×

জাতীয়

দেশে এবার কুরবানির পশু পর্যাপ্ত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ০৮:১১ এএম

দেশে এবার কুরবানির পশু পর্যাপ্ত
  • এবারো আকর্ষণ বাহারি নামের পশু
  • গরু-মিস্টার বাংলাদেশ, রাজাবাবু, জিদান পালোয়ান, কমান্ডো, বিএল, গোল্ড কয়েন, বুড়ো
  • মহিষ- পাঠান ও সুলতান
কুরবানির ঈদের বেশি দিন বাকি নেই। যারা কুরবানি দেবেন তারা পশুর দরদাম নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন। অনেকেই গ্রামে গৃহস্থদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু-ছাগল দেখছেন। আবার অনেকে যোগাযোগ করছেন খামারে। দেশে এবারো কুরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশু থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে নেই দুশ্চিন্তার ছাপ। বিদেশ থেকে কোনো পশু আনার দরকার নেই বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বরং তারা বলছে, চাহিদার তুলনায় বেশি গরু-ছাগল আছে দেশে। গৃহস্থ, খামারি ও ব্যাপারিরা এগুলো যত্নে পালন করছেন। এরমধ্যে পশুর হাটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এবারো আছে বাহারি নামের গরু। তবে এখনই দাম হাঁকছেন না পশুর মালিকরা। তারা বলছেন, হাট শুরু হলে দাম উঠবে। আগামী সপ্তাহে পশু বিক্রি শুরু হবে বলে মনে করছেন ব্যাপারীরা। তবে গো-খাদ্যের বাড়তি দামের জন্য গত কয়েক বছরের মতো এবারো কুরবানির পশুর দাম বাড়তি হতে পারে বলে মনে করছেন খামারিরা। ঢাকায় ১৫টি অস্থায়ী এবং দুটি স্থায়ী হাটে কুরবানির পশু বেচাকেনা হবে। শেষ মুহূর্তে শাজাহানপুর ও কমলাপুরে দুটি অস্থায়ী হাট বাড়তে পারে। ঢাকার বাইরে প্রতিটি উপজেলায় আছে পশুর হাট। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানান, কুরবানিতে দেশে চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। প্রস্তুতি রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, অর্থাৎ চাহিদার বাইরে উদ্বৃত্ত ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেছেন, দেশে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ কুরবানিযোগ্য পশু আছে। এই সংখ্যা বাড়তে পারে। সুতরাং, এবার দেশের বাইরে থেকে কোনো পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না। গত ঈদুল আজহার চেয়ে বেশি কুরবানিযোগ্য পশু এবার প্রস্তুত রয়েছে। তিনি জানান, বাইরে থেকে যেন কোনো পশু প্রবেশ না করে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে পরিচিত পশুর ফার্ম রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদেক এগ্রো। এর ম্যানেজার মো. মাইদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে জানান, তাদের সংগ্রহে ১,৮০০ গরু আছে। বিদেশি ব্রাহামা জাতের গরু সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং দেশি গরু সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি এই গরুর ওজন ১ হাজার কেজির বেশি, উচ্চতা ৭১ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্য সাড়ে ৭ ফুট। তিনি বলেন, এবার সাদেক এগ্রোর আকর্ষণ জিদান, পালোয়ান, কমান্ডো, বিএল, গোল্ড কয়েন ও মিস্টার বাংলাদেশ । এর মধ্যে গোল্ড কয়েন ১৫ লাখ এবং মিস্টার বাংলাদেশ ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে। মাইদুল জানান, সীমান্ত পথে আমদানি বন্ধ থাকায় এবার তাদের সংগ্রহে বলদ গরু নেই। তবে পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারিরা। তারা বলছেন, বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনের ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে গরুর দামও বেড়ে যাবে। জানা গেছে, এ বছর ঝিনাইদহে ২ লাখ ৪ হাজার ৯২৮টি কুরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৬০ হাজার পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে। ঝিনাইদহের শৈলকুপার দিগনগর ইউনিয়নের হড়রা গ্রামের স্বামীহারা হতদরিদ্র মর্জিনা খাতুন। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে চরম অভাবের সংসার তার। এই অভাবের মধ্যেই তিনি পালন করেছেন বিশাল ষাঁড়। ‘বুড়ো’ নামের এই ষাঁড়টির ওজন এখন প্রায় ৩৩ মণ। ষাঁড়টি এক নজর দেখতে ভিড় করছে মানুষ। অভাবে থাকলেও ৩ বছর ২ মাস বয়সি বুড়োর যত্নের কোনো কমতি করেননি মর্জিনা। নিজে ও তিন সন্তান না খেয়ে থাকলেও বুড়োর জন্য প্রতিদিন ৮০০ টাকার খাবার ঠিকই দিয়েছেন। দেশীয় খাবার খড়, ভুসি, খৈল ও ঘাষ খাইয়ে বড় করে তোলা ফ্রিজিয়ান জাতের এই বুড়োর দাম তিনি ১৫ লাখ টাকা হাঁকছেন। তবে দাম নিয়ে তার শঙ্কাও রয়েছে। গরু বিক্রির টাকায় অনার্স পাস দুই মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে জানান মর্জিনা। তার স্বামী ছনু মিয়া বোন ক্যান্সারে মারা গেছেন ৬ মাস আগে। রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০২২ সালে কুরবানিতে জবাই হয়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৭টি পশু। সেই হিসাবে এ বছরও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তারপরও কিছু বাড়তে পারে। তবে রাজশাহী জেলায় কুরবানির উপযোগী পশু রয়েছে ৪ লাখ। এর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাহিদার অতিরিক্ত ৫০ হাজার ৩১১টি কুরবানিযোগ্য