×

জাতীয়

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না ইসলামী আন্দোলন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ০৩:৪২ পিএম

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না ইসলামী আন্দোলন

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম

ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর চরমোনাই) বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকার যদি নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের দাবি না মেনে গায়ের জোরে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে নির্বাচন প্রতিহতের জন্য যা যা করণীয় তাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

রবিবার (১৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে আইএবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমসহ নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলার প্রতিবাদ, সিইসির পদত্যাগ এবং জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।

এ সময় বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থীর উপর হামলার প্রতিবাদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আওয়ালের পদত্যাগ ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে আগামী ২১ জুন নির্বাচন কমিশন কার্যালয় অভিমুখে গণমিছিল করার ঘোষণা দেন চরমোনাই পীর। পাশাপাশি বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ ও একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে আগামী ২৪ জুন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং দেশের শীর্ষ ওলামা মাশায়েখ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে দলটি।

চরমোনাই পীর বলেন, যদি সরকার দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের আয়োজন করে তবে আপনারা নির্বাচনে যাবেন না বলেই কী ক্ষ্যান্ত দেবেন, নাকি কোনো কর্মসূচি বা আন্দোলনে যাবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব না। এরপরও যদি সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের আয়োজন করে তবে আমরা নির্বাচনে যাব না; শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকার যেভাবে সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচন পদ্ধতি জনগণের ওপর জোর-জবরদস্তি করে চাপিয়ে দিয়েছে, তা থেকে উত্তরণ ও সমাধানে আমরা পরামর্শভিত্তিক ও যুগোপযোগী কর্মসূচি দেব। কর্মসূচির মাধ্যমেই দাবি-দাওয়া আদায় করা হবে। এর অংশ হিসেবেই সিইসি পরিবর্তন বা পদত্যাগের আন্দোলনের ঘোষণা করেছি।

জামায়াতের সঙ্গে কোয়ালিশন বা সম্পর্ক উন্নয়নের কথা শোনা যাচ্ছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবার সঙ্গেই আমাদের নৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকবে। ইসলাম, দেশ, মানবতার জন্য রাজনীতি করছেন, দেশ ও ইসলাম রক্ষার জন্য পরামর্শভিত্তিক তাদের সঙ্গে অবস্থান তৈরি করার জন্য আমরা কাজ করব। পরবর্তীতে আপনারা এটা জানবেন ইনশাল্লাহ। রেজাউল করীম বলেন, স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয় না। আমরা মূলত দলীয় ও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে ভোটে অংশ নিয়েছি। কিন্তু দলীয় প্রভাব, হামলার কারণে আমরা নির্বাচন বয়কট করেছি। সবাই বলছে, নির্দলীয় সরকার আর আপনারা বলছেন জাতীয় সরকারের কথা। পার্থক্যটা আসলে কোথায়?

জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে অনেক রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আলোচনা করেছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যারাই হেরেছে তারাই প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু আমরা চাই প্রশ্ন উঠুক এমন ব্যবস্থার চাইতে প্রশ্নাতীত জাতীয় সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয় তাহলে তো ভালো, যেখানে সব দলেরই অংশ থাকবে। শুধু তাই নয়, যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

সংবিধান হলো দেশ ও জনগণের জন্য। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেই সে দল সংবিধান সংশোধন করে। এতে করে দলীয়করণ হয়, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ থাকে না। এজন্যই আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না, জাতীয় সরকার চাই। নির্বাচনে গেলে কত সংখ্যক আসনে নির্বাচন করব তা আমরা দলীয়ভাবেই ঠিক করব।

সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে পাঁচটি মৌলিক প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- ১. জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। ২. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ৩. সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। ৪. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ৫. বর্তমান মন্ত্রীসভার কেউই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না এবং জাতীয় সরকারে যারা থাকবেন তারা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে কারা থাকবেন

জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী মহল এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুতই জাতীয় সরকারে কারা থাকবেন এবং সরকার কাঠামো কী হবে তা প্রকাশ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলমসহ অন্যান্য নেতারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App