×

জাতীয়

সংযুক্তা সাহার ‘প্রতারণার’ বর্ণনা দিলেন ফুড আপ্পি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ০৩:২৪ পিএম

সংযুক্তা সাহার ‘প্রতারণার’ বর্ণনা দিলেন ফুড আপ্পি

ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে ‘ফুড আপ্পি’ নামেই জনপ্রিয় ফাবিয়া হাসান মনিষা। দৃষ্টিনন্দন সব রেস্টুরেন্টের মুখরোচক খাবার এবং দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রের ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করেন তিনি। এরই মধ্যে ডিজিটাল মিডিয়ায় পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি।

সম্প্রতি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় মারা গেছেন মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতক। অভিযোগের তীর চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার দিকেও। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন অনেক ভুক্তভোগী।

এবার সংযুক্তা সাহার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন ‘ফুড আপ্পি’। ফেসবুক লাইভে এসে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

মনিষা যেই অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন, সেটি তার সন্তান জন্ম নেওয়ার কিছুদিন আগের। তিনি বলেন, ‘যেহুতু তিনি (সংযুক্তা সাহা) নরমাল ডেলিভারির জন্য অনেক বেশি পপুলার, তাই মানুষ গরিব হোক, ধনী হোক তার কাছে ছুটে যায়। এই চিন্তা করেই আমিও তার কাছে গেছি। যারা তাকে দেখিয়েছেন, তারা আমার কথা বিশ্বাস করবেন অন্ধের মতো। কারণ একটি কথাও মিথ্যা বলব না। আপনাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, আমার সঙ্গেও তা-ই হয়েছে।’

এই ভ্লগার বলেন, ‘চলতি বছরের ৪ মার্চ আমি সংযুক্তা সাহা ম্যাডামের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলাম। আমার সিরিয়াল ছিল ৩৯ নম্বর। ৫ থেকে ৬ দিন আগে সিরিয়াল নিয়ে পেলাম ৩৯ নম্বর। ওইখানে যাওয়ার পর জানতে পারলাম, আপনার শরীর যতই অসুস্থ থাকুক না কেন, যদি প্রথম ট্রাইমেস্টারে থাকেন, আপনার কোনো বেইল নাই। বেইল আপনার তখনই থাকবে, যখন আপনি ৩৪ থেকে ৩৮ উইকসের (সপ্তাহ) প্রেগন্যান্ট হবেন।’

‘আমি ওখানে অনেক রোগী দেখলাম, যার ৪-৫ ঘণ্টা হয়ে গেছে, তাদের দেখছে না। কারণ তারা ফার্স্ট বা সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারে ছিল। আমাকে ৩৯ নম্বর সিরিয়াল কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তার উত্তর পাইনি। ৩৭ সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট আমি, ওইখানে তিন ঘণ্টা বসে থেকে আমার শরীরের অবস্থা এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল, যা বলার মতো না। শেষে আমার হাজবেন্ড গিয়ে বলে আসছে যে, আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’

মনিষা  বলেন, ‘তিন ঘণ্টা পর একটা রুমের ভেতর ঢুকাল। আমি তো ভাবছি ম্যাডামকে বোধ হয় পেয়ে গেছি। ঢুকে দেখি দুজন ইন্টার্ন ডাক্তার এবং তাদের বয়স অনেক কম। আমি যখন চাচ্ছিলাম, আমার শুরু থেকে পুরো কেস শেয়ার করতে তারা দিচ্ছিল না। তারা বারবার বলছিল, আপনার রিসেন্ট রিপোর্টগুলো দেন। দেওয়ার পর তারা বললেন, অপেক্ষা করেন, আপনাকে ডাকা হবে। এরপর আরও এক ঘণ্টা অপেক্ষা করলাম। বসে থাকার পর আরেকটা রুমে গেলাম। ওই রুমেও সিরিয়াল।

‘ডা. সংযুক্তা সাহা ম্যাডামকে আমি কখনো বাস্তবে দেখিনি। সব সময় অনলাইনে দেখছি। ওই মানুষটা আমার হাতে ফাইলের মধ্যে প্রেসক্রিপশন ধরায় দিয়ে বলছে, তুমি ওই ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নাও কী কী করতে হবে, আর ওই ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নাও কীভাবে এক্সসারসাইজ করতে হবে। আমি যে একটা পেশেন্ট, তার কাছে এত আশা-ভরসা নিয়ে গেছি সে তো আমাকে জিজ্ঞেস করবে তুমি কেমন আছো, তোমার কী সমস্যা।’

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমি কি অ্যাসিস্ট্যান্টদের কাছে সিরিয়াল দিছি, নাকি ওই ডাক্তারের কাছে সিরিয়াল দিসি যে আমাকে বিচ্ছিন্নভাবে দুজন ডাক্তারের কাছে পাঠায় দিল। হোয়াট ইস দিজ? তিনি রুমে ১১-১২ জন ডাক্তার নিয়ে বসে আছে, যাদের নিয়ে রিকমেনডেন্ট করতিছে এদিকে যাও, ওদিকে যাও।’