পশুপালন করা হয়েছে। তা হয়েছে খামার ও পারিবারিকভাবে এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে। নিজ জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলায়ও গরু পাঠানো হবে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় কুরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৯টি। আর কুরবানির জন্য মোট পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৯০টি। এর মধ্যে গরু ৯৬ হাজার ৫৪৩টি, ছাগল ৭০ হাজার ৩১৯টি, ভেড়া ৯ হাজার ৫৮৭টি ও মহিষ রয়েছে ২৪১টি। অতিরিক্ত রয়েছে ৫০ হাজার ৩১১টি পশু। জেলার ৫ উপজেলায় খামারি রয়েছেন ১২ হাজার ১৫৯ জন। খুলনায় জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ৯২ হাজার ৩৭৫টি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে গরু ২৬ হাজার ৪১৬, ছাগল ৬৩ হাজার ৪৭৫ ও ভেড়া ২ হাজার ৪৩৮টি। জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৯ হাজার ৮৬৭টির। প্রায় ৩ হাজার পশু বেশি আছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে, কুরবানির ঈদে চাহিদার বিপরীতে পশু উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। এ বছর চট্টগ্রামে গবাদি পশুর চাহিদা ৮ লাখ ৭৯ হাজার। এর বিপরীতে বিভিন্ন খামার ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পশু উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৭০ হাজার। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, চট্টগ্রাম জেলায় ১৫টি উপজেলা এবং চট্টগ্রাম শহরে কৃষকের খামারে মজুত থাকা গবাদি পশুর মধ্যে কুরবানিযোগ্য ষাঁড় রয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ২১১টি, বলদ ১ লাখ ৪০ হাজার ৩১০টি এবং গাভী রয়েছে ৩৭ হাজার ৮০৪টি। মোট গরুর সংখ্যা ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি। মহিষ রয়েছে ৭১ হাজার ৩৩৩টি। গরু এবং মহিষ মিলে মোট ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮টি। এ ছাড়া ছাগল এবং ভেড়া রয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি। এর মধ্যে ছাগল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৩টি এবং ভেড়া ৫৮ হাজার ৬৬২টি। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে কুরবানিযোগ্য পশু মজুতের সংখ্যা ৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৩০টি। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন খামারে পশু উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার চট্টগ্রাম জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ঘাটতি প্রায় লক্ষাধিক পশু। তবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চট্টগ্রামের হাটবাজারে কুরবানির পশু আমদানি হবে এমন আশা করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার খামারিসহ ব্যক্তি পর্যায়ে বাসাবাড়িতে পশুপালন করা হচ্ছে। কুরবানিযোগ্য করে তোলা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬০০টি পশু। যশোর প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর কুরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৬ হাজার। এর বিপরীতে পরিচর্যা করা হচ্ছে ৯৬ হাজার পশু। পিরোজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ৩৩ হাজার ৫০০টি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে গরু ১৮ হাজার ৭৯৯, মহিষ ১০২, ছাগল ১৩ হাজার ৩২৭ ও ভেড়া ১ হাজার ২৭২টি। জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪০ হাজার ২৫০টির। সেই হিসাবে প্রায় ৮ হাজার ৪৮৪ পশু কম আছে। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা মোল্যাপাড়ায় আছে কয়েকশ দেশি গরু। কৃষক রজ্জব আলী জানিয়েছেন, অনেকেই গরু দেখতে আসেন। দাম জানতে চান। তবে তিনি দাম চাচ্ছেন না এখনই। এ সপ্তাহের পর বাজার বুঝে দাম চাইবেন। কুরবানি উপলক্ষে নাটোরে প্রস্তুত ২৮ হাজার খামারি। তারা ভালো দামের আশা করছেন।ধামরাই কাইজারকুণ্ড গ্রামে আছে কয়েকশ গরু। গৃহস্থরা এখনো দাম চাচ্ছেন না। কৃষক সাহেব আলীর দাবি, এই গ্রামের সব গরু প্রতি বছর বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়। হাটে নিতে হয় না। তবে কুড়া-ভুসির দাম বেড়ে যাওয়ায় লালনপালন খরচ বেড়ে গেছে। তাই বাড়তি দাম আশা করছেন। সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা মহল্লায় হযরত আলী এবার একটি ষাঁড় ও ৪টি খাসি বিক্রি করবেন। এখনো দাম চাচ্ছেন না তিনি। বাজার বুঝে দাম চাইবেন এমনটা জানিয়েছেন। সাভারে ৩ হাজার ৫শ খামারে আছে প্রায় ৫০ হাজার গবাদি পশু। জাফরাবাদী, মুররা, গোদাবরী, মেহসানাসহ বিভিন্ন জাতের মহিষ পালন করছেন খামারিরা। রয়েছে ছাগল, ভেড়া, দুম্বাসহ বিভিন্ন জাতের পশু। ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা দামের পশু রয়েছে খামারে। বাইশমাইল এলাকার লোটাস এগ্রো খামারের ১২শ কেজি ওজনের গরু রাজাবাবু ধনাঢ্যদের নজর কেড়েছে। ১০ লাখ টাকার বেশি দাম উঠেছে রাজাবাবুর। শ্রীপুর এলাকার কাইয়ুম এগ্রো খামারের সাড়ে ১২শ কেজি ওজনের মহিষ ‘পাঠান’ ও ‘সুলতান’ দেখে যাচ্ছেন অনেকে। পাঠানের দাম উঠেছে প্রায় ১২ লাখ টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App