×

জাতীয়

মোটা-তাজা মানেই কী স্বাস্থ্যবান পশু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ০৮:১৬ এএম

মোটা-তাজা মানেই কী স্বাস্থ্যবান পশু
আসন্ন কুরবানির ঈদকে ঘিরে গ্রামাঞ্চলের পশুর হাটগুলো এখন সরগরম। রাজধানীতে এখনো পশুর হাট না বসলেও অনলাইনে শুরু হয়ে গেছে কেনাবেচা। ক্রেতাদের পছন্দের পশু বাছাইয়ের সুবিধার্থে দেশি-বিদেশি প্রজাতির নানা ধরনের গরু-ছাগলের সমারোহে মুখরিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ইউটিউব ও ফেসবুকে বিশাল আকৃতির লাখ লাখ টাকা দামের মোটা-তাজা গরুর ভিডিওতে হচ্ছে লাখ-লাখ ভিউ। সাধারণত, বড় বড় পশু সংগ্রহেই আগ্রহ দেখা যায় অধিকাংশ ক্রেতার। কিন্তু সম্প্রতি আলোচনা চলছে, নাদুসনুদুস মোটা-তাজা পশুর মাংস কী স্বাস্থ্যসম্মত? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাত ভেদে গরুর আকার নির্ভর করে। তবে একটি পশুকে হৃষ্ট-পুষ্ট করে তুলতে ঘাসের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত করা খড়সহ নানা দানাদার খাবারও দিতে হয়। অনেকে আবার বেশি মুনাফার আশায় স্টেরয়েডসহ নানা ভিটামিন খাইয়ে গরু দ্রুত মোটাতাজা করে থাকেন। সেসব গরুর মাংসে পুষ্টিগুণ কমে যাওয়াসহ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদানও থাকতে পারে। সেই বিবেচনায় কম কোলেস্টেরলযুক্ত গ্রাস ফিড বা ঘাস জাতীয় খাদ্য খেয়ে বড় হওয়া পশুর মাংসের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ঘাস ও দানাদার খাদ্য খাওয়ানো গরুর চাইতে স্টেরয়েড ও ভিটামিন খাইয়ে অতিরিক্তি মোটাতাজা করা গরুর শরীরে ৪-৫ গুণ চর্বি থাকে। শুধু ঘাস খাওয়া গরুর মাংসে ৫ গুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও ২ গুণ বেশি কনজুগেটেড লিওনিক অ্যসিড থাকে। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম এম হুমায়ুন কবির গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, খেতে সুস্বাদু ও কম কোলেস্টেরলযুক্ত মাংস হওয়ায় গ্রাস ফিড পশুই পছন্দের শীর্ষে রাখা উচিত। তাই পছন্দের গরুটি ঘরে আনার আগে সেই পশুটির ওজন-খাদ্যাভাস সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি। তা না হলে পশু কিনে আপনি ঠকে যেতে পারেন। তিনি আরো বলেন, একটি গরুর ওজন সাধারণত নির্ভর করে জাত, আবহাওয়া ও পুষ্টির ওপর। সে হিসেবে দেশি জাতের একটি গরু সাধারণত ২ বছর বয়সে প্রাপ্ত বয়ষ্ক হয়। যা মাংসের জন্য সবচেয়ে ভালো হয়ে থাকে। এ সময় একটি ষাঁড় গরুর ওজন হয় ২০০-২৫০ কেজি। গাভীর ওজন হয় ১৫০-২২০ কেজি। এছাড়াও জাত ভেদেও গরুর ওজন কম-বেশি হয়। দেশে বিদ্যমান পশুর যে জাত রয়েছে সেক্ষেত্রে রেড চিটাগাং জাতের একটি ষাঁড়ের ওজন হয় ২৫০-৪০০ কেজি ও গাভীর ওজন হয় ১৫০- ২৩০ কেজি। প্রথম বছরে ওজন বাড়ে ৬০-৬৫ কেজি। যা দ্বিতীয় বছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১০০-১০৫ কেজি। এছাড়া নর্থ বেঙ্গল গ্রে জাতের একটি ষাঁড়ের ওজন হয় ৩০০-৩৫০ কেজি ও গাভীর ওজন হয় ২০০- ২৫০ কেজি। পাবনা ক্যাটল জাতের একটি ষাঁড়ের ওজন হয় ৩৫০-৪০০ কেজি ও গাভীর ওজন হয় ২৫০-২৮০ কেজি। মুন্সিগঞ্জ ক্যাটেল বা মীরকাদিমের গরুর জাতের একটি ষাঁড়ের ওজন হয় ২৫০-৩৫০ কেজি ও গাভীর ওজন হয় ২০০-২৮০ কেজি। শাহিওয়াল জাতের একটি ষাঁড়ের ওজন হয় ৩৫০-৪৫০ কেজি ও গাভীর ওজন হয় ৩০০-৩৫০ কেজি। সিন্ধি জাতের একটি ষাঁড়ের ওজন হয় ৩৫০-৪৫০ কেজি ও গাভীর ওজন হয় ৩০০-৩৫০ কেজি। এইচ এফ লোকাল ক্রস জাতের হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান একটি ষাঁড়ের ওজন হয় ৩৫০-৪০০ কেজি ও গাভীর ওজন হয় ৩০০-৩৫০ কেজি। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আরো অধ্যাপক বলেন, বড় গরু তৈরিতে সময় বেশি দিতে হয়। ঘাসজাতীয় খাদ্যের পাশাপাশি দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হয়। সম্প্রতি দানাদার খাদ্যের যে দাম বেড়েছে, তাতে মাংসের কেজি দাঁড়িয়েছে ৮০০ টাকা। প্রান্তিক খামারিরা সাধারণত কুরবানির গরু ২ বছরের বেশি লালন-পালন করে না। দামি দানাদার খাদ্যের চেয়েও ঘাসের প্রতিই জোর দেন বেশি। বেঙ্গল মিটের খামার ব্যবস্থাপক ডা. এমামুল এহছান গতকাল ভোরের কাগজ জানান, বেঙ্গল মিট এবার কুরবানিতে নিয়ে এসেছে অর্গানিক গ্রাস ফেড গরু। এর মধ্য দিয়ে দানাদার খাদ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে গরুকে বিভিন্ন ধরনের ঘাস খাওয়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন তারা। নেপিয়ার, পাক চং, জার্মান, অলফালফা ও লুসার্নসহ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ঘাস পশুকে খাওয়াচ্ছেন তারা। এছাড়া ইউএমএস পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা খড় খাওয়ানো হচ্ছে তাদের খামারের গরুকে। ফলে কম চর্বিযুক্ত ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন মাংসের গরু তৈরি করছেন তারা। তাদের খামারে গিয়ে বা অনলাইনেও এসব পশু সংগ্রহ করা যাবে বলে জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আবু তোরাব এম. এ. রহিম ভোরের কাগজকে বলেন, অনেকেই বড় গরুর মাংস খেয়ে প্রশান্তি নিচ্ছেন। তবে এখানে বড়-ছোট বা দেশি-বিদেশি মুখ্য নয় সুস্থ পশু নির্বাচনই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে পশুটি চঞ্চল-প্রাণবন্ত সেটিই সুস্থ। আর গ্রাস ফিড খাওয়া পশুদেরই এমনটি হতে দেখা যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App