×

জাতীয়

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা স্পষ্ট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩, ১২:০২ পিএম

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা স্পষ্ট

ছবি: সংগৃহীত

এরই মধ্যে ওয়াশিংটন বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বিষয়ে তাদের প্রত্যাশা ‘স্পষ্ট করেছে’ বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কৌশলগত যোগাযোগবিষয়ক সমন্বয়কারী জন কিরবি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। বুধবার (২২ জুন) তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন মোদি। সফরকালে তিনি মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। আজ বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক রয়েছে। এ বৈঠকে যাতে ভারতে গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন, সে জন্য অনুরোধ জানিয়ে বাইডেনকে চিঠি দিয়েছেন ৭৫ কংগ্রেসম্যান।

মোদির সফরকে কেন্দ্র করে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় বাংলাদেশি এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন বাংলাদেশের নির্বাচন এবং ভারতের ভূমিকা নিয়ে। ওই সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের সমর্থনে ইতোমধ্যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশ ভারত থাকবে বলে কি আপনি মনে করেন? ওই সাংবাদিক বাংলাদেশের ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ভারতীয় প্রভাব আমরা লক্ষ্য করছি। জবাবে জন কিরবি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে ভারত সরকারের যা বলার, সেটি তাদেরই বলতে দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশার কথা আমরা ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছি। বাংলাদেশে নির্বাচনে যারা বাধা সৃষ্টি করবে এমন ব্যক্তিদের ভ্রমণ ঠেকাতে আমরা ভিসা নীতি গ্রহণ করেছি।

ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক মেরূকরণ পরিস্থিতিতে জো বাইডেনের সঙ্গে আজ নরেন্দ্র মোদির বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনকে মোকাবিলায় কয়েক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র হয়ে উঠেছে ভারত। বিবিসি লিখেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও মোদি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন; অংশ নেবেন রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ভোজে । এসব আয়োজন করা হচ্ছে এমন এক নেতার জন্য, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যাঁকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছিল। এখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতকে অন্য যে কারও চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশি প্রয়োজন। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউস সূত্রের বরাত দিয়ে দি ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, বাইডেনের সঙ্গে মোদির বৈঠকে ইউক্রেন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বিশ্ব যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন মোদি। যোগ অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লোকজন অংশ নেন। এটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে যুক্ত হয়েছে।

বাইডেনকে ৭৫ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠি ওয়াশিংটনে মোদির সঙ্গে বৈঠকের সময় ভারতে গণতন্ত্রের দুর্বলতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সংকীর্ণতা, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর ক্রমাগত আক্রমণের মতো গুরুতর বিষয় তুলে ধরতে জো বাইডেনকে অনুরোধ জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের ৭৫ সদস্য। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট সদস্যরা ভারত নিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তর ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের প্রতিবেদন তাঁদের চিঠির সঙ্গে যুক্ত করেছেন।

চিঠিতে মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষের সদস্যরা বলেন– অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রতিরক্ষা, ভূ-কৌশলগত সম্পর্কের পাশাপাশি দুই দেশের মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে যে সহযোগিতা চলছে, তাতে তাঁদের পূর্ণ সমর্থন আছে। সেই সঙ্গে তাঁরা এটাও বিশ্বাস করেন, বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর কথাবার্তা খোলামেলা, অকপট ও স্পষ্ট হওয়া উচিত। চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের স্বার্থের বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে উদ্বেগের বিষয়গুলো সরাসরি তুলে ধরুন।

‘কংগ্রেস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেট’ প্যাডে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এ চিঠি লিখেছেন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং নিম্নকক্ষের সদস্য ও কংগ্রেসনাল প্রগ্রেসিভ ককাসের চেয়ারপারসন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রমীলা জয়পাল। এতে সই করেছেন উচ্চকক্ষ সিনেটের ১৮ সদস্য ও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৫৭ সদস্য। আলজাজিরা জানায়, স্বাক্ষরকারী সবাই ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক দলের সদস্য। তাঁদের মধ্যে আছেন বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেনের মতো প্রভাবশালী নেতাও।

মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন, কান্ট্রি রিপোর্ট, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স, অ্যাকসেস নাউসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা কোনো বিশেষ নেতা বা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। এ পছন্দের বিষয়টি ভারতের জনগণের। আমরা সেসব নীতির পক্ষে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি। দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ়, মজবুত ও স্থায়ী করে তুলতে আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আলোচনায় আপনি এসব বিষয় খোলামেলা উত্থাপন করুন।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমও বাইডেনকে অনুরোধ করেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিয়ে মোদির সঙ্গে আলোচনা করতে। মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর ঘিরে সে দেশের বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভেরও আয়োজন করেছে। মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্য রশিদা তালিব এক টুইটে জানিয়েছেন, মার্কিন কংগ্রেসে মোদির ভাষণ তিনি বর্জন করবেন। তিনি লিখেছেন, ‘মুসলমানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি যিনি অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন; মানবাধিকার লঙ্ঘন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক কাজকর্মের দীর্ঘ ইতিহাস যাঁকে ঘিরে, সেই মোদির জন্য আমাদের দেশের রাজধানীতে আসন পেতে দেওয়ার বিষয়টি লজ্জার।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App