‘রোগী ডাক্তারের কাছে কেন যায়? সে তার সমস্যাগুলো বলবে, ডাক্তার তার কথাগুলো শুনে প্রেসক্রিপশন দেবে। কিন্তু এখানে এমন কিছুই হয়নি। একজন ডাক্তার যখন রোগীর সঙ্গে কথা বলে, থার্টি পারসেন্ট রোগ ভালো হয়ে যায়। এই ক্ষমতা একজন ডাক্তারের আছে যে সে তার কথার দ্বারা রোগীর মানসিক অবস্থা ঠিক করতে পারবে।’

মনিষা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাসায় এসে অনেক মন খারাপ করেছি। তার মানে উনি শুধু আমার সাথে এটা করেননি, সবার সাথে এটা করতেছে। মোদ্দাকথা, রোগী হিসেবে তিনি কাউকে দামই দিচ্ছে না। আজকে যদি ওই অ্যাসিস্ট্যান্টের দ্বারা কোনো ভুল হয়, তার দায় অবশ্যই বড় ডাক্তারের অর্থাৎ সংযুক্তা সাহা ম্যাডামের। কারণে এই ১১-১২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট তিনি নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন।

‘এই যে অনলাইনে নিউজ আসতিছে ১১-১২ জন ডাক্তার মিলে ভুলবশত কারও মৃত্যু হয়েছে, আর সংযুক্তা সাহা ম্যাডাম বলতিছে তিনি দেশে ছিলেন না, প্লেনে ছিল। ভাই, ১১-১২ জনকে উনি নিজ হাতে গড়ছে। তাই ওই ১১-১২ জন যদি ভুল করে থাকে, তাহলে সেই দায় অবশ্যই ড. সংযুক্তা সাহার। সেই ১১-১২ সাহস হয় কীভাবে সিনিয়র ডাক্তার ছাড়া অপারেশনে হাত দিলো।’

তিনি বলেন, ‘উনি যেই কাজগুলো করতছে এর দায়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেওয়া উচিত। উনি যে দিনের পর দিন রোগীদের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করছেন। উনার নাম নিয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্টদের দ্বারা রোগীর চিকিৎসা দেওয়াচ্ছে, এটার ইনফরমেশন অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আছে।’

‘আমি যখন সংযুক্তা সাহা ম্যাডামকে দেখাব বলে ঠিক করছিলাম, তখন তার ফেসবুক পেজে ঢুকে দেখি একটা ভিডিওতে বলছিল, আজকের দিনের মধ্যে ১৫টা বেবি ডেলিভারি করাইছি। আরেকটা প্রি-রেকর্ডেড লাইভের মধ্যে দেখছি, আজকের দিনে ২২টা বেবি ডেলিভারি করাইছি। একদিনে সময় থাকেই ২৪ ঘণ্টা। সে নিশ্চয়ই ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকে না। তার নিজস্ব টাইম আছে। তার রোগী দেখতে হয়, বাসায় টাইম দিতে হয়। নিজের চালে নিজেই ফেঁসে গেছে যে সে নিজে এগুলো করে না। করায় তার অ্যাসিস্ট্যান্টদের নিয়ে বা আশেপাশে যেই ডাক্তার আছেন তাদের দিয়ে। এই যে সংযুক্তা সাহার ম্যাডামের মেইন ফোকাস থাকে লাইভের দিকে বা তার ভিডিও থাকে, সে রোগী দেখবে কখন? সে নিজের প্রচার করেই তো সময় পায় না। আর হাসপাতালের যে কর্তৃপক্ষ বা মালিক তারা এই জিনিসটা কীভাবে অ্যালাউ করে যে, একটা মানুষ ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকে তার মানসিক অবস্থা কী রকম থাকে। তিনি যদি সারা দিন সার্জারি বা নরমাল ডেলিভারির মধ্যে থাকে তাহলে নিজস্ব টাইম বলতে কী? মেন্টাল হেলথের কী অবস্থা—এটা আমার প্রশ্ন।’

মনিষা যোগ করেন, ‘উনি চিকিৎসার মতো সেনসিটিভ পেশাকে ব্যবসায়ের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। উনাকে দেখানোর আগে এবং পরে অনেক ডাক্তার দেখাইছি। যারা কিনা মেশিন নিয়ে পেট চেক করে, হাত দিয়ে চেক করে, হাতে ধরে, চোখের দিকে তাকায়। যারা ডাক্তারি পড়াশোনা করেন তারা এটা ভালো বুঝবেন, এমন অবস্থায় প্রেগন্যান্ট রোগীর এভাবে চিকিৎসা করতে হয়।’

‘ভাই, উনি হাতেই হাত দিয়ে দেখেনি, পেটে হাত দেবে কখন! উনি আমার দিকে তাকায়ও নাই। প্রেসক্রিপশন দিয়ে এদিক-ওদিক যেতে বলছেন। আমার এই ভিডিও করার একটাই উদ্দেশ্য ছিল, অনলাইনে এমন হাইপওয়ালা ডাক্তার দেখে যাইয়েন না। এমন ডাক্তারের কাছে যাবেন; যারা রোগী দেখে-বুঝে প্রেসক্রাইব করেন।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App