া; মিথ্যা জন্মসনদ দিয়ে বিয়ে সম্পন্নকারীদের আইনের আওতায় না নিয়ে আসা; কন্যাশিশুর গর্ভকালীন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত; দেশের অর্থনীতি অর্ধেক মানব সম্পদের শ্রমশক্তি থেকে বঞ্চিতসহ বেশ কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো: আব্দুল আজিজ বলেন, অনেক আইন থাকলেও বাস্তব অবস্থার কারণে তা প্রয়োগ করা যায় না। গ্রামে অত্যন্ত দরিদ্রদের মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেশি। বংশানুক্রমে কাজীর ছেলে কাজী হয়, এটা বন্ধ করা গেলে বাল্যবিয়ে বন্ধে সুফল আসত। কাজীরা তাদের সুযোগ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে; এজন্য প্রশাসনকে জোরালো ভূমিকা পালনে জনপ্রতিনিধিদের তৎপর হতে হবে। কিশোরী ক্লাবগুলোর মাধ্যমে বাল্যবিয়ে বন্ধে কিশোরীদের সচেতন করতে হবে। রাশেদাকে চৌধুরী বলেন, বাল্যবিয়ের প্রবণতায় জেলাভিত্তিক কোন পার্থক্য আছে কিনা এটা মূল রিপোর্টে আনা যেতে পারে, পালিয়ে বিয়ে করায় বাল্যবিয়ে বাড়ছে –এটাকে জনপ্রতিনিধিদের অজুহাত হিসেবে দেখানো বন্ধ করতে হবে। বাল্যবিয়ে দিলে কন্যা উপবৃত্তি পাবে না এমন শর্ত আরোপ করা যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কিশোরী ক্লাব মনিটরিং করতে হবে, বাল্যবিয়ে বন্ধে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি দূর করতে সরকারি সংস্থাকে উদ্যোগ নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App